|
![]() |
ভেজাল মস্তিষ্কই বাংলাদেশের জন্য সর্বনাশ হয়ে দাঁড়াবে।
।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। এটি জাতির জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি করতে ব্যর্থ হলে জাতির জীবনে ভবিষ্যতে অন্ধকার নেমে আসতে পারে। বিষাক্ত ও ভেজাল খাবার খেয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জাতি গঠন করা যায় না। আর একটি জাতির মস্তিষ্ক সুষ্ঠু স্বাভাবিক না থাকলে হাজার উন্নয়নেও কোন লাভ হবে না। ভেজাল ও বিষযুক্ত খাদ্যের প্রভাব হতে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে অতি বিত্তবান কেউ রেহাই পাচ্ছে না। ভেজাল ও অনিরাপদ খাদ্যের প্রভাবে দেশে এক ধরনের নীরব হত্যা ও অসুস্থতার মহামারী চলছে। অথচ এদিকে নজর দেয়ার সময়ই নেই সরকারের।
.
খাদ্যের বিষক্রিয়ায় কোন পর্যায়ে গিয়ে মিশেছে তা সম্প্রতি কয়েকটি গবেষণায় উঠে এসেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিসংস্থা (এফএও) এবং খাদ্যনিরাপত্তা গবেষণাগারে এ বছরের এপ্রিল মাসের যৌথ পরীক্ষায় রাজধানীর ৮২টি দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, মাছ, ফল ও শাক সবজির নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে তাতে নিষিদ্ধ ডিডিটি, এনড্রিন, হেপটাক্লোর এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। খাদ্যে এসব উপাদানের মাত্রা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাত্রার চেয়ে ২০ গুণ বেশি। এছাড়া এ গবেষণায় ৩৫ শতাংশ ফল ও ৫০ শতাংশ শাক সবজিতে বিষাক্ত বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক পাওয়া গেছে। চালের ১৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ৫টিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ও ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছে। মুরগি ও মাছে পাওয়া গেছে মানুষের জন্য ক্ষতিকর এ্যান্টিবায়োটিক। আম ও মাছের ৬৬টি নমুনায় পওয়া গেছে ফরমালিন। লবণে পাওয়া গেছে সহনীয় মাত্রার চেয়ে ২০-৫০ গুণ সীসা।
.
পাবলিক হেলথের গবেষণায় পরীক্ষা করা খাদ্য নমুনার মধ্যে ছিল, সরিষার তেল, সয়াবিন, পামওয়েল, দুধ, গুঁড়া দুধ, জুস, ফ্রুট সিরাপ, মধু, মিষ্টি, ক্যান্ডি, বিস্কুট চকোলেট, কেক, দই আচার, শুঁটকি মাছসহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য। এর মধ্যে ঘি, জুস মধু ক্যান্ডি ও সয়াবিল তেলের ৮০-৯৯ ভাগ ভেজালের নমুনা পাওয়া গেছে। জাতীয় জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের (আইপিএইচ) অধীনে পরিচালিত ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির ২০১৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে দেশের মানুষ প্রতিদিন যে মাছ, মাংস, দুধ, ফলমুল, চাল, ডাল, তেল মসলা ও লবণ খাচ্ছে তার শতকরা ৪০-৫৪ ভাগ পর্যন্ত ভেজাল রয়েছে। এসব খাদ্যে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক যেমন এনড্রিন, ডিডিটি, হেপ্টাক্লোর মেথোক্সিক্লোর, ইথিয়ন (এক ধরনের ভারী সিসা জাতীয় পদার্থ) ও আর্সেনিকের অস্তিত্ব রয়েছে।
|
![]() |
.
গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ হচ্ছে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও সর্বক্ষেত্রে আইনের শাসন। - সমাধান দিতে পারে শিক্ষিত শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণি .......অধ্যাপক নুরুল ইসলাম
.
অধ্যাপক নুরুল ইসলামের মতে, বাংলাদেশকে ঘিরে থাকা অজস্র সমস্যার সমাধান এনে দিতে পারে একটি শক্তিশালী, শিক্ষিত ও শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। যে শ্রেণিটির বড় অভাব এখন বাংলাদেশে। তাই উন্নয়নের স্বার্থে একটি শক্তিশালী শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে তোলার তাগিদ দিলেন।
.
প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদের মতে, দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের স্বার্থে সবাইকে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা থেকে বেরিয়ে সমস্যা সমাধানে সামষ্টিক উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যক্তিজীবনের প্রতিদিনের কর্মব্যস্ত সময় থেকে কিছুটা সময় ব্যয় করতে হবে সমাজের কাজে। তাঁর কাছে গণতন্ত্র মানে সামাজিক মূলধন বা সোশ্যাল ক্যাপিটাল। সংকটই হচ্ছে সমস্যা সমাধানের পথ। তাঁর বিশ্বাস, বাংলাদেশেও কখনো না কখনো সংকট তৈরি হবে, আর তার মধ্য দিয়েই নতুন কিছুর সূচনা ঘটবে। তবে কিছুটা আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, যখনই বাংলাদেশে আসি, তখনই হতাশ হই। কেন এ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, তা এখনো অনেকেই ভালোভাবে জানেন না। অথচ কে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন—এসব নিয়ে চলে বিতর্ক।
.
জবাবে নুরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কখনো গণতন্ত্র তৈরি করে না। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের একটি অংশমাত্র। গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ হচ্ছে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও সর্বক্ষেত্রে আইনের শাসন।
.
রাষ্ট্রীয়ভাবে মেধার ভিত্তিতে কোথাও নিয়োগ হচ্ছে না। রাষ্ট্র জ্ঞাতসারেই মেধাবীদের মেধাকে নষ্ট করছে। আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে হতদরিদ্রদের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও তারা এখনো অন্যের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
|
![]() |
অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবেও জামায়াতকে পরাজিত করতে হবে।
.
স্বাধীনতা সহজে প্রাপ্য নয়। বীরের রক্তস্রোতোধারা, মাতার দুঃখ, কন্যার অশ্রু ও অসংখ্য আত্মত্যাগের মাধ্যমেই সর্বত্র স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং অর্জিত স্বাধীনতাও এর ব্যতিক্রম নয়।
কিন্তু তার চেয়েও বড় সত্য হচ্ছে স্বাধীনতা রক্ষা করা, তাকে অর্থবহ করা এবং তাকে আরও গৌরবদীপ্ত করে সব নাগরিকের হৃদয়ে তাকে প্রতিষ্ঠিত করা স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে শত শত গুণ কঠিন কাজ। স্বাধীনতা যদি নিছক পতাকা বদল, মানচিত্র বদল, ক্ষমতার হাতবদল হতো, তাহলে স্বাধীনতা অর্জনের পর তাকে রক্ষা করাটা তেমন কঠিন কাজ হতো না।
.
এটি হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দল ‘জামায়াতে ইসলাম’। এই দলটি মৌলবাদী কিন্তু ভয়ানক ধূর্ত ও কৌশলী একটি দল। এই দলের সঙ্গে পুঁজিবাদের কোনো শত্রুতা নেই। তাদের অনেক নেতাই পুঁজিপতি। আমেরিকানরা এই দলকে দেশে দেশে ব্যবহার করেছে প্রগতিশীলদের বিরুদ্ধে বহুবার। এ জন্যই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন বাংলাদেশের জামায়াতকে মডারেট ইসলামিক পার্টির সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। এরা মূলত বিএনপির ধর্মভিত্তিক ভারতবিরোধী জাতীয়তাবাদকে পছন্দ করলেও সুবিধা দেখলে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদকেও নিজেদের কাজে লাগায়। তাদের ‘ওয়েবসাইট’ পরিদর্শন করলে আপনি দেখবেন সেখানে একটি সহযোগী সদস্যপদের ফরম আছে এবং সেটি অমুসলমানদের জন্যও উন্মুক্ত বলে দাবি করা হয়েছে। সেখানে যদিও প্রথমে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করা হয়েছে, কিন্তু পরে দরখাস্তের ভেতরে তাকে যেসব শর্ত পূরণের কথা বলা হয়েছে, তাতে কোথাও সুনির্দিষ্টভাবে ‘ইসলাম’ ধর্মের কথাই নেই!
.
মশিউল আলম লিখিত গ্রন্থ উইকিলিকসে বাংলাদেশ থেকে জানা যায় যে এই দলের অন্যতম নেতা ব্যারিস্টার রাজ্জাক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে গিয়ে আগেই ‘মিনতি’ জানিয়ে এসেছেন যে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র খর্ব করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হলে তাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের সুযোগ থাকবে না এবং নাইন-ইলেভেনের মতো জঙ্গি তৎপরতা তখন বৃদ্ধি পেতে পারে, যেটা আমেরিকার জন্যও ক্ষতিকর হবে, আর সে জন্যই মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উচিত হবে আওয়ামী লীগকে বোঝানো, যাতে জামায়াতকে বেআইনি করা না হয়।
.
কিন্তু জামায়াত কি গণতান্ত্রিক দল? মার্কিনরা কি নাৎসি দলকে গণতান্ত্রিক দল বলেন? মনে রাখা উচিত জামায়াত এমন একটি দল, যেখানে তৈরি হয়েছিল একাত্তরের খুনিরা। যে দল এখনো একাত্তরে তাদের ভূমিকাকে কোনো অন্যায় বলে মনে করে না এবং জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতাও আমাদের অজানা নয়। জামায়াতের শাখা-প্রশাখাও বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছে। তাই যখন বাংলাদেশে জামায়াতের নেতা নিজামীর ফাঁসির আদেশ ঘোষিত হলো তখন দেখা গেল, পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামের আমির সিরাজুল হক বিবৃতি দিয়ে তাদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন।
.
প্রকৃত সত্য হচ্ছে, যেসব দালাল যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁরা অধিকাংশই বন্দী ছিলেন এবং কারও কারও ক্ষেত্রে বিচারও শুরু হয়েছিল। দুর্ভাগ্য হচ্ছে জেনারেল জিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও এই দালালদের পুনর্বাসন শুরু করেন। আর মুক্ত হওয়ার পর এঁরা দক্ষতার সঙ্গে সংগঠন এবং নিজস্ব পুঁজির বিকাশ ঘটিয়েছেন।
.
