|
সন্তান লালনপালনের ক্ষেত্রে ১১ টি ভুল যা খুব সচারচরই ঘটে থাকে
.
১। সন্তানদের উপর ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মত সার্বক্ষণিক নজরদারি করা। এর ফলে বাবা মায়ের প্রতি বিশ্বাসের ঘাটতি, অসম্মান এবং আদেশ পালনে বিতৃষ্ণার মত বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
সঠিক পদ্ধতি হতে পারে, তাদের উপর কিছু সময় নজর রাখা এবং কিছু সময়ের জন্য ছেড়ে দেয়া অথবা এমন দূরত্ব থেকে নজর রাখা যাতে তারা বুঝতে না পারে যে আমরা তাদের প্রতিটি গতিবিধির উপর লক্ষ্য রাখছি।
.
২। সন্তানদের প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয় যেমন- তাদের খাবার, পোশাক, খেলনা এমনকি তাদের নিজেদের রুচির উপরও হস্তক্ষেপ করা। এর ফলে সন্তান দূর্বল ব্যক্তিত্বের অধিকারী এবং সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে পারে। এক্ষেত্রে সন্তান তার প্রতিটি বিষয়ের জন্য বাবা মায়ের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে।
সঠিক পদ্ধতিটি হলো তাদের কিছু দিক নির্দেশনা দেয়ার পর বেছে নেয়ার ক্ষমতা প্রদান করা। আমি এমনকি এমন বয়স্ক মানুষও দেখেছি, যে কিনা এখনও সে কোন কাপড় পড়বে তা জানতে তার মায়ের উপর নির্ভর করে!
.
৩। একমাত্র সন্তান কিংবা কোন দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছে এমন সন্তানের দেখভাল করার নামে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা। এর ফলে সন্তান বাবা মায়ের প্রতি বিদ্রোহী হয়ে উঠতে পারে এবং তাদের আদেশ নিষেধ মান্য করতে অনীহা দেখায়। এছাড়াও সন্তান ঔদ্ধত্য এবং আত্ম-প্রবঞ্চনার মাঝে বড় হয়। আমি এমন অনেক বাবা মাকে দেখেছি যাদের সন্তানদের উপর তাদের কোন নিয়ন্ত্রণই নেই।
.
৪। ইবাদাতের ক্ষেত্রে ছোট শিশুদের বাধ্য করা বা তাদের উপর খুব বেশি কঠোরতা প্রয়োগ করা। এর ফলে ধর্মের প্রতি তাদের বিতৃষ্ণা তৈরি হবে এবং তারা ইবাদাত থেকে দূরে সরে যাবে। আমি এমন এক পিতাকে চিনি, যিনি তার ছয় বছর বয়সী ছেলেকে ফজরের সালাতের জন্য মারধোর করেন। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ছেলেটি শুধুমাত্র তখনই সালাত আদায় করে যখন তার বাবা মা উপস্থিত থাকেন। এই অভ্যাস সন্তানের মাঝে কপটতা বা মুনাফেকির জন্ম দিতে পারে। সন্তানদের মাঝে ধর্মের ভালবাসা সৃষ্টি করতে পারাটাও এক ধরনের দক্ষতা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই এই ধর্ম হলো শক্তিশালী এবং চিরন্তন। অতএব (লোকেদের) এর ভিতর নম্রতার সাথে প্রবেশ করাও” ।
.
৫। অনেক সময় আমরা সন্তানের কোন একটি দোষের ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়েই তাদের বকাঝকা শুরু করি। আমরা এক্ষেত্রে খুব দ্রুতই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাই এবং আমাদের নিজেদের ভুলবশত তাদের শাস্তি প্রদান করি। এর ফলে বাবা মায়ের সাথে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। যদি কখনো আমরা এধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হই, আমাদের অবশ্যই উচিত হবে, আমাদের ভুলের জন্য তাদের নিকট দুঃখ প্রকাশ করা। এর ফলে একই সাথে তারা ভুলের কারণে ক্ষমা প্রার্থনা করার শিক্ষা লাভ করবে।
.
