|
.
আমার দাম্ভিকতা জাতির জনকের কন্যার থেকেও বেশি!.
.
আমার দান করার একটা নমুনা দেই। কিন্তু দান নিয়েছি এমন নজির নাই। তাই দিতে পারছি না। বুঝুন গৌরব কাকে বলে। আমি দান নেই না বলছি জোর গলায়। পারবে শেখ রেহানা বলতে?
.
আমি পথ চলি আর পথের মানুষ দেখি। রাস্তার ফুটপাতে বসে থাকা ফকিরের ভিক্ষা চাইবার স্টাইলও দেখি খুব মনোযোগের সাথে। সত্যিকারের অভাবী বুঝলে সাহায্য করি। হাতে সময় থাকলে ইচ্ছে পূরণ করি। সেদিন এক বৃদ্ধের সাথে দেখা। বললাম কী খাবেন? যা পাই। ভোনা খিচুরি খাবেন? হাসলেন বাঁকা ঠোটে, যেন আমি উপহাস করছি আর উনি তা ধরতে পেরেছেন।
.
এবার জোর দিয়ে বললাম কী খাবেন? নাগো মা। বলেই হাঁটতে শুরু করলেন। আমি থামালাম তাকে। আরে যাচ্ছেন কেন সত্যি খাওয়াবো। অনেকটা জোর করেই মগবাজার মোড়ের থ্রি স্টার হোটেলে নিয়ে গেলাম। বসলাম। ভোনা খিচুড়ির অর্ডার দিতেই জানালো শেষ। ইলিশ মাছ ভাজা, ভর্তা, ডাল আছে। দিতে বললাম। খাবার এলে নির্বাক হয়ে যাওয়া বৃদ্ধ হাতের কবজি ডুবিয়ে খাওয়া শুরু করলো কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজ দিয়ে। ভর্তাও নিলেন কিন্তু ইলিশ মাছটা ছুঁয়েও দেখলেন না। আমি তুলে দিতে গেলাম। থামিয়ে দিলেন নাগো মা ও মাছের বড় দাম। তুমি ভাত দিছো তাই খুশি।
.
আমি জোর করে প্লেটে ঢেলে দিলাম। বৃদ্ধ কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজ দিয়ে খাচ্ছিলেন গোগ্রাসে। এবার থামলেন। ইলিশ মাছের টুকরাটা নেড়ে চেড়ে দেখলেন অনেক সময় নিয়ে। আমি তাড়া দিতেই মুখ তুলে তাকালো। কাঁদছেন তিনি। দু’চোখে অঝোরে পানি ঝরছে। নাকের পানি আর চোখের পানি একসাথে জড়াজড়ি করে নিচে নামছে। আমি অপ্রস্তুত। নাগো মা পরিবার রেখে এই মাছ কেমনে খামু। গত ৩৫ বছর ইলিশ মাছ খাই না। মোর ৭টা গেদা গেদী (সন্তান তাগোও কোনোদিন কিনে খাওয়াতে পারিনি। চেনেই না তারা ইলিশ মাছ কেমন। আমি কেমনে খাই। আমি চুপ।
.
বৃদ্ধ ইলিশ প্লেটে তুলে রেখে ভাত খাওয়া শেষ করলো। এবার আমি বাকরুদ্ধ! যে অহংকার নিয়ে বুড়োকে খাওয়াতে গিয়েছিলাম তা এক লাফে বদলে গিয়ে কষ্টে রূপ নিলো। কী করতে পারি? কী করতে পারি আমি? বৃদ্ধের মতো কতজন আছে আমার চারপাশে, আমি কী করবো। মনটা বড্ড খারাপ হয়ে গেলো। মিনা বাজারে নিয়ে গিয়ে একটা ইলিশ মাছ কিনে দিলাম ৯০০ টাকায়। ২ কেজি চাল দিলাম ব্যাগের ভেতর। বললাম বাড়িতে গিয়ে সবাই মিলে খাবেন।
.
আমার সৌভাগ্য আমি এক গরীব বৃদ্ধের এক বেলার আনন্দের কারণ হতে পেরেছি। আমি এক অতি সাধারণ পরিবারের মেয়ে তবু আমার গৌরব আছে। সুখ আছে। সাধারণ, অতি সাধারণ কিছু মানুষরে জন্য করবার ক্ষমতা আছে। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে রেহেনা এক মহামান্বিত পরিবারের সদস্য হয়েও তার কিছু নেই! তাকে এই অধিকাংশ গরীব মানুষের এই দেশ থেকেও দান নিতে হয় পিতার পরিচয়ে। ধিক তোমায় ধিক।
Categories: None
The words you entered did not match the given text. Please try again.
If you are the site owner, please renew your premium subscription or contact support.
Oops!
Oops, you forgot something.