আজ তাই নিছক পুঁজিবাদী বিকাশের অভিঘাতে বাংলাদেশ থেকে জামায়াতের অভিশাপ দূর হবে না। বরং মৌলবাদী ধর্মীয় চিন্তা যখন পুঁজি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে সামনে এগোয়, তখন তাকে কিছুতেই খাটো করে নিছক সামন্তবাদের অবশেষ হিসেবে দেখলে চলবে না। বিচার ও শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবেও জামায়াতকে পরাজিত করতে হবে।
.
এম এম আকাশ: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
|
![]() |
.
দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি - দুদক সার্টিফিকেট
।
পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে অভিযুক্ত সবাইকে ক্লিন সার্টিফিকেট দিয়েছে দুদক। ২০ মাসের দীর্ঘ তদন্তে দুদক নাকি কিছুই খুঁজে পায়নি। এদিকে অক্টোবরের ৮ তারিখে দুদক থেকে দায়মুক্তির সার্টিফিকেট পেয়ে যান সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হক। সরকারদলীয় আরেক সংসদ সদস্য আসলামুল হকও পান একইরকম দায়মুক্তির সনদ। রেলের কালো বিড়ালরাও অনেক আগেই দুদক থেকে দায়মুক্ত। সর্বশেষ রেলের জিএম ইউসুফ আলী মৃধাও দুদকের পাঁচ মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। এ যেন অদ্ভুত এক দায়মুক্তির কমিশন! যেখানে শেয়ার কেলেঙ্কারির নায়করা দুদকের ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকে। সোনালী ব্যাংকের রাজনৈতিক পরিচালক সুভাষ সিংহ রায় আর জান্নাত আরা হেনরীদের এখন আর পালিয়ে থাকতে হয় না। দায়মুক্তির সনদ পাওয়া যত সহজ, মুক্তিযুদ্ধের ভুয়া সনদও এখানে ততই সস্তা। মুক্তিযুদ্ধের ভুয়া সনদধারী চার সচিবের দুর্নীতিতে দুদকের যেন কিছুই করার নেই। কাগজে-কলমে দুদক স্বাধীন হলেও বাস্তবে এ কাগুজে বাঘের করুণ পরাধীনতার গল্প আজ মানুষের মুখে মুখে।
।
নির্বাচনের ঠিক ১০ দিনের মাথায় হঠাৎ করেই দুদক সক্রিয় হয়ে ওঠে। সরকারের নয়জন মন্ত্রী-এমপির বিপুল পরিমাণ সম্পদের অনুসন্ধানের ঘোষণা দেয়। কিন্তু ধীরে ধীরে দুদক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে দায়মুক্তির সার্টিফিকেট দেওয়া শুরু করে। দুদকের দাবি, তারা এসব মন্ত্রী-এমপির হলফনামায় দেওয়া তথ্যের কোনো সত্যতাই খুঁজে পায়নি। অথচ হলফনামায় দেওয়া তথ্য স্বয়ং ব্যক্তির নিজের হাতেই দেওয়া তথ্য। তারপরও দুদক এটাকে প্রমাণ করতে পারল না কেন? দুর্নীতিবাজদের শাস্তির বদলে পুরস্কার দিল দুদক। দুদক যেন দাগ-ময়লা পরিষ্কার করার একটা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি!
।
ইতিমধ্যে পদ্মা সেতুর দুর্নীতি মামলার সবাইকে সসম্মানে খালাস দেওয়া হয়েছে। সরকারের সাবেক দুই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সরকারদলীয় হুইপের ভাইকে বাদ দিয়েই তখন মামলাটা করা হয়েছিল। যদিও সচিবসহ তিন সরকারি কর্মকর্তা মামলায় অভিযুক্ত হলেও সেই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তার কিছুই জানতেন না বলে জানানো হয়েছিল। ২০১২ সালের ৩০ জুন দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ মিলেছে জানিয়ে চুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। ওই বছরের ডিসেম্বরে সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। গত ৩ সেপ্টেম্বর কোনো প্রমাণ পায়নি বলে দুদক সবাইকে দায়মুক্তি প্রদান করে।
।
বিগত কেয়ারটেকার সরকারের আমলে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা থেকে সরকার ঢালাওভাবে তাদের নিজেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা কয়েক হাজার মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অন্যদিকে বিরোধী দলের একটি মামলাও প্রত্যাহার করা হয়নি। বরং সরকার দুদককে দিয়ে বিরোধী দলের পুরনো মামলা সচল করেছে এবং নতুন করে দুদককে দিয়ে বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে নতুন নতুন দুর্নীতির মামলা রুজু করিয়েছে। সরকার তার দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক অস্বচ্ছতা-লুটপাট আড়াল করতে দুদককে একটি সাক্ষীগোপাল সংস্থায় পরিণত করেছে।
।
সরকার এখন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তিতে দাতারা ২৯১ কোটি ডলারের মধ্যে ২৩৫ কোটি ডলার দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জে দিতে সম্মত ছিল। তাও আবার ১০ বছর পর থেকে ঋণ শোধ করতে হতো। আর এখন আমাদের নিজেদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভেঙে এ সেতু তৈরি করতে হবে। আমাদের কোটি কোটি প্রবাসীর হাড়ভাঙা খাটুনির রেমিট্যান্সের টাকা দিয়ে দুর্নীতির খেসারত দিতে হবে। আসলে দোষ দুদকের নয়, সব দোষ আমাদের জনগণের! না হলে দুর্নীতি দমনকারীরা কেমন করে দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষক হয়ে ওঠে? দুর্নীতিবাজরা কী করে গণহারে পেয়ে যায় দায়মুক্তির সার্টিফিকেট? আবুলরা কী করে পেয়ে যায় দেশপ্রেমিকের সার্টিফিকেট?
।
লেখক : ডক্টর তুহিন মালিক, সুপ্রিমকোর্টের আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
|
![]() |
বিচিত্র এই দেশ!
.
গত কয়েক দিনে আদালতের রায়ে মতিউর রহমান নিজামী ও মীর কাসেম আলী যুদ্ধাপরাধের জন্য দোষী প্রমাণিত হয়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। আর আমাদের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আরেক যুদ্ধাপরাধীর দোষ ও সাজা বহাল রেখেছেন, অর্থাৎ কামারুজ্জামানকে দেওয়া যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রেখেছেন।
.
মানুষ মাত্রই ভুল করতে পারে, অন্যায় করতে পারে, অপরাধ করতে পারে; এমনকি নৃশংস-নির্মম-জঘন্য যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধ করতে পারে। কিন্তু এত খারাপ কাজ করলেও, মানুষের তো বিবেক থাকার কথা। মনুষ্যত্বের একটা দিক নিশ্চয় ‘বিবেকের দংশন’। যত বড় অপরাধীই হোক না কেন, এটা ধরে নেওয়া স্বাভাবিক যে কোনো একদিন সেই অপরাধীও বিবেকের দংশনে জর্জরিত না হলেও কিছুটা হলে প্রায়শ্চিত্তবোধ তার হবে। মনে মনে হলেও দুঃখিত, লজ্জিত হবে; কিছুটা হলে অনুশোচনা বোধ হবে। তার নৃশংসতা, জঘন্যতা, বর্বরতার শিকার ব্যক্তিদের জন্য মানবিক কিছু চিন্তাধারণা হবে। কিন্তু এই এক সপ্তাহের তিনটা রায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু ঘটনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে শুধু এই যুদ্ধাপরাধীরাই নন, তাঁদের সাঙ্গপাঙ্গদের অনেকেই তাঁদের মতো বিবেকহীন, ভয়ংকর ও ভয়ানক।
.
যেকোনো মৃত ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণে সাধ্যমতো চেষ্টা করা অবশ্যই করণীয়। কিন্তু শেষ ইচ্ছাটা যদি বীভৎস ও ভয়ংকর হয়? গোলাম আযমের শেষ ইচ্ছা ছিল, সংবাদমাধ্যমে কথাটা যেভাবে এসেছে, সেটার ওপর নির্ভর করছি: দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী অথবা মতিউর রহমান নিজামী তাঁর জানাজা পড়াবেন।
.
বিবেকের দর্শন, প্রায়শ্চিত্ত, অনুশোচনা ইত্যাদির খাতায় নিঃসন্দেহে শূন্য। সাঈদীর ট্রাইব্যুনালে বিচার হয়েছিল অনেক আগে। আপিল বিভাগও রায় দিয়েছেন বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে। আমৃত্যু কারাদণ্ড। অর্থাৎ আমাদের সর্বোচ্চ আদালত শেষ সিদ্ধান্ত দিয়ে দিয়েছেন। স্পষ্টত গোলাম আযম যখন সাঈদীর পড়া জানাজার পর কবরে শায়িত হতে চেয়েছিলেন, এটা মনে করাই স্বাভাবিক যে গোলাম আযম সাঈদীকে পূতপবিত্র পরহেজগার ব্যক্তি মনে করতেন, শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত।
কী ভয়ংকর, বীভৎস মনমানসিকতা! নিঃসন্দেহে চিন্তাচেতনা অনেকটা এ রকম, তোমাদের আইন বিচার যা-ই বলুক না কেন, আমরা হাজার হাজার লাখ লাখ মানুষ হত্যা করলেও, ধর্ষণ করলেও, অগ্নিসংযোগ করে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিলেও খারাপ কাজ তো কিছুই করিনি। তাই সাঈদী বা নিজামীর মতো লোকেরা এসব কাজ করলেও খারাপ তো কিছু করেননি। গোলাম আযম যেন ঘোষণা দিয়েই বলছেন, সাঈদী-নিজামীর মতো পূতপবিত্র-পরহেজগার বান্দারাই আমার জানাজা পড়াবেন।
.
হায় আল্লাহ! এঁরাই নাকি এ দেশে আমাদের ধর্মের দিশারি। আমরা নাকি এঁদের কাছ থেকে ধর্ম শিখব!
মীর কাসেম আলী রায় ঘোষণার পর ‘ভি সাইন’ দেখিয়েছেন। স্পষ্টতই ভাবখানা হলো হাজার লোক মেরেছি তো কী হয়েছে, পারলে আরও মারতাম, মারব! দোষী ঘোষিত হওয়ার পর তাঁর মতো আরও অনেকেই এই ‘ভি সাইন’ দেখিয়েছেন রায় শোনার পর। যুদ্ধাপরাধীরা ক্রমাগত মনে করিয়ে দিয়ে চলেছেন যে তাঁরা এই রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের আইন, বিচার—কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করেন না। ১৯৭১ সালে তাঁরা যে কোনো অপরাধ করেছিলেন, সেটাও স্বীকার করেন না। মরে গিয়েও সেই একই ঘোষণা দিয়ে গেলেন, জানাজার ইমামতি করবে যুদ্ধাপরাধী।
.