৬। আবিষ্কারের স্পৃহা থেকে সন্তানদের নিবৃত্ত করা। আমি এমন এক মায়ের কথা জানি, যিনি রান্নাঘরে ঢুকে দেখতে পান তার মেয়ে মিষ্টি তৈরি করার চেষ্টা করছে এবং সারা রান্নাঘরে সব কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তিনি তার মেয়ের উপর দোষারোপ আর সমালোচনার ঝড় বইয়ে দেন এবং তার রান্নাঘরে আসার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এক্ষেত্রে তার যা করা উচিত ছিল তা হলো তার মেয়ের সাথে কথা বলা, তাকে উৎসাহ দেয়া এবং তার কাজে সহযোগিতা করা। প্রত্যেক শিশুই আবিষ্কার করতে ভালবাসে। আমাদের উচিত তাদের এই সহজাত প্রবৃত্তির উন্নয়নে তাদের উৎসাহ দেয়া এবং সাহায্য করা।
.
৭। কিছু বাবা মা তাদের সন্তানদের দিয়ে এমন সব কাজ আদায় করিয়ে নিতে চায়, যা তাদের শৈশবে তারা নিজেরা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, এমনকি তাদের সন্তানের পছন্দ বা সামর্থ্য ঐ কাজের জন্য উপযোগী না হলেও। আমি এমন এক আরব মায়ের কথা জানি, যিনি নিজে ইংরেজিতে দূর্বল ছিলেন এবং তার সন্তানদের দিয়ে এই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখন তিনি আফসোস করছেন, কেন তিনি তার সন্তানদের আরবি শেখানোর উপর জোর দিলেন না। কারণ এখন তার সন্তানেরা শুদ্ধভাবে কুর’আন পর্যন্ত তিলাওয়াত করতে পারে না! আমি আরেকজন বাবার কথা জানি, যিনি নিজের কুর’আন হিফয করার ইচ্ছা তার সন্তানদের দিয়ে পূরণ করতে চেয়েছিলেন। তিনি তাদের সামর্থ্যের দিকে নজর দেননি এবং প্রতিদিনই তাদের উপর অতিরিক্ত পড়া চাপিয়ে দিয়েছেন। ফলাফল হয়েছিল সম্পূর্ণ বিপরীত এবং এখন তার সন্তানেরা ধর্মের কোন কিছুই আর পছন্দ করে না।
.
৮। সন্তানের ব্যাপারে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা। এর ফলে সন্তান সংকটাপূর্ণ, আত্মবিশ্বাসহীন এবং অপরিপক্ব ব্যক্তিত্বে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তার কোন উচ্চাকাংখা থাকে না এবং সে কোনরূপ দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। সে বরং পাপাচারের দিকেই বেশি ঝুঁকে পড়ে। এক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতিটি হলো তাদের প্রতি সাবধানতা দেখানো এবং তা গোপন করার ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করা। সন্তানকে তার নিজের পায়ে দাঁড়ানো এবং সারাজীবন ধরে বাবা মায়ের ছায়ায় না থাকার শিক্ষা দেয়াই হলো তাদের প্রশিক্ষণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক।
.
৯। ছেলে এবং মেয়ে সন্তানের মাঝে বৈষম্য করা। এটি আমাদের সমাজের খুবই সাধারণ একটি বিষয়। আমাদের উচিত আচরণের ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণ হওয়া এবং একই পরিবারের ভাইবোনের মাঝে তাদের লিঙ্গের কারণে কোনরূপ বৈষম্য সৃষ্টি না করা। “... আল্লাহর কাছে তোমাদের মাঝে সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি হচ্ছে সে, যে সর্বাধিক তাক্বওয়াবান...” [আল-হুজুরাত ১৩] এই আয়াতের অর্থের প্রতি আমাদের মনোযোগ দেয়া উচিত।
.
১০। সন্তানদের পোশাকআশাক পরীক্ষা করা এবং তাদের ফোনের উপর গোয়েন্দাগিরি করা। এই কাজটি বাবা মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক এবং বিশ্বাসকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়। এক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতিটি হলো, যদি কোন কিছু জানতেই হয়, তবে প্রথমে তাদের অনুমতি নেয়া এবং উভয়পক্ষের সম্মতিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
.
১১। সন্তানের অনুভূতির ব্যাপারে উদাসীন থাকা। যেমন- পরিবার বা বন্ধুদের সামনে “আমার ছেলে প্রতিদিনই বিছানা ভিজায়” বা “আমার ছেলে তোতলা” এ ধরনের কথা বলা। এর ফলে সন্তানের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। এক্ষেত্রে তার ঐ অবস্থার আরো অবনতি কিংবা বাবা মায়ের প্রতি প্রতিশোধমূলক মনোভাব দেখা দিতে পারে।
Categories: ___Part-2
The words you entered did not match the given text. Please try again.
If you are the site owner, please renew your premium subscription or contact support.
Oops!
Oops, you forgot something.