|
.
তিল কে তাল পুলিশই করতে হবে।
.
শুকুর আলী। লেখাপড়া জানেন না। প্রয়োজনে টিপসই দেন। এমন কি মোবাইল ফোনের বাটন টিপতে জানেন না। সেই শুকুর আলী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে গ্রেপ্তার হয়ে আছেন কারাগারে। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছে পুত্র সিজানও। জেএসসি পরীক্ষার্থী সিজান আদৌ পরীক্ষা দিতে পারবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তার অপরাধ মোবাইলফোনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে জড়িয়ে অশালীন কটূক্তিমূলক কার্টুন-ভিডিও দেখা ও শোনা। পরিবারের উপার্জনক্ষম পিতা-পুত্র গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে হতদরিদ্র এই পরিবারটি। ওই এলাকার লোকজন মনে করেন, দলীয় ও সরকারি ফায়দা হাসিলের জন্য হতদরিদ্র এই পরিবারকে হয়রানির মুখে ঠেলে দিয়েছে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
পিতা-পুত্রের গ্রেপ্তারে দরিদ্র পরিবারটি পথে বসলেও এলাকার মানুষই খাদ্য ও অর্থ দিয়ে দাঁড়িয়েছেন তাদের পাশে। এলাকাবাসী বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা ও চাল তুলে এই পরিবারের খাদ্য সংস্থান করছে।
.
তাৎক্ষণিকভাবে শুকুর আলী ও মোবাইলফোনসহ সিজানকে আটক করা হয়। ওই সময়ে দুই সাক্ষীসহ আশপাশের লোকজন উপস্থিত ছিলেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হলেও প্রথম সাক্ষী আবদুল করিম গফ্ফার জানান, তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি তখন থানায় ছিলেন। থানায় কেন ছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্য একটা কাজে গিয়েছিলাম।
.
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুকুর ও সিজানকে গ্রেপ্তারের পর কোন ধারায় মামলা রেকর্ড করবেন এ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলেন ওসি। দীর্ঘ সময় তিনি এ বিষয়ে পরামর্শ করেন আওয়ামী লীগের উপজেলা সভাপতি ও পৌর মেয়র হেলাল উদ্দিন কবিরাজ ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নানের সঙ্গে। সর্বশেষ ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলাটি রেকর্ড করেন। তবে পরামর্শের বিষয় অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও ওসি।
.
পরিবারের উপার্জনক্ষম শুকুর আলী ও তার পুত্র সিজান গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে এই পরিবার। কন্যা সন্তানকে নিয়ে অসহায় স্ত্রী কল্পনা। গ্রামের কয়েক তরুণ গত ২৪শে অক্টোবর ঘরে ঘরে গিয়ে এই পরিবারের জন্য প্রায় ৩৫ কেজি চাল সংগ্রহ করেছেন। মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবী নিয়োগ দেয়ার সাধ্য নেই শুকুর আলীর স্ত্রীর। সেখানেও এগিয়ে গিয়েছেন গ্রামবাসী। ১০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তুলে শুকুরের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা। সরকারি জমিতে মাটির ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন শুকুর আলীসহ ১৪ পরিবার। হতদরিদ্র প্রতিটি পরিবারের কেউ রিকশা, কেউ ভ্যানচালক। এর মধ্যে মোবাইলফোন আছে মাত্র চারটি পরিবারে। প্রতিবেশী হামেদ আলী জানান, গত ঈদের আগে শুকুরের কাছ থেকে ৫ শ’ টাকা দিয়ে একটি মোবাইলফোন কেনে সিজান। কিন্তু শুকুর মোবাইলফোনের বাটন টিপতে জানেন না। হামেদ আলী, মকসেদ আলী, আফসার আলীসহ গ্রামের লোকজন মনে করেন, সরকারকে খুশি করার জন্য পুলিশ এটাকে খুব গুরুত্ব দিয়েছে। এ কারণে স্বয়ং ওসি গিয়ে তাদের আটক করেছে। দলের ঊর্ধ্বতন নেতাদের খুশি করতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা অতিউৎসাহী হয়ে এই হতদরিদ্র পরিবারকে হয়রানির মুখে ঠেলে দিয়েছেন বলে গ্রামবাসী মনে করেন।
রুদ্র মিজান
Categories: Brief Stories, Part -1
The words you entered did not match the given text. Please try again.
If you are the site owner, please renew your premium subscription or contact support.
Oops!
Oops, you forgot something.