জিম্মি হয়ে ঘরে বসে আছি সেই ৩০ অক্টোবর থেকে। স্পষ্টত ১৯৭১ সালের পর ৪৩ বছরে এখনো এসব খুনি-যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধী অপরাধীরা হরতালের নামে গোটা বাংলাদেশকে জিম্মি করে রেখেছে। পুরো সপ্তাহ ধরে তারা আমাদের গৃহবন্দী করে রেখেছে। কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে অনেকে বেরোচ্ছে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের ধৃষ্টতায় অধম অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। রাজনৈতিক কারণে, অর্থনৈতিক নীতি বা সিদ্ধান্ত বা অন্য অনেক কিছুতেই হরতাল হতে পারে। তবে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারে এবং সে বিচারে রায়ের বিরুদ্ধে যে দল হরতাল ডাকে, তারা নিঃসন্দেহে আইনকানুন, বিচার-আদালত, ন্যায়-অন্যায় কিছুরই তোয়াক্কা করে না।
.
অবশ্য এটাও স্পষ্ট যে যত দিন এ দেশের মানুষ দরিদ্র-অশিক্ষিত থাকবে, তত দিন ধর্ম বিকিয়ে যারা তথাকথিত রাজনীতি করে, তাদের প্রভাব থাকবে। পিছিয়ে পড়া মানুষই তাদের ভরসা-সম্বল। অর্থনীতিটাকে যতই এগোতে না দেওয়া যায়, তাদের জন্য ততটাই মঙ্গল। দারিদ্র্য-অশিক্ষা-কুশিক্ষা দূর করতে যত বেশি সময় লাগবে, ততই তাদের লাভ। তাই দিনের পর দিন তারা হরতাল ডাকবে। আমাদের জিম্মি-বন্দী করে রাখবে। আর আমরা কিছুই করতে পারছি না।
.
সরকার একটা সুবর্ণ সুযোগ হারাচ্ছে। হরতালকে কেন্দ্র করে, বিশেষত রায়ের কারণে হরতাল ডেকে জামায়াত যে সাংঘাতিক জনবিরোধী কাজ করছে, সেটা সরকার কাজে লাগাতে পারছে না। দিনের পর দিন যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধী রায়ে ঘোষিত জঘন্যতম অপরাধীরা হরতালের নামে আমাদের জিম্মি-বন্দী করে রাখছে। আমরা কিছুই করতে পারছি না। আর অদক্ষ সরকার বুঝতেও পারছে না শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষের মত কীভাবে কাজে লাগাবে।
.
বিচিত্র এই দেশ!
.
ড. শাহদীন মালিক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট; অধ্যাপক, স্কুল অব ল, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি
|
![]() |
"কিন্তু - "
১.
যতই দিন যাচ্ছে আমি ততই "কিন্তু" শব্দটার উপর বিরক্ত হয়ে উঠছি। আমার মনে হয় আমাদের ভাষায় এই শব্দটা তৈরী হয়েছে প্রতারণা করার সুযোগ দেয়ার জন্য। সোজা ভাষায় বলা যায় দুই নম্বুরী কাজ করার জন্য। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমার টেলিভিশন দেখার খুব একটা সুযোগ হয় না কিন্তু নভেম্বরের ৩ তারিখ রাত্রিবেলা আল জাজিরায় বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উপর একটা অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ হয়েছিল। সেখানে অন্যান্যদের সাথে জামাতে ইসলামীর আইনজীবি টবি ক্যাডম্যান বক্তব্য রাখছিল। সে বলল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যা হয়েছিল এখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল জামাতে ইসলামী স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল এসবই ঠিক আছে। কিন্তু - টবি ক্যাডম্যান এই "কিন্তু" শব্দটা উচ্চারণ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যে কী পরিমাণ নিম্নমানের এবং কী পরিমাণ অগ্রহণযোগ্য তার বিস্তারিত বর্ণনা দিতে শুরু করল। আমাদের ভাষায় যদি "কিন্তু" শব্দটা না থাকতো তাহলে কী সে এই দুই নম্বুরী কাজটা করতে পারতো? ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আর তার পদলেহী জামাতে ইসলামীর রাজাকার আলবদর বাহিনী মিলে এই দেশে কী নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে সেই কথাটুকু বলে তার বক্তব্য শেষ করে ফেলতে হতো। তাকে বলতে হতো এই দেশকে কলংকমুক্ত করতে হলে তাদের বিচার করতেই হবে। চল্লিশ বছর পরে হলেও করতে হবে। শুধুমাত্র "কিন্তু" শব্দটার জন্য সারা পৃথিবীর যত প্রতারক এবং যত ভন্ড মানুষ আছে তারা প্রথমে ভালো ভালো কথা বলে শেষে দুই নম্বুরী কথা বলতে শুরু করে। তবে টবি ক্যাডম্যানের কথা আলাদা, তাকে জামাতে ইসলামী টাকা দিয়ে এইসব কথা বলার জন্যে ভাড়া করেছে, তাকে এই কথাগুলো বলতেই হবে। তার পরেও কথাগুলো উচ্চারণ করতে গিয়ে তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল - একটু পরে পরে তার পানি (কিংবা অন্য কিছু) খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিতে হচ্ছিল!
.
শুধু জামাতের ভাড়া করা সাদা চামড়ার মানুষ নয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করার পর ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলোকেও এই "কিন্তু" মার্কা কথা বলতে শুনেছি। তারা প্রথমে বলে, অবশ্যকই এই নৃশংস গণ হত্যার বিচার করতে হবে, তারপর একটু দম নিয়ে বলে "কিন্তু", তারপর "গরুর রচনা" (অর্থাত আন্তর্জাতিক মানের বিচার হতে হবে) শুরু করে দেয়। আমাদের ষোল কোটি মানুষের দেশে কতো কিছুই তো আন্তর্জাতিক মানের নয় - লেখাপড়া আন্তর্জাতিক মানের নয় (প্রশ্ন ফাঁস হয়, দুই হাতে গোল্ডেন ফাইভ বিতরণ করা হয়), চিকিৎসা আন্তর্জাতিক মানের নয় (টাকা না দিলে চিকিৎসা শুরু হয় না, বিল শোধ না করলে মৃতদেহ আটকে রাখা হয়), ইলেকট্রিসিটি আন্তর্জাতিক মানের নয় (সারা দেশের গ্রীড ফেল করে দশ ঘন্টা পুরো দেশ অন্ধকার হয়ে থাকে), নিরাপত্তা বাহিনী আন্তর্জাতিক মানের নয় (র্যাব টাকা খেয়ে সাতজনকে খুন করে ফেলে), এমন কী টয়লেট পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মানের নয় (হাই কমোড নেই ফ্লাশ নেই), কিন্তু ইউরোপ আমেরিকার সেসব কিছু নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই, তাদের একমাত্র মাথা ব্যাথা একাত্তরের কিছু নৃশংস খুনীদের বিচারের বেলায়। এর আগেওতো এই দেশে কতো বিচার হয়েছে, চুরি ডাকাতী রাহাজানি থেকে শুরু করে খুন ধর্ষন কিছুই তো বাদ যায়নি। তখন তো কোন দেশকে বলতে শুনিনি এই দেশে অপরধীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়ে যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক মানের বিচার হচ্ছে না। আমাদের দেশের সেই একই বিচার ব্যাবস্থা যখন পুরোপুরি এই দেশের আইনে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছে তখন হঠাৎ করে তাদের মনে পড়ল যে বিচার আন্তর্জাতিক মানের হচ্ছে না।
.
আমরা এখন সবাই জানি ব্যপারটা কেমন করে ঘটেছে। শুধুমাত্র আমেরিকাতে জামাতে ইসলামী ২৫ মিলিওন ডলার খরচ করেছে সেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ মানুষকে নিজের দিকে টেনে নেয়ার জন্যে । পত্রপত্রিকায় এর উপর বিশাল রিপোর্ট বের হয়েছে, পড়ে বমি করে দিতে ইচ্ছে করে। টাকা দিয়ে অনেক কিছু কেনা যায় (ডলার হলে আরেকটু ভালো হয়), কিন্তু একাত্তর নির্যাতিত মানুষের বুকের ক্ষোভকে পৃথিবীর কোনো অর্থ দিয়ে কেনা যায় না। যতদিন এই দেশের মানুষ এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করে মাতৃভূমির কলংক মোচন করতে চাইবে ততদিন বাইরের কোন শক্তি আমাদের ব্যাপারে নাক গলাতে পারবে না। আমি সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের কাছে কৃতজ্ঞ, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে কৃতজ্ঞ এবং আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে কৃতজ্ঞ যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়টি তীব্রভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে।
.
সবচেয়ে বেশী কৃতজ্ঞ এই সরকারের কাছে, যারা আমাদের কথা দিয়েছিল যে নির্বাচিত হলে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে এবং তারা তাদের কথা রেখেছে।
২.
সিলেটে কৃষিকাজে ব্যবহার করার জন্যে যন্ত্রপাতি তৈরি করার একটা ফ্যাক্টরি আছে, বেশ কয়েক বছর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সেই ফ্যাক্টরি থেকে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তাদের ফ্যাক্টরিটা দেখার জন্যে। আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখতে গিয়েছিলাম, আমাদের দেশের একেবারে নিজস্ব প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি যন্ত্রপাতিগুলো দেখে আমার খুব ভালো লেগেছিল। ফ্যাক্টরির মালিক কর্মকর্তারাও আমাকে সবকিছু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন। চলে আসার আগে তারা তাদের ‘ভিজিটার্স বুক’ বের করে নিয়ে আমাকে অনুরোধ করলেন তাদের উদ্দেশে কিছু একটা লিখে দিতে। আমি আমার কথাগুলো লিখে স্বাক্ষর করার আগে থমকে গেলাম, আমার ঠিক আগে বাংলাদেশের সেই সময়কার শিল্পমন্ত্রীর নিজের হাতের স্বাক্ষর, স্পষ্ট অক্ষরে তার নাম লেখা, মতিউর রহমান নিজামী।
.
