|
নেতিবাচক ও বিভাজনের রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে হবে তরুণ সমাজকে।
.
ক্ষমতার স্বাদ ও অর্থের নেশায় বিভ্রান্ত আমাদের তরুণ সমাজের একাংশ। এ অংশ ক্ষুদ্র হলেও সমাজে দারুণভাবে প্রভাব ফেলতে সক্ষম, কারণ এরা রাজনৈতিক দলের মদদপুষ্ট হয়ে নিজেদের প্রভাব বিস্তার ও বলয় সৃষ্টিতে রত। যুবসমাজের মধ্য থেকেই দেশের সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্ব গড়ে ওঠার কথা অথচ যে অবস্থানে বর্তমানে আমাদের তরুণ সমাজ রয়েছে, তাতে নেতিবাচক ধারণা জন্মানো স্বাভাবিক।
.
ছাত্রসংগঠনগুলোকে ব্যবহার করা হয় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে। বৃহৎ দলগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্রসংগঠনগুলোও রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির আবর্তে পড়েছে। বিভাজনের রাজনীতির মধ্যে অন্ধভাবে দলের অনুসরণ করতে গিয়ে নিজেদের স্বকীয়তা হারিয়েছে। হারিয়েছে অতীতের ছাত্ররাজনীতি অথবা যুব রাজনীতির পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি। দলের লেজুড়বৃত্তি করতে করতে বহু জায়গায় নৈতিক স্খলন হয়েছে। অর্থ, ক্ষমতা আর জবরদখল এখন তরুণ দলগুলোর লক্ষ্য।
.
তরুণদের উদ্যোগে গঠিত গণজাগরণ মঞ্চকে রাজনৈতিক গ্রাসে পরিণত হতে দেশবাসী দেখেছে। একদা যাদেরকে পুলিশের প্রহরায় সমাবেশ ও চলাফেরা করতে দেখা গেছে, তাদের অনেককেই এখন প্রধান নেতাসহ পুলিশের প্রহার হজম করতে দেখা যায়। এটাই বাস্তবতা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার পরিণতি এখন ওই মঞ্চের বেশির ভাগ তরুণকে বলা যায় ‘না ঘরকা না ঘাটকা’ (ঘরেরও না আবার ঘাটেরও না)।
.
আমরা আমাদের যুবসমাজকে ১৯৫২, ১৯৬৯ ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের মতো দেখতে চাই। রাজনৈতিক ফায়দা আর বৈষয়িক সুবিধাদি প্রাপ্তির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেখতে চাই না। তরুণ সমাজকে জাতীয় ঐক্যের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সমষ্টিগতভাবে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ী এবং স্বকীয় সত্তা বিকাশের আঙ্গিকে দেখতে চাই। আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে, তা নির্ভর করবে আমাদের তরুণ সমাজের মনমানসিকতা আর নৈতিক মূল্যবোধের ওপর। কারও দ্বারা প্রভাবিত বা ব্যবহৃত হয়ে দিগ্ভ্রষ্ট হলে জাতির ভবিষ্যৎ সংকটময় হবে। সে কারণেই রাজনৈতিক ঘুরপাকে নিমজ্জিত তরুণ সমাজের কাছে অনুরোধ যে তারা যেন লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি বাদ দিয়ে স্বকীয়তা ও নৈতিকতার ভিত্তিতে নিজেদের চলার পথ বেছে নেয়। তা না হলে আমরা যে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছি, তা স্বপ্নই থেকে যাবে। যে তরুণ সমাজ তাদের অগ্রজ সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মান দেখাতে পারে না, একদিন তাদের এ ধরনের অসম্মানের মুখোমুখি হতে হবে।
.
দেশের রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে মুক্তচিন্তা ও মননের তরুণ সমাজ গড়ে তুলতে না পারলে একটি জাতি বিকশিত হতে পারে না। তরুণেরাই রাষ্ট্রের শক্তি, এদের সঠিক পথে পরিচালিত না করতে পারলে তার খেসারত সমগ্র জাতিকেই দিতে হবে। পরিশেষে দেশের মুক্তচিন্তাশীলদের কাছে অনুরোধ, আমাদের তরুণ প্রজন্মকে তাদের মতো করে বেড়ে উঠতে সহযোগিতা করুন। এটা আমাদের সবার দায়িত্ব। নেতিবাচক ও বিভাজনের রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে হবে তরুণ সমাজকে।
এম সাখাওয়াত হোসেন:
Categories: Open Mind
The words you entered did not match the given text. Please try again.
If you are the site owner, please renew your premium subscription or contact support.
Oops!
Oops, you forgot something.