|
বাবাদের ভালবাসা বোঝা যায়না
.
ছোটবেলায় "বাবা কেন চাকর" ছবিটি দেখেছি আমরা সবাই।বাবার চরিত্রটি রাজ্জাক অপরুপ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিল।সব অপমান অবহেলা সহ্য করে সন্তানের সুখের জন্য অবলীলায় সুখী মানুষের অভিনয় করে গেছে।
.
আমাদের বাস্তব চরিত্রের বাবাগুলাও খুব ভালো অভিনেতা।চোখের সামনে দক্ষ অভিনেতার মত দিনের পরদিন অভিনয় করে যাচ্ছে।
.
অফিসের কলিগ রা যখন উইকেন্ডে পাশের কোন দামী রেস্তরাঁয় একসাথে লাঞ্চ করতে যাচ্ছে কোন এক বাবা লজ্জালজ্জা মুখ করে বলে ফেলে,"আরে গতকাল রাত থেকে প্রচুর গ্যাসফর্ম করছে,এই অবস্থায় বাইরের খাবার খাওয়া কি ঠিক হবে??আসল গ্যাসফর্ম পেটে নয় বাবার মস্তিষ্কে হচ্ছে।সকাল হলেই ছেলেটা একশ টাকা চাইবে।বাচ্চা মানুষ, কলেজে বন্ধুবান্ধব আছে।দু এক টাকা ত হাত খরচ লাগবেই।
.
এ মাসে ডাক্তার দুটো টেস্ট দিয়েছে।দু তিন বার চেকাপে যেতেও বলেছে।কিন্তু এই মাসেই ত মেয়েটার সেমিস্টার ফি দিতে হবে।ব্যাস বাবাদের আর চেকাপে যাওয়া হয়না,টেস্ট ও করানো হয়না।"আমি বুড়ো মানুষ রোগ বালাই ত লেগেই থাকবে,তাই বলে মেয়েটার পড়ালেখাটা ত বন্ধ হতে পারেনা।ওর অনেক আশা,ও অনেক বড় হবে।
.
বাবাগুলা এমনি হয়,সারাজীবন মনে মনে নিজেকে সান্তনা দিয়ে যায়।অভিজ্ঞ অভিনেতার মত অবলীলায় অভিনয় করে যায়। আবেগ অনুভুতি গুলোকে বোবা করে রাখে।
.
মেয়ের বিয়ে শেষ।শ্বশুর বাড়ি চলে যাচ্ছে একদিনের সেই ছোট্ট পরীটা।বাবার বুক ফেটে কান্না আসে।তবু চেপে যায়।মেয়ে যখন বাবাকে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে চশমার ফাকে বাবার ছলছলে চোখগুলো সান্তনা দেয় নিজেকে।মেয়ে আমার খুব সুখী হবে।মেয়ে চলে যাওয়ার পর বাবার বুক টা ছ্যাত করে উঠে,খালি খালি লাগে ঘরটা তবুও গভীর রাতে দেয়ালে ঝোলানো মেয়ের ছবির দিকে তাকিয়ে নিজেকে সান্তনা দেয়,"এই যে আমার মেয়ে আমার ঘরেই ত আছে।
.
বাবাদের ভালবাসা বোঝা যায়না তবে কতটা মমতা আর স্নেহ দিয়ে ঘিরে রাখছে তার সন্তান কে গভীর ভাবে বাবার চোখে তাকালে খুব ভাল করে টের পাওয়া যায়।ছেলেটার গীটারের বড় শখ।মধ্যবিত্ত বাবার বিলাসদ্রব্য কেনার সামর্থ্য নেই।তবে বাবাকে এখন আর সিগারেট এ টান দিতে দেখা যায়না,অটো তেও বাবা খুব একটা উঠেনা।আজকাল খুব ভোরেই বাসা থেকে বের হয়।হেটে হেটে আটটার মধ্যে অফিস পৌঁছায়।দিনে পাচ কাপের জায়গায় দু কাপ চা খায়।সামনের মাসেই ত ছেলেটার জন্মদিন।ছেলে ঘুমিয়ে যাওয়ার পর বাবা চুপ করে তার মাথার কাছে নতুন গীটার টা রেখে আসে।সকালে ঘুম থেকে উঠেই গীটার উপহার পেয়ে ছেলেটা নিশ্চই খুব খুশি হবে।সন্তানের ওই আনন্দের হাসিটা একটা বাবার সারা জীবনের সঞ্চয়।
.
বাবা গুলা এমনি হয়। ছেড়া জুতোয় বারবার সেলাই পড়ে তার,গায়ের শার্ট টার রং ধূসর হতে থাকে,হাতের ঘড়িটার এক যুগ পার হয় তবু এরা সুখি মানুষের অভিনয় করে যায় অবলীলায়।ছেলেমেয়ের সুখের জন্য নিজেকে সান্তনা দেয় জীবনভর।
.
আমার বাবাও সব বাবার মতই।নিজের অনুভুতি গুলোকে বোবা করে সারা জীবন আমাদের তিন বোনের কথা ভেবে গেলো।আমার বাবাকে কোন পুজাতেই নতুন জামা কাপড় কিনতে দেখিনি,যদি তার কাপড়ের টাকা টা দিয়ে মেয়েদের প্রসাধনীর স্বাদ টা পুরণ হয়।সারাজীবন কস্ট করল,আর নিজের মহৎ আদর্শ দিয়ে আমাদের বড় করল।
.
আজ বাবার জন্মদিন।গত কিছু বছরে বাবার সাথে একদিন ও কথা বলা হয়নি।বাবা বলে ডাকিনা বহুদিন,বাবার মুখেও আমার নাম টা শুনিনা।সম্পর্ক টায় বেশ দুরত্ব।তবে প্রতি জন্মদিনেই বলতে ইচ্ছা হয়,"শুভ জন্মদিন বাবা"কিন্তু তা আর ঠিক হয়ে উঠে না।
Categories: _____Part - 2
The words you entered did not match the given text. Please try again.
If you are the site owner, please renew your premium subscription or contact support.
Oops!
Oops, you forgot something.