আমি কলমটি কিছুক্ষণ ধরে রেখে আমার নিজের নামটি স্বাক্ষর করলাম। তীব্র এক ধরনের অপমান বোধ আমাকে গ্রাস করে রেখেছিল, যে মানুষটি বদরবাহিনীর প্রধান হয়ে এই দেশে পৃথিবীর ভয়াবহতম হত্যাযজ্ঞের সহযোগিতা করেছে তাকে এই দেশের মন্ত্রী করে তার গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ এই মানুষটি বাংলাদেশের জন্মলগ্নে গলা টিপে এই দেশটিকে হত্যা করতে চেয়েছিল। এর চাইতে বড় দুঃখ, লজ্জা, গ্লানি, অপমান কী হতে পারে!
.
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হবার পর অনেকদিন পার হয়ে গেছে, সবাই যেরকম দ্রুত একটা বিচার দেখতে চাইছিল ঠিক সেভাবে বিচার হচ্ছিল না বলে অনেকের ভেতর এক ধরনের হতাশার জন্ম হচ্ছিল। কোনো একটা অজ্ঞাত কারণে অনেকের ধারণা আমি বুঝি অনেক ভেতরের খবর জানি, তাই আমার সাথে দেখা হলেই অনেকে জানতে চাইতো কী হচ্ছে? আসলেই কি যুদ্ধাপরাধীর বিচার শেষ হবে?—ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি তখন তাদের পাল্টা প্রশ্ন করতাম, তাদের কি জামায়াত-বিএনপি আমলের সেই জোট সরকারের কথা মনে আছে যখন দুই দুইজন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সেই সরকারের মন্ত্রী ছিল? যারা তাদের গাড়িতে এই দেশের পতাকা উড়িয়ে ঘুরে বেড়াতো? যারা প্রশ্ন করেন তারা সবাই মাথা নেড়ে স্বীকার করেন যে, হ্যাঁ তাদের সবারই সেই অবিশ্বাস্য দিনগুলোর কথা মনে আছে। তখন আমি তাদের জিজ্ঞেস করি তারা কি তখন কল্পনা করেছিলেন যে একদিন সব যুদ্ধাপরাধী গ্রেপ্তার হয়ে জেলে বসে থাকবে, একজন একজন করে তাদের বিচার করা হবে? (মনে আছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ঘোষণা দিয়েছিল তাকে স্পর্শ করা হলেই সমগ্র চট্টগ্রামে আগুন লেগে যাবে। কোথায় সেই আগুন?), গোলাম আযমকে যখন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছিল তখন সবাই মন খারাপ করেছিল। এখন কি আমরা বলতে পারি না এই দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে এই দেশে থেকে যাওয়ার জন্যেই তাকে ধরে জেলখানায় রাখা সম্ভব হয়েছিল? যুদ্ধাপরাধীর শাস্তি পেয়ে তাকে জেলখানায় মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই কলঙ্কমোচনের কাহিনী আজীবনের জন্যে লেখা হয়ে গেল!
.
যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে সরকারের সদিচ্ছার ওপর সন্দেহ প্রকাশ করেন তারা সবাই কিন্তু স্বীকার করতে বাধ্য হন জামায়াত-বিএনপির জোট সরকারের আমলে তারা কেউ কল্পনা করেননি সত্যি সত্যি এই দেশের মাটিতে আমাদের জীবদ্দশায় তাদের বিচার শুরু হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে যাদের মনে হতাশা সন্দেহ এবং অবিশ্বাস ছিল গত কয়েকদিনের বিচারের রায় দেখে তাদের সেই হতাশা, সন্দেহ এবং অবিশ্বাস অনেকটুকুই কেটে গেছে। আমরা এখন নিশ্চিতভাবে জানি আর কখনোই আমাদের সেই অন্ধকার দিনগুলোতে ফিরে যেতে হবে না।
.
৩.
একটা সময় ছিল যখন দেশদ্রোহী যুদ্ধাপরাধীরা এই দেশে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াতো। একজন আমাকে বলেছেন যে সেই সময়ে নাকি কিছু রাজাকার একাত্তরে তাদের বকেয়া বেতনের জন্যে সরকারের কাছে আবেদন করেছিল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর খালেদা জিয়া বেশ অনেকবার সেটাকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি চেয়েছেন।
.
ইদানীং সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। একজন যুদ্ধাপরাধীর রায় বের হবার পর বিএনপি আর তাদের মুক্তির কথা বলে না। দেশের অন্যসব মানুষের মতো গ্লানিমুক্তির আনন্দ উপভোগ করতে পারে না, আবার সেটি নিয়ে তাদের আপত্তিটুকুও প্রকাশ করতে পারে না। গোলাম আযমের জানাজায় বিএনপির কোনো নেতা হাজির থাকার সাহস করেনি; যিনি হাজির ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর হিসেবে তার উপস্থিতি নিশ্চয়ই একটা তামাশার মতো ছিল! গোলাম আযমের ছেলে বিষয়টি নিয়ে খুবই ক্ষুব্ধ, দেশের সেরা দেশোদ্রোহীর সন্তান হওয়ার চাপ নিশ্চয়ই খুব বেশি, সেই চাপেই সম্ভবত তিনি বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন যে জামাতের সাহায্য ছাড়া বিএনপি কখনো ক্ষমতায় যেতে পারবে না। তার এই চ্যালেঞ্জটি কী জামায়াতের শক্তির কথা বলেছে নাকি বিএনপি এর দুর্বলতার কথা বলেছে আমি বুঝতে পারিনি।
.
রাজনীতির জটিল হিসাব আমি বুঝি না, কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের হিসাব আমি খুব ভালো করে বুঝি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে দেশটাকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছিল। তখন পাঠ্যবই, রেডিও টেলিভিশন বা মিডিয়াতে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা হতো না, দেশদ্রোহী রাজাকারদের নৃশংসতার কথা বলা হতো না। সে সময় এই দেশে একটা বিভ্রান্ত প্রজন্মের জন্ম হয়েছিল, সে কারণেই জামায়াতকে সঙ্গী করে বিএনপি নির্বাচনে জিতে আসতে পেরেছিল। আমার হিসাবে জামায়াতকে নিয়ে জোট করাটি ছিল এই দেশের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য। আমি তখন নূতন দেশে ফিরে এসেছি, জামায়াতকে নিয়ে জোট করার পর তখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের ছেলেদের হাহাকারের কথা আমি কোনোদিন ভুলব না।
.
তারপর অনেকদিন কেটে গেছে, এই দেশে নূতন প্রজন্ম এসেছে, তারা মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনে বড় হয়েছে, নিজের দেশের জন্যে তাদের বুক ভরা ভালোবাসা, দেশ নিয়ে তাদের স্বপ্ন, তাদের অহংকার। এই নূতন প্রজন্মের দেশপ্রেমের ভেতর যুদ্ধাপরাধীদের কিংবা যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতে ইসলামের কোনো জায়গা নেই। এক যুগ আগে নির্বাচনে যেটা সম্ভব হয়েছিল ভবিষ্যতে আর কখনো সেটা সম্ভব হবে না!
.
এই দেশের মানুষ হিসেবে আমরা খুব বেশি কিছু চাই না। আমরা চাই সরকারি এবং বিরোধী দল দুটিই হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল! একটা কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্যে আমি একবার শেরপুরের সোহাগপুরে গিয়েছিলাম, আমি তখন বিধবাপল্লীর সেই বিধবাদের দেখেছিলাম। আমার মাও সেই দুঃখীনি বিধবাদের মতো একজন দুঃখীনি হিসেবে তাঁর জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। আমি তাদের বুকের ভেতরকার কষ্ট আর হাহাকারের কথা জানি, তাদের ক্ষোভটুকু অনুভব করতে পারি। যে দেশের বাতাস এরকম অসংখ্য মায়ের দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে আছে সেই দেশে একটি রাজনৈতিক দল হত্যাকারীদের নিয়ে রাজনীতি করবে সেটি হতে পারে না।
.
বিধবাপল্লীর বিধবাদের অভিশাপ থেকে চল্লিশ বছরেও যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামান মুক্তি পায়নি- অন্যেরাও পাবে না।
.
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
৫.১১.২০১৪
|
![]() |
.
এতীমের ব্যাপারে আল্লাহ বার বার কোরআনে বিশেষভাবে সহানুভূতি দেখিয়েছেন এবং এদের সম্পত্তি কোনভাবেই যেন অন্য কেও ভোগ না করে তার জন্য বার বার নির্দেশ দিয়েছেন।
।
অথচ সেই এতীমের টাকা যদি খালেদা বা তারেকের খেয়ে ফেলায় পরিণত হয় বা প্রমাণিত হয় তবে সেটা হবে বিএনপির জন্য আজাব। কোন আজাবে আজ খালেদা বা তারেকের এই অবস্থা তা এখন দেখার পালা।
|
![]() |
আইজি নির্বাচনে যোগ্য লোক সমাজ পরিবর্তন করে দিতে পারে।
।
পত্রিকায় দেখলাম এক ডিআইজির ছেলেকে এক এস আই ধরে নিয়ে গেছে থানায়। ডিআইজির স্ত্রী ৪০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। পরে অবশ্য ঘটনা জানাজানি হবার পর এস আইকে ক্লোজ করা হয়। অন্য এক ঘটনার কথা লিখেছে প্রথম আলো সহ আরো কয়েকটি পত্রিকা। এবারও এক এস আই। পরকীয়া করে বেড়ায় অন্যের স্ত্রীর সঙ্গে । কুলটা স্ত্রীর হতভাগ্য স্বামী মৃদু আপত্তি করায় এস আইটি সেই স্বামী বেচারার পায়ে গুলি করে তাকে সন্ত্রাসী মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। সালাউদ্দিন নামের এক ওসির কুকর্ম দেখাচ্ছে কয়েকটি চ্যানেলে। বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে সে নাকি লোকজনকে থানায় ধরে আনে এবং মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে মামলায় জড়ানোর ভয় দেখিয়ে। আমি এক ওসিকে চিনি। সে তার থানা এলাকায় এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে ৩/৪ জন সন্ত্রাসীকে। এসব সন্ত্রাসীরা ১২/১৪ টি হোন্ডা নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ব্যবসায়ী, ধনাঢ্য লোকজন এবং প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে গন্ডগোল শুরু করে। ওসি তার দলবল নিয়ে কাছাকাছি লুকিয়ে থাকে । তারপর ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়ে টার্গেট লোককে নিয়ে যায় থানায়। মোটা অংকের টাকা দিলে ছেড়ে দেয়া হয়। আর টাকা না পেলে ৩/৪ মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
.
