|
একজন মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত নিজেকে নিরপরাধী বা নির্দোষ দাবী করতে পারে, যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে আদালত অভিযুক্ত করে নি। ততক্ষণ সে তার পূর্ণ মর্যাদা নিয়েই সমাজে থাকবে। আমরা এসব কি দেখছি, বাংলাদেশের আদালত প্রাঙ্গনে, বা আদালতের ভিতরে আইনজীবিদের জুতো নিক্ষেপ, মারামারি, ঢিল ছুঁড়তে গিয়ে ইষ্টক-প্রতিযোগিতা, এসব কিসের ইঙ্গিত? আদালতে-ও একটি পবিত্রতা বিরাজ করা চাই। যেখানে সকলেই সুবিচারের আশায় দ্বারস্থ হয়ে থাকে। আপাতঃদৃষ্টিতে একজন বা একাধিক জনকে যতই দোষী বলে মনে করা হোক, তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা বা বিক্ষোভ প্রদর্শন, আদালতের বাহিরে-ই হওয়া উচিত। এসব বিষয়াদি, আমাদের উঠতি ছেলেমেয়েদের-কে কোন্ পথে নিয়ে যাচ্ছে, একটু ভেবে দেখার বিষয়। আদালত কতৃপক্ষের নিকট দাবী জানাই, যে সকল কালো-বোরকা পরিহিত কিছু অসভ্য বর্বর, আদালতের ভিতরে অশালীন আচরণ প্রদর্শনের ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে, তাদের-কে প্রচলিত আইনের আওতায় এনে, তার যা ফলাফল তা ভোগ করতে দিয়ে, দেশবাসীকে নিশ্চিন্ত করা হোক।
.
বাচ্চাদের প্রাথমিক স্কুল পরীক্ষার-ও যদি প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়, আর কি কি বাকী রইল?বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখন প্রাথমিক স্কুল পর্যন্ত টার্গেট করে, কেউ কেউ নিজেদের সাফল্য প্রমাণ করেছে। এই চক্র-টি যে খুব দুর্বল তা নয়। এখানে দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক দুর্বলতা একটি বড় ভূমিকা পালন করছে। জাতি এখনও কি নাক ডেকে ঘুমোবেন? তবে আর পরীক্ষা পদ্ধতি রাখার কি প্রয়োজন? এই কোমল-মতি ছেলে-মেয়েরা বড় হয়ে, কেন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে, সহপাঠীকে কুপিয়ে মারবে না, কেনই বা সুযোগ পেলে রাস্তায় এসে গাড়ি ভাঙ্গবে না বলুন? এরা যখন আদালতে যাবে, সে আদালত কি মানুষের থাকবে? সে তো একটি বর্বর-আদালতেই পর্যবসিত হবে। যারা আইন নিয়ে পড়াশোনা করে, এতটুকু জ্ঞান রাখে না, এ রকমের কালো বোরকা-ওয়ালা অসভ্যদের কি দরকার?
আজকের এই বিজ্ঞানের যুগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে জগতের নানান দেশের খবরাখবর আমরা জেনে থাকি। একটু ভাবুন তো, আমাদের দেশের এই যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, শিক্ষার পরিবেশ, আদালত প্রাঙ্গনে আইনিজীবিদের মারামারি - - - -এসকল ঘটনাবলী কি বাহিরের দেশের মানুষ জানছে না? আমরা কি এসব ঢেকে রাখতে পারব? তারপর বাহিরের পৃথিবীর নিকট থেকে কি রকমের মূল্যায়ন আশা করেন? যাদের স্কুলের শিশুদের -ও দুর্নীতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেখানে প্রতিবছর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে, যেখানে সরকারের কোনো কোনো কর্মকর্তার আচরণ যা প্রকাশ্য-দুর্নীতির নামান্তর, এবং সকল সরকারের সময়েই এ রকমের ঘটোনা ঘটতেই থাকে। বাহিরের পৃথিবী যে আমাদের, তৃতীয় বিশ্বের দেশ বলে থাকে, তা শুধু আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে নয়।
.
একটি দেশে দারিদ্র্য থাকতেই পারে। তার সাথে, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের কি সম্পর্ক? একটি দেশের আদালতের ভিতরে মারামারি করা, এবং তা শিক্ষিত এবং প্রথম শ্রেণীর নাগরিকরা যারা ওই সকল কর্মস্থলের পেশাজীবি তারাই করছে, এর সাথে দারিদ্র্যের আদৌ কোনো সম্পর্ক আছে কি? খাবারে ভেজাল, প্রশাসনে দুর্নীতি, রুগ্ন গণতন্ত্র এসব কথা না হয় বাদ-ই দিলাম। রাষ্ট্রের ধর্ম আছে, সে সব পরিচিতি শুনলে, অনেক গণতান্ত্রিক দেশের সভ্য মানুষের নিকট কিছুটা কাল্পনিক মনে হওয়ার-ই কথা। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থার যে চরম অবনতি হচ্ছে, তা নিয়ে আমাদেরকেই মাথা ঘামাতে হবে। যদি ভবিষ্যতে আমাদেরকে কোনো কারণে, বিশ্বের বিশেষ বিশেষ অধিবেশনে না ডাকা হয়, সেদিন কিন্তু শুধু কন্সপারেসী বলেই চিৎকার করবেন না। যা হচ্ছে, তা বিশেষ করে আজকের দিনে বিশ্বের নিকট গোপন কিছু নয়। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে বসে, বাংলাদেশের ইংরেজী পত্রিকার নাম, গগলে সার্চ করলেই তো লিংক পেয়ে যাবে। এখন দেশের ইংরেজী পত্রিকা পড়লেই, যে কোনো প্রান্ত থেকে জানতে পারবে, সামাজিক মাধ্যমে যা নিয়ে আলাপ হচ্ছে , তা সত্যি কি না।
.
আমরা-ই আমাদের বদনাম পৌঁছে দিচ্ছি অসতর্কতায়। আমরা যদি দিগম্বর হই, আর অপরে সে ভাবে আমাদের ডাকে, তাতে অপরের দোষ হতে পারে না। আমরা বস্ত্র পরিধান করে আছি কি না, সে দায় আমাদের। আমরা কতটা নীচে নেমেছি, সকলেই জানার চেষ্টা করছি না। শিক্ষা ও বিচার-ব্যবস্থায় যদি ত্রুটি দেখা দেয়, এবং তার মান নীচের দিকে যেতে থাকে, তবে সে জাতির আর বিশেষ কিছু অবশিষ্ট আছে বলে মনে করা যায় কি?
Categories: __________Chapter-III
The words you entered did not match the given text. Please try again.
If you are the site owner, please renew your premium subscription or contact support.
Oops!
Oops, you forgot something.