|
শেখ হাসিনা, আপনাকে ধন্যবাদ- মাহফুজ আনাম
.
এটা কোনো প্রতিশোধ নয়। কোনো ধরনের উচিত শিক্ষাও নয়। এটা হিসেব-নিকেষের দর কষাকষিও নয়। যদি বলা হয় রাজনীতি, তবে তাও নয়। এর মাধ্যমে ন্যায় বিচারের বহিঃপ্রকাশ ঘটলো। এর মাধ্যমে সেই রাজনৈতিক নেতাদের বিচারের আওতায় আনা হলো যারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। এটিতে ন্যায় বিচার ও স্বচ্ছতার ষোলকলা পূর্ণতা পেল। চূড়ান্ত বিশ্লেষণে বলা যায়, বিচারটির মাধ্যমে সর্বোচ্চ আইন প্রতিষ্ঠা ও মানবিক অধিকারের মূল্যায়ন হয়েছে, যে শিক্ষা আমরা আন্তরের গভীর থেকে পেয়েছি।
.
মতিউর রহমান নিজামীর শাস্তি সাধারণ কোনো বিষয় নয়। তিনি আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিপক্ষে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নিজামী মানবতাবিরোধী কাজ করেছেন। আর এ অপরাধের দায়েই তাকে সাধারণভাবেই মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেয়া হয়েছে। এ রায়টি এমন একজনের বিরুদ্ধে দেয়া হলো ১৯৭১ সালে সালে যার বয়স ছিল ২৮, সব দিক থেকে যাকে বলা যায় প্রাপ্ত বয়স্ক। নিজামী নিজের ইচ্ছায় সে সময় তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের বাঙালিদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তিনি খুন, ধর্ষণ, গণহত্যা, নির্যাতনসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপারাধে লিপ্ত হন।
.
কারো মৃত্যুদণ্ডে সাধারণত আনন্দ প্রকাশ করাটা আমরা মানবিক বিবেচনা করি না। কিন্তু এ মামলার ক্ষেত্রে আমরা আনন্দিত কারণ নিজামীর সন্ত্রাসের হিংস্রতা, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যায় অংশ নেয়া পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে তার ব্যাপক সহযোগিতা, আমাদের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়া, তিনি তার কর্মকাণ্ডে অনুতপ্ত হননি কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ন্যূনতম দুঃখবোধও প্রকাশ করেননি।
.
স্বাধীন বাংলাদেশে নিজামীর মন্ত্রী হওয়ার বিষয়ে ট্রাইবুনাল তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছে, ‘‘নিজামীর মন্ত্রী হওয়া স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর চপেটাঘাত। এটা দেশের সব শহীদদের গায়ে চপেটাঘাতেরও শামিল।’’ আমরা একটা বিষয় বুঝে উঠতে পারছি না। বিএনপির মতো একটি দল এবং তার নেতা বেগম খালেদা জিয়া কেন ইতিহাসের এ বিষয়টাতে অন্যমনস্ক। তারা জনগণের মনোভাবের প্রতি সহানুভূতিশীল না হয়ে, শহীদদের স্মৃতির প্রতি অশ্রদ্ধাশীল হয়ে, আল বদর এর প্রধান, অপরাধের শীর্ষ সহযোগীকে মন্ত্রিসভায় স্থান করে দিয়েছিল। স্পষ্টতই বোঝা যায়, বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়া আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খুব কমই চিন্তা করেন। আর ৭১ এর গণহত্যা তাদের কাছে তেমন কোনো বিষয় নয়।
.
আমরা তার (শেখ হাসিনার) অনেক অভিযোগের সঙ্গে একমত না। তবে তিনি যখন বলেন আমি ছাড়া এই যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল বাস্তবায়িত হতো না, তখন কোনো ধরনের সন্দেহ ছাড়া তা মেনে নিই। আমরা মনে করি, এ বিষয়টাতে তিনি সঠিক অবস্থানে রয়েছেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নিরাপদে থাকার সুযোগ করে দিয়েছিলেন, তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগী এবং মন্ত্রিপরিষদেও স্থান করে দেন। এরশাদও ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের বিচারে কোনো আগ্রহ দেখাননি। তিনিও তার মন্ত্রিসভায় যুদ্ধাপরাধীদের জায়গা করে দিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে জোট সরকার গঠন করেছেন এবং তাদের মধ্যে বিতর্কিত দুই নেতাকে মন্ত্রিসভায় স্থান করে দেন। আর এটি ছিল দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আরেকটা উপহাস।
.
যাই হোক, সব দিক সামনে রেখে বিচার করলে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইস্যুতে আওয়ামী লীগের অবস্থান আর এ বিষয়ে শেখ হাসিনার দৃঢ়তা বিচার প্রক্রিয়াটিকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। আর এটি হচ্ছে প্রকৃত সাহসিকতার উদাহরণ এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের শ্রদ্ধার প্রতি সম্মান। আমরা এখনো মনে করতে পারি, যখন প্রধান যুদ্ধাপরাধীরা বড় কোনো সমাবেশে যেত সেখানে দাম্ভিকতার সঙ্গে যেত। আর সেখানে কোনো মুক্তিযোদ্ধা দেখলে গর্বে বুক ফুলিয়ে আমি রাজাকার বলতে দ্বিধা করতো না। তারা একদিন বিচারের মুখোমুখি হবে এটা লাখো মানুষের স্বপ্ন ছিল, যারা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। একজন মুক্তিযোদ্ধা লেখক হিসেবে লাখো মানুষের সঙ্গে আমিও নিজামীকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য কৃতজ্ঞচিত্তে মাথা নত করে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। শেখ হাসিনা, আপনাকে ধন্যবাদ।
Categories: Open Mind
The words you entered did not match the given text. Please try again.
If you are the site owner, please renew your premium subscription or contact support.
Oops!
Oops, you forgot something.