মাঠ পর্যায়ের পুলিশের বাড়াবাড়ি এবং দূর্বৃত্তপনার বিষয়ে প্রতিকার পাওয়া তো দুরের কথা অভিযোগ শোনার কোন লোক নেই। কেউ যদি দয়া করে শোনেনও কিন্তু ব্যবস্থা গ্রহনের কোন ক্ষমতা রাখেন না। একজন সম্মানীত রাজনৈতিক নেতা তার এলাকার ওসির বিষয়ে অভিযোগ দেবার জন্য এসপির কাছে ফোন করলেন। ২/৩ ঘন্টা ধরে কয়েকশবার চেষ্টা করার পরও এসপি ফোন ধরলেন না। এরপর ভদ্রলোক ভয়ে ভয়ে ডিআইজির কাছে ফোন করলেন। ডিআইজি বেশ সম্মান ও তাজিম সহকারে নেতা ভদ্রলোকের ফোনটি রিসিভ করলেন এবং এ কথা শুনে খুবই আশ্চর্য হলেন যে গত ২/৩ ঘন্টা এক নাগাড়ে ফোন করার পরও এসপি ফোন ধরেননি। তিনি ফোনকারী নেতার নিকট নিজের বীরত্ব জাহির করতে গিয়ে বললেন-স্যার! কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন আমি এখনই এসপিকে বলছি। এত্তোবড় সাহস! ও আপনার ফোন ধরে না। দাঁড়ান দেখাচ্ছি মজা । ও ই আপনাকে ফোন ব্যাক করবে। নেতা মনের আনন্দে সিগারেট ধরালেন। প্রায় ৩০ মিনিট চলে গেলো- এসপি ফোন করে না। এরপর নেতা নিজেই আবার বেহায়ার মতো ফোন দিলেন। এবারও এসপি সাহেব ধরলেন না। নেতা মনের দুঃখে ঠোঁট কামড়াতে কামড়াতে ডি আইজিকে আবার ফোন দিলো। ডি আইজি বললেন- স্যার আমি তো চেষ্টা করলাম ! ও যে কেনো আপনার ফোন ধরছে না তার আগামাথা কিছুই বুঝছিনা। আমি দুঃখিত! দ্যাখেন স্যার! আমি একজন ডিআইজি হয়ে আপনার ফোন ধরি অথচ . . . . . জাদা আপনার মতো সম্মানীত মানুষের ফোনই রিসিভ করেনা। দেশটার হলো কি ? মান সম্মান বোধ কি উঠে গেলো নাকি . . . .।
আমার পরিচিত নেতাটি বেশ প্রভাবশালী এবং সারা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অত্যন্ত পরিচিত নাম। তিনি বিষয়টি পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা এবং মন্ত্রনালয়ে আলাপ করলেন। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কথাবার্তা শুনে তিনি আরো হতাশ হলেন। সবারই একই কথা - আর কয়টা দিন অপেক্ষা করুন। নতুন ডিআইজি নিয়োগ হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি ভদ্রলোকের কথা শোনার পর আশ্চর্য হলাম না। কারন পুলিশের বর্তমান সমস্যা নিয়ে কমবেশী আমারও কিছু জানা শোনা আছে। মাঠ পর্যায়ের সমস্যা দিনকে দিন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। অন্যদিকে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের প্রায় সকল সদস্যই অপেক্ষা করছে নতুন আইজির মনোনয়নের জন্য। কিন্তু কে হতে যাচ্ছে নতুন আইজি!
.
কে কখন কবে আইজি হবেন- আজকের লেখার প্রতিপাদ্য কিন্তু সেটা নয়। আজকের বিষয়বস্তু ছিলো পুলিশে অস্থিরতা এবং স্থবিরতার প্রসঙ্গ। সেই ২০০৯ সাল থেকে আজ অবধি বিভিন্ন পরিস্থিতি এবং প্রেক্ষাপটের কারনে পুলিশ বাহিনী নানাবিধ সমস্যার জালে আটকা পড়ে গেছে। এসব সমস্যা বাড়তে বাড়তে একদম আইজি পর্যন্ত এসে ঠেকেছে। এই অবস্থায় একজন দক্ষ এবং যোগ্য আইজি নিয়োগ দিয়ে বুলেট আকারে- বাহিনীটির সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা না করলে সরকার এক মারাত্মক বিপদে পড়বে।
|
![]() |
শেখ হাসিনা, আপনাকে ধন্যবাদ- মাহফুজ আনাম
.
এটা কোনো প্রতিশোধ নয়। কোনো ধরনের উচিত শিক্ষাও নয়। এটা হিসেব-নিকেষের দর কষাকষিও নয়। যদি বলা হয় রাজনীতি, তবে তাও নয়। এর মাধ্যমে ন্যায় বিচারের বহিঃপ্রকাশ ঘটলো। এর মাধ্যমে সেই রাজনৈতিক নেতাদের বিচারের আওতায় আনা হলো যারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। এটিতে ন্যায় বিচার ও স্বচ্ছতার ষোলকলা পূর্ণতা পেল। চূড়ান্ত বিশ্লেষণে বলা যায়, বিচারটির মাধ্যমে সর্বোচ্চ আইন প্রতিষ্ঠা ও মানবিক অধিকারের মূল্যায়ন হয়েছে, যে শিক্ষা আমরা আন্তরের গভীর থেকে পেয়েছি।
.
মতিউর রহমান নিজামীর শাস্তি সাধারণ কোনো বিষয় নয়। তিনি আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিপক্ষে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নিজামী মানবতাবিরোধী কাজ করেছেন। আর এ অপরাধের দায়েই তাকে সাধারণভাবেই মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেয়া হয়েছে। এ রায়টি এমন একজনের বিরুদ্ধে দেয়া হলো ১৯৭১ সালে সালে যার বয়স ছিল ২৮, সব দিক থেকে যাকে বলা যায় প্রাপ্ত বয়স্ক। নিজামী নিজের ইচ্ছায় সে সময় তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের বাঙালিদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তিনি খুন, ধর্ষণ, গণহত্যা, নির্যাতনসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপারাধে লিপ্ত হন।
.
কারো মৃত্যুদণ্ডে সাধারণত আনন্দ প্রকাশ করাটা আমরা মানবিক বিবেচনা করি না। কিন্তু এ মামলার ক্ষেত্রে আমরা আনন্দিত কারণ নিজামীর সন্ত্রাসের হিংস্রতা, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যায় অংশ নেয়া পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে তার ব্যাপক সহযোগিতা, আমাদের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়া, তিনি তার কর্মকাণ্ডে অনুতপ্ত হননি কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ন্যূনতম দুঃখবোধও প্রকাশ করেননি।
.
স্বাধীন বাংলাদেশে নিজামীর মন্ত্রী হওয়ার বিষয়ে ট্রাইবুনাল তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছে, ‘‘নিজামীর মন্ত্রী হওয়া স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর চপেটাঘাত। এটা দেশের সব শহীদদের গায়ে চপেটাঘাতেরও শামিল।’’ আমরা একটা বিষয় বুঝে উঠতে পারছি না। বিএনপির মতো একটি দল এবং তার নেতা বেগম খালেদা জিয়া কেন ইতিহাসের এ বিষয়টাতে অন্যমনস্ক। তারা জনগণের মনোভাবের প্রতি সহানুভূতিশীল না হয়ে, শহীদদের স্মৃতির প্রতি অশ্রদ্ধাশীল হয়ে, আল বদর এর প্রধান, অপরাধের শীর্ষ সহযোগীকে মন্ত্রিসভায় স্থান করে দিয়েছিল। স্পষ্টতই বোঝা যায়, বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়া আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খুব কমই চিন্তা করেন। আর ৭১ এর গণহত্যা তাদের কাছে তেমন কোনো বিষয় নয়।
.
আমরা তার (শেখ হাসিনার) অনেক অভিযোগের সঙ্গে একমত না। তবে তিনি যখন বলেন আমি ছাড়া এই যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল বাস্তবায়িত হতো না, তখন কোনো ধরনের সন্দেহ ছাড়া তা মেনে নিই। আমরা মনে করি, এ বিষয়টাতে তিনি সঠিক অবস্থানে রয়েছেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নিরাপদে থাকার সুযোগ করে দিয়েছিলেন, তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগী এবং মন্ত্রিপরিষদেও স্থান করে দেন। এরশাদও ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের বিচারে কোনো আগ্রহ দেখাননি। তিনিও তার মন্ত্রিসভায় যুদ্ধাপরাধীদের জায়গা করে দিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে জোট সরকার গঠন করেছেন এবং তাদের মধ্যে বিতর্কিত দুই নেতাকে মন্ত্রিসভায় স্থান করে দেন। আর এটি ছিল দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আরেকটা উপহাস।
.
যাই হোক, সব দিক সামনে রেখে বিচার করলে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইস্যুতে আওয়ামী লীগের অবস্থান আর এ বিষয়ে শেখ হাসিনার দৃঢ়তা বিচার প্রক্রিয়াটিকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। আর এটি হচ্ছে প্রকৃত সাহসিকতার উদাহরণ এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের শ্রদ্ধার প্রতি সম্মান। আমরা এখনো মনে করতে পারি, যখন প্রধান যুদ্ধাপরাধীরা বড় কোনো সমাবেশে যেত সেখানে দাম্ভিকতার সঙ্গে যেত। আর সেখানে কোনো মুক্তিযোদ্ধা দেখলে গর্বে বুক ফুলিয়ে আমি রাজাকার বলতে দ্বিধা করতো না। তারা একদিন বিচারের মুখোমুখি হবে এটা লাখো মানুষের স্বপ্ন ছিল, যারা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। একজন মুক্তিযোদ্ধা লেখক হিসেবে লাখো মানুষের সঙ্গে আমিও নিজামীকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য কৃতজ্ঞচিত্তে মাথা নত করে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। শেখ হাসিনা, আপনাকে ধন্যবাদ।
|
![]() |
জামাত-শিবিরই বড় নাস্তিক – প্রমাণিত
.
