|
একজন বিশ্ববিদ্যালয়–শিক্ষকের আর্তনাদ
.
আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষার পরিবেশকে ক্রমেই রাজনৈতিক সন্ত্রাসের অসহায় শিকারে পরিণত করার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের আর্তনাদকে ঘিরেই৷ বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা অতীতের মতো এখনো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মেধার প্রতিযোগিতায় সাফল্যের সঙ্গে অন্যান্য দেশের মেধাবীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাচ্ছে৷ এটা দেখে যেমন গর্বে বুক ভরে যায়, কিন্তু তার পাশাপাশি যখন ইন্টারনেটের বাংলাদেশি টিভি চ্যানেলগুলোয় খবর পাই যে কী এক তুচ্ছ দলীয় কোন্দলের কারণে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ ক্যাম্পাসকে অচল করে রেখেছে ৭ মে থেকে ১৯ মে পর্যন্ত, তখন আর্তনাদ করে উঠি, আল্লাহ, এসব মাস্তানের কবল থেকে তুমি আমাদের কবে নিষ্কৃতি দেবে? ছাত্রলীগ তো এখন আইয়ুব-মোনেমের এনএসএফ থেকেও ভয়ংকর এক মাস্তান বাহিনীতে পরিণত হয়েছে দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ আর ১৮ মে যখন খবর শুনলাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাত্রলীগের আজীবন সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে, তখন এই আর্তনাদটা পুরো জাতিকে শোনানোর জন্য লিখতে শুরু করলাম প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মিনতি জানিয়ে, আপনি এই পদ গ্রহণ করবেন না৷ ছাত্রলীগের মাস্তানেরা আপনার ক্ষমতার মেয়াদ কতটুকু বাড়াতে পারবে তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে, কিন্তু তারা যে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷
.
দেশব্যাপী চলমান রাজনৈতিক সংঘাত ও খুনোখুনি আমার আজকের আলোচনার বিষয় নয়৷ আমি আজ ফরিয়াদ জানাচ্ছি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রাজনৈতিক দলের পেটোয়া ক্যাডার পোষা ও অপব্যবহারের ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতিটা’ চিরতরে পরিত্যাগের জন্য৷ দেশের স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিবাদী অপশক্তি জামায়াতে ইসলামী তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ক্যাডারদের কীভাবে একটা পুরোদস্তুর ‘সিভিল আর্মি’ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দেশের উচ্চশিক্ষার, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার, এমনকি মাধ্যমিক স্কুলের ক্যাম্পাসগুলোকে ট্রেনিং গ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে, তা ৩৪ বছর ধরে দেখার দুর্ভাগ্য আমার হয়েছে৷ তারা যে একদিন রাষ্ট্রশক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাবে, সে সাবধানবাণীও সবার আগে আমিই উচ্চারণ করেছি এবং এখনো বারবার জাতিকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি৷
.
আজ আমি শুধু দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল্লায় যাওয়ার প্রক্রিয়াটি থামানোর আরজি জানাতে চাচ্ছি৷ দেশের আনাচকানাচে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মহাযজ্ঞ সোৎসাহে এগিয়ে চলেছে শিক্ষার বাজারীকরণের ঝান্ডা উড়িয়ে৷ সেগুলোতে চার বছরের ডিগ্রি চার বছরেই ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা চালু থাকবে আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্রসংগঠনগুলোর মাস্তান-ক্যাডারদের যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে ধঁুকে ধুঁকে মরণাপন্ন দশায় উপনীত হবে, এটার বিরুদ্ধেই আমার প্রতিবাদ৷ দেশের ধনাঢ্য মা-বাবার সন্তানদের উচ্চশিক্ষার জন্য বাজার নিশ্চয়ই ভালো আয়োজনের পসরা সাজাবে৷ ওই ব্যাপারে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই৷ অজস্র প্রস্তাব পেয়েও আমি কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো দিন পড়াইনি, শিক্ষার এহেন বাণিজ্যিকীকরণ মেনে নিতে পারিনি বলে৷ শিক্ষাকে বাজারের পণ্য করে তা নিয়ে যে মুনাফাবাজির লোভনীয় মাতামাতি প্রত্যক্ষ করে চলেছি, সেটা আমার বিবেককে সারাক্ষণই আহত করে চলেছে৷
.
আমার একটাই আরজি, ছাত্ররাজনীতিকে মূল রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তির নিগড় থেকে নিষ্কৃতি দিন৷ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে লাঠিয়াল পালনের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহারের অপসংস্কৃতি লালনে এবার ক্ষান্ত দিন৷
.
মইনুল ইসলাম: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি৷
Categories: __________Chapter-II
The words you entered did not match the given text. Please try again.
If you are the site owner, please renew your premium subscription or contact support.
Oops!
Oops, you forgot something.