|
গেণ্ডারিয়ার সেই বধূ
.
পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ায় সুচিত্রা সেনের শ্বশুরালয়ের সেই বিশাল বাড়ির চিহ্ন পর্যন্ত রাখেনি দখলদাররা।
রমা দাশগুপ্ত- পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সদা লাস্যময়ী এক শিক্ষার্থী। বাড়ি পাবনা শহরের হেমসাগর লেনে (গোপালপুর মহল্লা। ১৬ বছরের মেয়েটি পড়ছে ক্লাস টেনে। দেশভাগের বছর, ১৯৪৭ সালে হঠাৎ করেই বিয়ে হয়ে গেল প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর মেয়েটির। স্বামী দিবানাথ সেন ঢাকার প্রভাবশালী জমিদার আদিনাথ সেনের পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত উদারমনা পুত্র।
.
জমিদার আদিনাথ সেন পাত্রী দেখে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সিদ্ধান্ত দেন, ‘যদি কেউ পুত্রবধূ হওয়ার যোগ্যতা রাখে সেটা হলো এই মেয়ে।’ বিদেশে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উচ্চশিক্ষিত দিবানাথ সেনও যেন বাঙালি সংস্কৃতিমনা সুন্দরী ও গুণবতী এমন মেয়েই বউ হিসেবে প্রত্যাশা করেছিলেন।
.
জমিদার আদিনাথ সেনের লেখক হিসেবেও ব্যাপক পরিচিত ছিল। তাঁর লেখা তিন খণ্ডে ‘দীননাথ সেন ও তৎকালীন পূর্ববঙ্গ’ বইটি ১৯৪৮ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়, যা বাংলা ভাষার একটি মূল্যবান বই। তাঁর বাবা দীননাথ সেন (১৮৪০-১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দ ছিলেন বাংলার অন্যতম রেনেসাঁ পুরুষ। তিনি ঢাকার ইডেন ফিমেল স্কুল (বর্তমানে ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ব্রাহ্ম স্কুলসহ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আরো অনেক শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকার প্রথম সংবাদপত্র ঢাকা প্রকাশের সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ত্রিপুরা মহারাজার অধীনে কিছুদিন তিনি মন্ত্রীও ছিলেন। ঢাকার গেণ্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোড তাঁরই নামে নামকরণ হয়েছে।
.
অতীতে বলা হতো, ‘পূর্ববঙ্গের এমন কোনো ভালো কাজ নেই, যাতে দীননাথ সেনের সহযোগিতা ছিল না।’ গবেষক ড. মুনতাসীর মামুনের মতে, একসময় ধোলাইখালের পূর্ব পাশের এলাকা বন-জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। দীননাথ সেন সেই জঙ্গল পরিষ্কার করে গেণ্ডারিয়াকে একটি পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে তোলেন।
.
ভুবনমোহিনী রমা দাশগুপ্ত হলেন গেণ্ডারিয়ার সেই সেন জমিদার বাড়ির পুত্রবধূ। জীবনে কখনো শ্বশুরবাড়িতে এসেছেন কি না তা নিশ্চিত করে জানা যায় না। স্থানীয় সূত্র কিংবা কোনো গবেষকও সে ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
.
তবে গেণ্ডারিয়াবাসী এই পুত্রবধূ নিয়ে আজও গর্ব করেন। আর গর্ব হবেই না কেন? এই বধূই যে সবার পরিচিত মুখ- সুচিত্রা সেন। তাদের গর্ব প্রকাশের ধরনটা এমন- ‘নায়িকা সুচিত্রা সেন আমাদের এলাকার বউ।’ এ দাবি নিয়ে এলাকার কেউ কেউ কলকাতায় সুচিত্রা সেনের বালিগঞ্জের বাড়ি পর্যন্ত গেছেন। আর সুচিত্রা সেনও গেণ্ডারিয়ার কথা শুনে তাঁদের সঙ্গে আগ্রহ নিয়েই দেখা করেছেন। অবশ্য সেটা স্বাধীনতার পরে এবং অন্তরালে চলে যাওয়ার মাঝামাঝি সময়ের ঘটনা।
.
গেণ্ডারিয়ার বাসিন্দা মীর হাবিব জানান, তাঁর বাবা ১৯৭৪ সালের দিকে কলকাতায় গিয়ে সুচিত্রা সেনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। গেণ্ডারিয়ার কথা শুনে সুচিত্রা তাঁকে বাসার ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেন। আর মীর হাবিবের বাবা সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন গেণ্ডারিয়ার সোনা মিয়ার প্রসিদ্ধ মিষ্টি ও দই। সেসব খেয়ে ‘বধূ’ খুব প্রশংসা করেন। বলেন, ‘আবার যদি ঢাকা থেকে কলকাতায় বেড়াতে আসেন তাহলে এ দই-মিষ্টি নিয়ে আসবেন।’ সোনা মিয়া মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। তবে সুচিত্রার প্রিয় দই-মিষ্টির দোকানটি ৩৩/এ রজনী চৌধুরী লেনে আজও রয়ে গেছে।
.
সুচিত্রা সেন ও দিবানাথ সেনের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় ১৯৬৩ সালে। ১৫ বছরের সংসার জীবনে তাঁদের একমাত্র সন্তান মুনমুন সেন।
Categories: Brief Stories, Part -1
The words you entered did not match the given text. Please try again.
If you are the site owner, please renew your premium subscription or contact support.
Oops!
Oops, you forgot something.