মতিউর রহমান নিজামী এবং তার দল জামায়াতে ইসলামী ইসলাম কায়েমের কথা বলে থাকে। তারা যখন-তখন ইসলামের দোহাই দেয় এবং নিজেদের ইসলামের সাচ্চা অনুসারী দাবি করে। দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে তারা 'বিধর্মী ও নাস্তিক' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু তারা নিজেরাই কখনও ইসলামের আদর্শ ও বিধিবিধান অনুসরণে আন্তরিক নয়। এর অনেক প্রমাণ আমরা উপস্থাপন করতে পারি। গোলাম আযম ও মতিউর রহমান নিজামী ইসলামের নাম নিয়ে রাজনীতি করেন। তাদের দলের নাম জামায়াতে ইসলামী। ইসলাম পবিত্র ধর্ম। একটি দলের নামের সঙ্গে এই শব্দ জুড়ে দেওয়া অনুচিত। এটা তারা জেনেবুঝেই করেছে। তারা চায় জনগণকে বিভ্রান্ত করতে। ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। উদার ও পরমতসহিষ্ণুতা শেখায় এ ধর্ম। এ ধর্ম থেকে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের নির্দেশনা মেলে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী ধর্মের নামে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে। হানাহানি ও সংঘাত সৃষ্টির প্ররোচনা দেয়। তারা ইসলামের নামে একটি অশান্তির মডেল তুলে ধরছে। এর ফলে শুধু আমাদের দেশে নয়, অন্য দেশের মানুষের মধ্যেও এ ধর্ম সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।
.
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধ। আমাদের পবিত্র ধর্ম কেবল এ ধর্মে বিশ্বাস স্থাপনকারীদের জন্য নয়, গোটা মানবজাতিকেই মুক্তির পথ দেখায়। আমাদের ধর্মের প্রবর্তক হজরত মুহাম্মদ (সা.) মানবিক মূল্যবোধের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক ও উদার মনের মানুষ। তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সর্বকালের সব মানুষের জন্য অনুসরণীয়। পরমতসহিষ্ণু ছিলেন তিনি। মদিনা সনদ ও বিদায় হজের বাণী মানবজাতির জন্য অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়।
.
তৃতীয়ত, জামায়াতে ইসলামী ইসলামের নামে রাজনীতি করে বলে দাবি করে। কিন্তু আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন বলেছে, কেউ যদি একজন মানুষকেও হত্যা করে, সে যেন পুরো মানবজাতিকে হত্যা করেছে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা এক বা দু'জনকে নয়, অগণিত নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যা করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে সংশ্লিষ্ট থাকার অজস্র অভিযোগ। দিনের পর দিন তারা হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে। এরা সবাই ছিল নিরপরাধ। একই সঙ্গে তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকেও গণহত্যায় সহযোগিতা করেছে। তারা লুণ্ঠন ও ধর্ষণের মতো অপরাধেও অভিযুক্ত। তাদের কর্মকাণ্ড ইসলামের আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ গুরুতর অপরাধের জন্য তাদের মধ্যে কোনো অনুতাপ ও অনুশোচনাবোধও নেই। তারা কখনও দেশবাসীর কাছে এ জন্য ক্ষমা চায়নি। এখনও তারা যে রাজনীতি করছে, সেখানেও তারা হানাহানি-বিভেদকে উস্কে দিচ্ছে।
.
চতুর্থত, তারা যে অপরাধ করেছে, সে জন্য বিচারের সম্মুখীন হতেই হতো। অনেক দিন নানাবিধ কারণে বিচার বিলম্বিত হয়েছে। প্রচলিত আইনে তাদের বিচার হয়েছে। কিন্তু যে ধর্মীয় আদর্শের কথা তারা জোর গলায় বলে থাকে, তার মানদণ্ডেও বিচার এড়ানোর কোনো সুযোগ তাদের নেই।
.
ইসলাম ধর্মের বিধানে বলা আছে, একজন মানুষ অন্য কোনো মানুষের যতটা ক্ষতি করবে, ঠিক ততটা শাস্তি তার প্রাপ্য। এটাকে কিসাস বলা হয়। হাতের বদলে হাত, চোখের বদলে চোখ এবং প্রাণের বদলে প্রাণ। জামায়াতে ইসলামীর নেতারা ১৯৭১ সালে কত লোকের জীবন নিয়েছে, তার হিসাব করা কঠিন। তারা খুন করেছে প্রকাশ্যে। হাত-পা কেটে ফেলা নয়, যাকে খুশি তাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। এমনকি শিশুদেরও তারা নৃশংসভাবে খুন করেছে। তাদের অনেক নেতাকর্মী প্রত্যেকেই অনেক মানুষকে হত্যা করেছে। এর বিচার করার বিধান ধর্মেই বলা আছে। আমাদের দেশের বিদ্যমান আইনেও তার নির্দেশনা রয়েছে। এ থেকে নিষ্কৃতি লাভের কোনো সুযোগ জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের নেই।
.
ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন
সহযোগী অধ্যাপক, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
|
![]() |
পাকিস্তানী বংশধর পাকিস্তান চায় - বাংলায় এত সাহস কোথায় পায়????
.
৪৩ বছরে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতায় আর প্রশ্রয়ে পাকিস্তানি ধ্যানধারণার মানুষ বাংলাদেশে জ্যামিতিক হারে বেড়েছে। আমার এক গুরুজন আছেন। তিনি প্রায়ই বলে থাকেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১০ কোটি। অবাক হয়ে তাঁর কাছে জানতে চাই, বাকিদের কী হলো? তার সহজ উত্তর, ‘আরে বোকা, ওই বাকিরা তো পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত।’ গোলাম আযমকাণ্ড থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি কিছু শিখবে, তেমন একটা আশা করি না। সহকর্মী ড. মুনতাসীর মামুনের বক্তব্য দিয়েই শেষ করি। তিনি প্রায়ই বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু একটি অনিচ্ছুক জাতিকে স্বাধীনতা দিয়ে গিয়েছিলেন।’ তার বড় প্রমাণ বাংলাদেশের গোলাম আযমের শান্তিতে মরণ ও লাখো শহীদের রক্তবিধৌত এই বাংলার মাটিতে তাঁর শেষ কৃত্যানুষ্ঠান আর তাঁর দাফন। ৩০ লাখ শহীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা ছাড়া আর কী করতে পারি?
.
আবদুল মান্নান: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
|
![]() |
মুক্তিযোদ্ধা সনদ এবং কোঠা বাণিজ্যের প্রামাণ্যচিত্র –
৯৪% জনগণ সেই সার্টিফিকেট পাবার বৈধ অধিকারী।
-----------------------------------------------------------------------------------------
আজ যাদের বয়স ৫০ বছরের কম, তারা গেরিলা যুদ্ধকে সম্মুখ যুদ্ধ ভেবে ভুল করবে, এটাই স্বাভাবিক। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধা সম্বন্ধে কিছু জানতে চাইলে, দু’দলের দু’ধরণের কিম্বা কোনো সনদ ক্রেতা-বিক্রেতার সন্তানের রচিত পক্ষপাতসমৃদ্ধ ইতিহাসের বইয়ের উপর নির্ভর না-করে, বরং ৫৩বছরের উর্ধে বয়স যাদের এবং যারা সক্রিয়ভাবে কোনো দলের অন্ধ ভক্ত নয়, তাদের মুখ থেকে জেনে নেওয়াটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আবারও স্মরণীয়, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কখনোই কোনো পানিপথ, আকাশপথ কিম্বা রণক্ষেত্রের যুদ্ধ ছিল না। সুদীর্ঘ নয় মাসের ঐ যুদ্ধে, ঝোপঝাড়ে আত্মগোপন করে থেকে, যেকোনোখানে হানাদারদেরকে ব্যারাকের বাইরে বিচ্ছিন্নভাবে বিপাকে পাওয়ামাত্র আক্রমণ করাটাই ছিল মূল কৌশল। আর এতে জনগণের আন্তরিক এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল জন্যেই সুসংগঠিত একটা সামরিক বাহিনীকে নাকানি-চুবানি খাওয়ানো সম্ভব হয়েছিল।
.
এদেশকে হানাদারমুক্ত করার জন্য ৯৪% জনগণ প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। যার বেশির ভাগটাই ছিল নিরস্ত্র, এবং তাদেরকেই বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়েছিল দেশের ভিতরে অর্থাৎ যুদ্ধক্ষেত্রে। এই নিরস্ত্ররাই অস্ত্রধারী মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সার্বিক শক্তির যোগান দিয়েছিল, তাই সাভারের অস্ত্রধারী মুক্তিযোদ্ধাটিও সান্তাহারে সঠিকভাবে হানাদারকে নিশানায় ফেলতে পেরেছিল।
.
যথার্থেই যদি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, তাহলে ০৬% (রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তিবাহিনী ইত্যাদি) বাদ দিয়ে বাকি ৯৪% জনগণ সেই সার্টিফিকেট পাবার বৈধ অধিকারী।
.
এখনে হাস্যকর এটাই যে, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদেরকেও এখানে বাধ্য হয়ে মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী শুনে যেতে হচ্ছে এমন কারো বর্ণনায়, যারা তখনও জন্মায়নি, কিম্বা জন্মালেও যারা ছিল ঐ যুদ্ধের সময়ে সর্ব্বোচ্চ সাড়ে তিন বছরের সদ্য কোলছাড়া শিশু।
|
![]() |
নেতিবাচক ও বিভাজনের রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে হবে তরুণ সমাজকে।
.
ক্ষমতার স্বাদ ও অর্থের নেশায় বিভ্রান্ত আমাদের তরুণ সমাজের একাংশ। এ অংশ ক্ষুদ্র হলেও সমাজে দারুণভাবে প্রভাব ফেলতে সক্ষম, কারণ এরা রাজনৈতিক দলের মদদপুষ্ট হয়ে নিজেদের প্রভাব বিস্তার ও বলয় সৃষ্টিতে রত। যুবসমাজের মধ্য থেকেই দেশের সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্ব গড়ে ওঠার কথা অথচ যে অবস্থানে বর্তমানে আমাদের তরুণ সমাজ রয়েছে, তাতে নেতিবাচক ধারণা জন্মানো স্বাভাবিক।
.
