|
.
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বার্তা
।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, রাষ্ট্রকে প্রতিনিধিত্ব করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জনগণের সঙ্গে তাই তাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হয়। কমিশন তাদের যে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরিয়ে দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। এই সমালোচনার অর্থ রাষ্ট্রকে খাটো করা কিংবা কোনো বাহিনীকে ছোট করা নয়। এর মূল উদ্দেশ্য ভুল-ত্রুটিগুলো সংশোধনের চেষ্টা করা। তিনি আরো বলেন, 'সমালোচনা শোনার মতো সহিষ্ণুতা থাকা দরকার। উনারা (ঢাকা মহানগর পুলিশ) তো আমার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। এজন্য আমি কি রেগে ফেটে আদালতে দৌড়াব?'
.
দেশে আইনি শিক্ষার গলদ আছে। আইন শুধু অর্থ উপার্জনের মাধ্যম এটা ভাবা হয়। আইনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়ন হতে পারে এ জিনিসটি সব সময় উপেক্ষিত থাকছে। দরিদ্র মানুষ চারপাশে আছে, তাদের আমরা দেখি। কিন্তু অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে তাদের খুঁজে দেখি না। যার জন্য গরিব-দরিদ্ররা দেশের পলিসির বাইরে থেকে যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সময়ই আইন কিভাবে সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে_ সেটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করি। ওই সময় থেকে বিভাগের ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে মানবাধিকার বিষয়ে কাজ শুরু করি।
.
একজন ধনী গরিবের বন্ধু হতে পারে। সংগ্রামের সাথী হতে পারে। কিন্তু দারিদ্র্য দূর করতে পারে শুধু দরিদ্ররা নিজেই। তাই নেতৃত্ব থাকতে হবে দরিদ্র মানুষের হাতে। এভাবে সেই আশির দশক থেকে মানবাধিকারের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত হয়ে যাই। এ কাজের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিও পেয়েছি।
.
মানবাধিকার বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হলে বর্তমান আইন পরিবর্তন ও সংস্কার প্রয়োজন। আইনে বলা আছে, পুলিশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সরাসরি তদন্ত করার প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। কমিশন তদন্ত করতে পারবে না। কমিশনে যত অভিযোগ আসে; তার সিংহভাগ অভিযোগ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে। যাদের বিরুদ্ধে প্রধানতম লঙ্ঘনের অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের ক্ষমতা কমিশনের নেই। এটি আইনের বিরাট একটি ত্রুটি। এক্ষেত্রে আইনের সংস্কার করা বাঞ্ছনীয়। কমিশনের কার্যক্ষেত্র আরো প্রশস্ত করা সম্ভব হলে সাধারণ জনগণ সুফল পাবে।
.
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কমিশনের প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ফৌজদারি দ-বিধি ৫৪ ধারা নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনাও অমান্য করা হচ্ছে। এ নিয়ে কমিশন উদ্বেগ জানিয়েছে। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। এমন অনেক আইন ইতোমধ্যে সভ্য ও আধুনিক সমাজ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। দেশে এ ধরনের কিছু আইন প্রচলিত আছে। যেগুলো থেকে আমাদের মুক্ত হওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে। একজন মানুষকে হয়রানি করার মতো অনেক অস্ত্র রাষ্ট্রের হাতে থাকে। সেগুলো অপরাধীদের ধরার জন্য প্রয়োগ করুক। শুধু প্রতিপক্ষ ঘায়েল করতে নয়।
.
তবে মত ভিন্নতা যতই থাকুক বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের প্রতি ঐক্য থাকতে হবে। এ নিয়ে আপস হতে পারে না। যারা ধ্বংসযজ্ঞ, গণহত্যা, অগি্নকা-ে বিশ্বাস করে, মানুষের মুখ এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দিতে শঙ্কা করে না, যারা রেললাইন উপড়ে ফেলে যাত্রীদের মৃত্যুমুখে ফেলে দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না, সেই মত ভিন্নতার সঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সহমত পোষণ করতে পারে না। বিচার-বহির্ভূত হত্যাকা-, গুম, খুন এবং এর সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টতা কিছু ক্ষেত্রে তারা নিজেরাও স্বীকার করেছে। এ ধরনের বিচ্যুতি অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত। সেই জায়গাটিতে রাষ্ট্রকে সতর্ক করে মানবাধিকার কমিশন।
Categories: __________Chapter-IV
The words you entered did not match the given text. Please try again.
If you are the site owner, please renew your premium subscription or contact support.
Oops!
Oops, you forgot something.