|
.
রফিক ড্রাইভার লোকটা মোটেই খারাপ না। ইদানিং যদি ও একটু আধটু লাল পানি খায়; তবে সেটা একান্তই দুঃখ উপশমের জন্য। কি আর করবে বলুন; কিছুদিন আগে তার একমাত্র ছেলেটার ও কিডনিতে প্রবলেম ধরা পড়েছে। টাকার অভাবে সুচিকিৎসা তো দুরের কথা; ভাল ডাক্তারই দেখাতে পারছেন না।
.
এমনিতে হরতাল অবরোধে টেম্পু নিয়ে বের হোন না; কিন্তু আজ বের হতেই হলো। ছেলের চিকিৎসা খরচ না হয় নাইবা জোগাড় করতে পারলেন; কিন্তু সাময়িক ব্যাথা নিরাময় ট্যাবলেট কেনার জন্য ও তো টাকার দরকার। ইদানিং আবার রাত হলেই ছেলেটা ব্যাথায় চিৎকার করে উঠে। আর সেই চিৎকার অনেকটা শেল হয়ে বিধে রফিক মিয়ার বুকে।
.
জিইসি মোড় থেকে কোন রকম ডাকাডাকি ব্যাতিতই টেম্পু প্যাসেঞ্জারে লোড হয়ে গেল। হরতালের দিনে গাড়ি বের করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে ভাড়া বাড়িয়ে নেয়া যায়। যদি ও পাবলিক উঠার সময় একটু ঘ্যানর ঘ্যানর করে; তবু না দিয়ে কি করবে। গাড়ি ধরাই পাবলিকের মূল লক্ষ্য থাকে। রফিক ড্রাইভার এই ব্যাপারটা ভালোই জানেন।
.
আজকে কয়েক ট্রিপ মারতে পারলেই হবে। আসলে টেম্পু চালাতে চালাতে তার অরুচি ধরে গেছে। কিন্তু না চালালে খাবে কি? পরিবার চালাবে কি দিয়ে? এই ভাবনাগুলো মাথায় আসলেই গিয়ারটা চট করে বাড়িয়ে টেম্পু বাতাসের বেগে চালান।
.
কর্নেলহাট মোড়ে আসতেই কোথা থেকে আস্ত একটা ইট টেম্পুর গ্লাসে এসে পড়লো। ব্রেক কষে থামাতে বাধ্য হলেন। কি হলো বোঝে উঠার আগেই কপাল বেয়ে ঘামের মতো কিসের যেন একটা স্রোত অনুভব করলেন। তারপর টেম্পু থেকে নেমে দাড়াতে গিয়ে টলে উঠে মাটিতে পড়ে গেলেন। প্যাসেঞ্জারদের হুড়মুড় করে নেমে পড়ার দৃশ্যটা তার একদমই সহ্য হচ্ছে না। "নাইমেন নাগো ভাই; আমার গাড়িডাত আগুন লাগাইয়া দিব;আমি শেষ হইয়া যামু গা" কথাটা চিতকারে করে বলতে চাচ্ছে কিন্তু গলায় আটকে যাচ্ছে কেন জানি।
.
দুইজন লোক এসে রফিক ড্রাইভারকে কোলে নিয়ে একটা ভ্যানে তুলে দিল। রফিক ড্রাইভার তাকিয়ে আছেন তার টেম্পুর দিকে। একদল মানুষ আগুন দিচ্ছে তার শেষ সম্বলে। দেখতে দেখতে তার চোখ দুইটা কেন জানি ঝাপসা হয়ে আসছে। সেই ঝাপসা চোখের আলোতে ও স্পষ্ট হয়ে ভেসে উঠছে তার ছেলের মলিন মুখ।
Categories: ___Hortal and the destruction
The words you entered did not match the given text. Please try again.
If you are the site owner, please renew your premium subscription or contact support.
Oops!
Oops, you forgot something.