ছাত্রসংগঠনগুলোকে ব্যবহার করা হয় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে। বৃহৎ দলগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্রসংগঠনগুলোও রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির আবর্তে পড়েছে। বিভাজনের রাজনীতির মধ্যে অন্ধভাবে দলের অনুসরণ করতে গিয়ে নিজেদের স্বকীয়তা হারিয়েছে। হারিয়েছে অতীতের ছাত্ররাজনীতি অথবা যুব রাজনীতির পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি। দলের লেজুড়বৃত্তি করতে করতে বহু জায়গায় নৈতিক স্খলন হয়েছে। অর্থ, ক্ষমতা আর জবরদখল এখন তরুণ দলগুলোর লক্ষ্য।
.
তরুণদের উদ্যোগে গঠিত গণজাগরণ মঞ্চকে রাজনৈতিক গ্রাসে পরিণত হতে দেশবাসী দেখেছে। একদা যাদেরকে পুলিশের প্রহরায় সমাবেশ ও চলাফেরা করতে দেখা গেছে, তাদের অনেককেই এখন প্রধান নেতাসহ পুলিশের প্রহার হজম করতে দেখা যায়। এটাই বাস্তবতা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার পরিণতি এখন ওই মঞ্চের বেশির ভাগ তরুণকে বলা যায় ‘না ঘরকা না ঘাটকা’ (ঘরেরও না আবার ঘাটেরও না)।
.
আমরা আমাদের যুবসমাজকে ১৯৫২, ১৯৬৯ ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের মতো দেখতে চাই। রাজনৈতিক ফায়দা আর বৈষয়িক সুবিধাদি প্রাপ্তির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেখতে চাই না। তরুণ সমাজকে জাতীয় ঐক্যের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সমষ্টিগতভাবে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ী এবং স্বকীয় সত্তা বিকাশের আঙ্গিকে দেখতে চাই। আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে, তা নির্ভর করবে আমাদের তরুণ সমাজের মনমানসিকতা আর নৈতিক মূল্যবোধের ওপর। কারও দ্বারা প্রভাবিত বা ব্যবহৃত হয়ে দিগ্ভ্রষ্ট হলে জাতির ভবিষ্যৎ সংকটময় হবে। সে কারণেই রাজনৈতিক ঘুরপাকে নিমজ্জিত তরুণ সমাজের কাছে অনুরোধ যে তারা যেন লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি বাদ দিয়ে স্বকীয়তা ও নৈতিকতার ভিত্তিতে নিজেদের চলার পথ বেছে নেয়। তা না হলে আমরা যে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছি, তা স্বপ্নই থেকে যাবে। যে তরুণ সমাজ তাদের অগ্রজ সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মান দেখাতে পারে না, একদিন তাদের এ ধরনের অসম্মানের মুখোমুখি হতে হবে।
.
দেশের রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে মুক্তচিন্তা ও মননের তরুণ সমাজ গড়ে তুলতে না পারলে একটি জাতি বিকশিত হতে পারে না। তরুণেরাই রাষ্ট্রের শক্তি, এদের সঠিক পথে পরিচালিত না করতে পারলে তার খেসারত সমগ্র জাতিকেই দিতে হবে। পরিশেষে দেশের মুক্তচিন্তাশীলদের কাছে অনুরোধ, আমাদের তরুণ প্রজন্মকে তাদের মতো করে বেড়ে উঠতে সহযোগিতা করুন। এটা আমাদের সবার দায়িত্ব। নেতিবাচক ও বিভাজনের রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে হবে তরুণ সমাজকে।
এম সাখাওয়াত হোসেন:
|
![]() |
.
ভাষা–মতিন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পেলেন না, রাষ্ট্রটি কার?
.
১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের প্রধান ছাত্রনেতা হিসেবে স্বীকৃত প্রবাদপুরুষ আবদুল মতিন ৮ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৪৮ সালের প্রথম ভাষা আন্দোলনের সময়েই ২৪ মার্চের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের কনভোকেশনের ভাষণে পাকিস্তানের বড় লাট মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করা হবে, কথাটা উচ্চারণের পর পর মতিনের কণ্ঠ থেকেই প্রথম উচ্চকণ্ঠের প্রতিবাদ ‘নো নো’ ধ্বনিত হয়েছিল। আবার ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সরকার ঘোষিত ১৪৪ ধারা না ভাঙার পক্ষে ১১-৩ সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্ত অমান্য করার পক্ষে অবস্থান গ্রহণকারী ছাত্রদেরও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই আবদুল মতিন। পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলার ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার সভায় ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্তটিই পাস হয়েছিল তাঁর জ্বালাময়ী ভাষণের প্রভাবে, এটুকুও ইতিহাস। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ সময়টায় ভাষা আন্দোলনকে উদ্দীপ্ত রাখার জন্য তাঁর সাধনার স্বীকৃতি হিসেবেই ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির আগেই তিনি ‘ভাষা–মতিন’ নামে অভিহিত হয়েছিলেন, যে নামে তিনি আজীবন বাংলাদেশের আপামর জনগণের পরম শ্রদ্ধাভাজন নেতার আসনে অভিষিক্ত ছিলেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনই যেহেতু বাঙালি জাতির স্বাধীনতাসংগ্রামের সূতিকাগার, তাই ভাষা–মতিন স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্যতম রূপকার। তাঁকে মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে অপারগতা এই রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের ব্যর্থতা ও সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচায়ক বলে মনে করি।
.
কিন্তু আবদুল মতিন তো জাতির সঙ্গে কিংবা মেহনতি জনগণের সঙ্গে কখনোই বেইমানি করেননি। এই জাতিকে সারা জীবন শুধু দিয়েই গেছেন, কিছুই নেননি। লোভের কাছে কখনোই পরাস্ত হননি। এমনকি মৃত্যুর পর নিজের দেহ ও চোখ দুটোকে পর্যন্ত দান করে দিয়ে গেলেন মানবকল্যাণে। স্বাধীনতার এই অন্যতম রূপকারকে ‘রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের সুযোগ এখনো আছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে মতিনের জন্য একটি স্মরণসভা আয়োজনের মাধ্যমে ভুল সংশোধনের জন্য আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। একই সঙ্গে তাঁর স্মৃতিকে ধারণ করার জন্য দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে তাঁর নামে উৎসর্গ করার প্রস্তাব করছি।
.
ড. মইনুল ইসলাম: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।
|
![]() |
.
অগণতান্ত্রিকতার জন্য সরকারকে জবাবদিহি করা উচিৎ
।
দেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বরেণ্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী, সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষক, পত্রিকার সম্পাদক, কলামিস্ট ও আইনজীবীসহ নয় বিশিষ্টজনকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
।
যারা অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে একাট্টা। কিন্তু যারা গণতন্ত্রের জন্য, জনগণের অধিকারের কথা কথা বলে, সংগ্রাম করে তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার মাধ্যমে তারা শহীদ মিনারকেই ফ্যাসিবাদের প্রতীক এবং দিল্লির বেদিতে পরিণত করেছে। দেশের জনগণ এটা মেনে নেবে না।
।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. তুহিন মালিক বলেছেন, সংবিধানের মৌলিক অধিকারে দেশের যে কোনো স্থানে নাগরিকের প্রবেশ করার অধিকার রয়েছে। যদি আইনে মাধ্যমে ঐ স্থানে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা না থাকে। কিন্তু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কোনো নাগরিক প্রবেশ অধিকার থাকবে, আর থাকবে না এটা কোনো আইন দ্বারা নিষিদ্ধ করা হয়নি। তাহলে জনগণের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী এ আচরণ যা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের মদদে প্রকাশ্যভাবে ঘোষণা দিয়েছে। এটা শুধু ফৌজদারী শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয় বরং তা সংবিধানের মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন অবমাননার শামিল। যা ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের ৭ (ক অনুচ্ছেদে সংযোজিত করে বলা হয় যে, যে বা যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে এবং এটাকে সহযোগিতা করবে উভয়েই মৃত্যুদ-তুল্য শাস্তি পাবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের উচিত সংবিধান অবমাননাকারীদের গ্রেফতার করা।
|
![]() |
লোকবল নিয়োগ দিলেই ভাগ কমে যাবে – নিয়োগের দরকার নাই
।
২৪ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে সরকার। ওই কমিটিকে সরকারের শূন্য পদ পূরণ, আবশ্যকীয় নতুন পদ সৃজন এবং এসব পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য সুপারিশ প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়। অথচ ওই কমিটি দুইবার তাগাদাপত্র দেয়ার পরও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর যথেষ্ট সাড়া মেলেনি। ফলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে শূন্য ২ লাখ ২৮ হাজার ২৫৬টি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া আগের মতোই থমকে আছে।
ভূমি প্রশাসন : প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় সবচেয়ে বেশি অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাট চলছে এই প্রশাসনে। জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি), কানুনগো এবং সার্ভেয়ার পদের অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৩ হাজার ৬৯২। কর্মরত আছেন ২ হাজার ২৪৩ জন। আর পদ শূন্য রয়েছে ১ হাজার ৪৪৯টি। অর্থাৎ, অনুমোদিত পদের ৩৯ শতাংশই শূন্য।
অথচ ৮ বছর আগে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও এখন পর্যন্ত মৌখিকের ডাক পাননি কানুনগো পদের ১২ হাজার চাকরিপ্রত্যাশী।
.
