|
"ঘড়িটা দাও তো ।" সকালে অফিসের জন্য তৈরী হতে হতে আম্মাকে বললেন আব্বা ।
আম্মা ঘড়িটা এগিয়ে দিলেন ।"তোমার ঘড়ি তো চলেনা , থেমে আছে ।" আব্বা কিছু বললো না । ঘড়িটা পড়ে দরজা খুলে অফিসে জন্য চলে গেলেন ।
..
সন্ধ্যা বেলা । বাসায় বসে টিভি দেখছি । আম্মা চা নিয়ে এলেন আমার জন্য । "কয়টা বাজে রে ?" বলে আমার রুমের
ডিজিটাল দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালেন ।
..
"জানিস তোর আব্বার ঘড়ি নষ্ট । একটা নতুন ঘড়ি কিনতে বললাম , কিছু বলেনা । নষ্ট ঘড়ি পড়ে কেউ অফিস যায় ?"
আমি চুপ করে চা খেতে লাগলাম । আম্মা কিছুক্ষণ বসে থেকে চলে গেলো ।
..
আমার দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালাম । লাল ডিজিটের পরিবর্তনে দিকে তাকিয়ে কিছুটা অতীতের ফিরে আসা হলো মনে...
ক্লাস টু তে পড়ি তখন । সবাই কার্টুন ওয়ালা কালারফুল ঘড়ি পড়ে স্কুলে যায় । আমার নাই । স্কুল থেকে ফিরে সন্ধ্যায়
আব্বাকে বললাম "আব্বু , আমার জন্য একটা ঘড়ি আনবা , ঠিক আছে ? কার্টুন ওয়ালা ।" "আচ্ছা এনে দিবো কালকে ।" আব্বার আশ্বাস ।
...
পরদিন স্কুল থেকে বাসায় এসে ছটফট করছি আব্বা কখন আসবে ! নতুন ঘড়ি পড়বো , কি মজা ! আব্বা এলেন , কিন্তু ঘড়ি আনেননি । ভূলে গেছিলেন । আমি কান্নাকাটি শুরু করলাম
।
আমাকে বললেন কাল যেভাবেই হোক কিনে আনবেন । আমি শুনছিলাম না । তিনি অপরাধীর মত মুখ করে বসে রইলেন ।
রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম । পরদিন সকালে , আমাকে নিয়ে আব্বা স্কুলে যাচ্ছেন । আমার মুখ কান্না কান্না । বন্ধুদের বলেছিলাম আজ নতুন ঘড়ি পড়ে যাবো । ঘড়ি তো নেই ।
...
মাঝপথে কেক খাওয়াতে নিয়ে আমার স্কুল ব্যাগটা খুলে একটা বক্স বের করলেন আব্বা । বক্সের ভিতর থেকে কার্টুনওয়ালা একটা ঘড়ি আমার হাতে পড়িয়ে দিয়ে হেসে বললেন ,"দেখ তো বাপ , পছন্দ হয় কিনা ?" আমি কেক খাওয়া বাদ দিয়ে খুশীতে চিত্কার দিয়ে উঠলাম ! আমার নতুন ঘড়ি !
...
পরে জেনেছিলাম , ঐরাতে আব্বা আবার বেরিয়ে গিয়ে অনেক খুঁজে ঘড়িটা কিনে এনেছিলেন । দোকান পাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুঁজে আনতে প্রচুর কষ্ট হয়েছিল তার ।
...
অতীত থেকে ফিরে এলাম । ডিজিটের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমার চোখেও কিছুটা পরিবর্তন । চোখটা ভেজা ভেজা !!
বুকে কেমন একটা শূন্যতা । রাতে আব্বা ভাত খাচ্ছেন । আমি আম্মার রুমে গেলাম ।
-আম্মা ।
-হু , কিরে ?
-একটা কথা ।
-কি ?
আম্মার হাতে আমার হাতঘড়িটা দিলাম । -এইটা আব্বাকে দিও । আমার কথা বইলোনা । আমি আরেকটা কিনে নিবো পরে । আমার থেকে ঘড়ির প্রয়োজন আব্বার বেশী ।
...
আমি রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম । আম্মা কিছুটা অবাক ! কিছুক্ষণ পর , আম্মা আব্বাকে বলছে ।
আমি শুনছি । -নাও ঘড়ি । -কিসের ঘড়ি ? -আমি তোমাকে দিলাম । -তুমি ঘড়ি পাইছ কই ? -ঘড়ি এনে দেয়ার লোকের অভাব আছে ?
..
বলে আম্মা হাসতে লাগলেন । ঘড়ি পেয়ে আব্বার কেমন লাগে , সেটা দেখতে পর্দার ফাঁক দিয়ে আব্বার দিকে তাকালাম ।
টিভির হালকা আলোয় দেখলাম বৃদ্ধ লোকটা ঘড়ির ডায়ালটার দিকে তাকিয়ে আছে । চোখের কোণে কিছু একটার ঝিলিক ! আনন্দ অশ্রু ! আমার মনটা ভরে উঠলো । এত অল্পতে মানুষ খুশী হয় ?!
..
একটা সত্য উপলব্ধি হলো । শেষ বয়সে বাবা মায়ের শখ আহ্লাদ বলতে তেমন কিছু থাকেনা । একটি ঘড়ি , কয় টাকা আর
সেটার দাম ? কিন্তু পরিবার থেকেই প্রাপ্তিটাই শেষ বয়সে তাদের জন্য আনন্দের উপলক্ষ্য । তাদের জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চেষ্টাগুলোই আমাদের সন্তানের জন্য পূণ্যের অবলম্বন ।
Categories: Brief Stories, Part -1
The words you entered did not match the given text. Please try again.
If you are the site owner, please renew your premium subscription or contact support.
Oops!
Oops, you forgot something.