বাংলাদেশ রেলওয়ে : লোকবল সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশ রেলওয়ের সাড়ে ৪ হাজার একর জমি বেদখল হয়ে গেছে। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রাম অঞ্চলেরই প্রায় ৫২৬ একর জমিতে প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছে। দখল হয়ে যাওয়া এই জমির মূল্য বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি বলে জানা গেছে। রেলওয়ের হিসাব মতে, এসব জমিতে গড়ে ওঠা ১০ হাজার ৩৬১টি বস্তিতে অবৈধ দখলদারের রয়েছে ১৩ হাজার ৩৩১ জন। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনদের দাবি, লোকবল সঙ্কটের কারণে দখল হয়ে যাওয়া এই বিশাল ভূমি উদ্ধার করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বেদখলের নানা রকম তথ্য অনুসন্ধানে ভিন্ন চিত্র বেরিয়ে এসেছে। জানা গেছে, অধিকাংশ দখলদারের কাছ থেকে রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিয়মিত আর্থিক সুবিধা ভোগ করছেন। আর এই অপকর্ম সহজতর করতে তারা সব সময়ই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সহায়তা নিচ্ছেন। দখলদার চক্রের নেপথ্য মদদদাতা হিসেবে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনেকের নাম বেরিয়ে এসেছে।
।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর : সারাদেশে মাদকদ্রব্য সহজলভ্য পণ্যে পরিণত হলেও এর তদারকি প্রতিষ্ঠান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পুরোপুরি বেহাল দশা। জনবল সঙ্কট, মাদকদ্রব্য উদ্ধারে কৌশলের অভাব এবং প্রশিক্ষিত জনবল না থাকায় তারা মাদক নির্মূলে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না বলে এই প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।
।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয় : এই মন্ত্রণালয়ের আবাসন পরিদপ্তরের বাড়ি ও ফ্ল্যাট মিলিয়ে ৫১টি সরকারি সম্পত্তিতে অবৈধ দখলদাররা বছরের পর বছর বসবাস করে আসছেন। সরকারের খাতায় তাদের অবৈধ দখলদার এবং বসবাসকারী হিসেবে উল্লেখ করা হলেও এ ব্যাপারে দায়েরকৃত মামলা নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। সংশ্লিষ্ট আইন বিভাগ মামলা পরিচালনা করছে, কিন্তু এর ভবিষ্যৎ কী_ এ সম্পর্কে কিছু বলতে পারছে না। এমনকি কোনো কোনো মামলার নথিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আবাসন পরিদপ্তরের একটি সংঘবদ্ধ চক্র এবং লিগ্যাল উইংয়ের দীর্ঘসূত্রতার কারণে সরকারের এসব শতকোটি টাকার সম্পত্তি অন্যের দখলে রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবাসন পরিদপ্তরের পরিত্যক্ত বাড়ি শাখা সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদপুরে পূর্ণাঙ্গ বাড়ির সংখ্যা ১০টি, ফ্ল্যাট ২৫টি; ধানম-িতে পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ৪টি, ফ্ল্যাট ২টি এবং লালমাটিয়ায় পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ৩টি। এছাড়া মনিপুরীপাড়ায় পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ১টি, নাখালপাড়ায় ১টি, আজিমপুরে ১টি, নয়া পল্টনে ১টি, মগবাজারে ১টি এবং এলিফ্যান্ট রোডে ১টিসহ মোট ৫১টি বাড়ি ও ফ্ল্যাট নিয়ে বিভিন্ন আদালতে মামলা চলছে। মামলাগুলো ১৯৮৫ সাল থেকে শুরু করে চলতি বছরের মধ্যে দায়ের করা হয়েছে। এই সমস্যার সমাধান না হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইন বিভাগের লোকবল সঙ্কটের দোহাই দিলেও খোঁজ নিয়ে ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, আবাসন অধিদপ্তরের একটি চক্রের কারণেই সরকারের সম্পত্তি বেহাত হতে চলেছে। তাদের অনেকেই দখলদার চক্রের কাছ থেকে এককালীন আর্থিক সুবিধার বাইরে মাসোহারাও গ্রহণ করছে।
।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড : জানা গেছে, ছোট-বড় সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই রাজস্ব বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের গোপন যোগসাজশ রয়েছে। সেখান থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা নিয়মিত মাসোহারা তুলছেন। বিশেষ করে যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিক্রীত পণ্যের ওপর ভ্যাট প্রযোজ্য, সেসব প্রতিষ্ঠানের মাঠ কর্মকর্তারা নিয়মিত অবৈধ আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন। এ কারণে ভ্যাট আদায়ে রাজস্ব বোর্ড কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পেঁৗছতে ব্যর্থ হচ্ছে।
|
![]() |
অশিক্ষিত লোকরা দেশ চালাচ্ছে, শিক্ষিত লোকরা ফেসবুক চালাচ্ছে - ডঃ তুহিন মালিক
|
![]() |
আমাদের বহু লক্ষণ হলো টোটেমের লক্ষণ, জাতির লক্ষণ নয়।
.
আমাদের কাজ কি নোংরা করে রাখা, আর সিটি করপোরেশনের কাজ সেগুলো পরিষ্কার করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করা। গাড়িতে যখন যাই, চিনাবাদাম বা কলার খোসাটা গাড়িতে যদি কেউ ফেলে, আরেকজন তাকে বকুনি লাগায়, এই, রাস্তায় ফেলতে পারলি না! রাস্তাঘাট আমাদের ডাস্টবিন। আমরা রাস্তাঘাট, ফুটপাত নোংরা করবই। আমাদের কাজ নোংরা করা। আর তোমাদের কাজ সেটা পরিষ্কার করা। আমরা কোনো দিনও নাগরিক ভব্যতা শিখব না, যদিও আমাদের গাড়ির দাম কোটি টাকা, বাড়ির দাম কয়েক কোটি। আমরা গাড়ি ধোব রাস্তায়, পিচের প্রধান শত্রু পানি, বাড়ির সামনের রাস্তা খানাখন্দে ভরে যাবে, যাক, ওটা তো আমার নয়, গাড়িটা আমার, বাড়িটা আমার!
.
এই জীবনে চলার পথে নারীর ভালো লাগবে পুরুষকে, পুরুষের পছন্দ হবে কোনো নারীকে। তার মানেই প্রেমে রাজি হতে হবে, বিয়েতে রাজি হতে হবে, তা তো নয়। তাই বলে আক্রমণ করে বসতে হবে ওই নারীটিকে, বা শিশুটিকে, তাকে উত্ত্যক্ত করতে হবে, হয়রানি করতে হবে, আক্রমণ করতে হবে, নির্যাতন করতে হবে, দেখে নিতে হবে, অ্যাসিড মারতে হবে, আগুন দিতে হবে, গায়ের ওপরে মোটরসাইকেল তুলে দিতে হবে—এই বর্বরতা, এই পাশবিকতা কেন?
.
নারীকে সম্মান করতে পারতে হবে। কোনো সম্পর্কই তো জোর করে স্থাপিত হয় না, প্রেম-বিয়ে তো নয়ই। আমরা তো বিশ্বাসই করি, জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে আল্লাহর হাতে। আমরা তো বলিই, হাজার কথার নিচে বিয়ে হয় না। আমি জানি না, কবে এই উন্মত্ত জিঘাংসু পুরুষ পশুদের হাত থেকে সমাজ রক্ষা পাবে, কী করলে পাবে। নারীকে সম্মান জানানো, তাঁর কাজকে স্বীকৃতি জানানো নিশ্চয়ই সমাধানের পথে এক ধাপ অগ্রগতি। আর চাই আইনের শাসন। আর চাই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
সমাজের সর্বত্রই তো দেখি অসহিষ্ণুতা। কারও ভিন্নমত আমরা সহ্য করি না। ধরা যাক, একজন একটা ভুল কথা বলেছেন, অন্যায় কথা বলেছেন, সঙ্গে সঙ্গে আরেকজন বলছেন, তার মাথা কেটে নাও। আরেকজন বলছেন, ও কেন মাথা কাটার কথা বলবে, ওরই মাথা কেটে ফেলো। মাথা কাটার চেয়ে কম মাত্রার কোনো প্রতিবিধান আমরা ভাবতেই পারছি না। আমরা সামষ্টিক হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছি না তো? আমাদের বহু লক্ষণ হলো টোটেমের লক্ষণ, জাতির লক্ষণ নয়। রবীন্দ্রনাথ তো বহু আগেই বলে রেখেছেন, ‘রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি।’ আমাদের আচার-আচরণে সেই না-মানুষ কিংবা অমানুষের আস্ফালন। মানবিক বোধ-বিবেচনা-বুদ্ধির কোনো বালাই যেন আমাদের থাকতে নেই।
......উইথ আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
|
![]() |
.
একাডেমিক জীবনের বাইরের শিক্ষাই অনেক সময় প্রকৃত শিক্ষা।
.
অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদের মতো কয়েকজন উজান স্রোতের যাত্রী মিহি গলায় বলতে থাকেন, সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে, মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন হচ্ছে না আর কোয়ালিটি এডুকেশন বলতেও কিছু থাকছে না। ফল ভালো করে বের হচ্ছে যারা, তারা আদৌ কিছু শিখছে কি? একই প্রশ্ন সর্বত্র। স্কুলে যাচ্ছে বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশের বেশি ছেলেমেয়ে, তারা শিখছেটা কী? প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হওয়া ছেলেমেয়েকে দেখা যাচ্ছে বাংলা পড়তে পারে না, লিখতে পারে না, অঙ্ক পারে না, ইংরেজির কথা নাহয় না-ই বা হলো।
.
আমরা জেনে গেছি, এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রায় ৮০ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাসই করতে পারেনি। এটা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতার কথা হচ্ছে না। কারণ, পরীক্ষাটা প্রতিযোগিতামূলক, সবাই ভালো করলেও সবাইকে ভর্তি নেওয়া সম্ভব হবে না কোনোভাবেই, হচ্ছে পরীক্ষায় ন্যূনতম একটা পাস মার্কস অর্জনের কথা। ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল বিপর্যয় আরও মারাত্মক, ১০ জনের নয়জনই ফেল। পাস করেছে মাত্র একজন। অথচ এই ছেলেমেয়েদের বেশির ভাগই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক দুই পরীক্ষাতেই জিপিএ–৫ পেয়েছে।
.
লেখাপড়া শহরকেন্দ্রিক হয়ে গেছে এবং হয়ে গেছে বাণিজ্যকেন্দ্রিক। কোচিং আর প্রাইভেট টিউটরের ব্যবসা চলছে। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। এই টিউটরদের হাত থেকে, কোচিং ব্যবসা থেকে বাঁচতে শিক্ষাবিদেরা নতুন পদ্ধতির প্রবর্তন করলেন। সৃজনশীল পদ্ধতি। যাতে শিক্ষার্থীদের মুখস্থ করতে না হয়, যাতে তাদের কোচিং সেন্টারে যেতে না হয়, টিউটরের মুখাপেক্ষী হতে না হয়। কর্তারা আর কতটা সৃজনশীল! আমাদের কোচিং সেন্টার এবং কোনো কোনো শিক্ষক তার চেয়েও সৃজনশীল। ছাত্রছাত্রীদের কাছে সৃজনশীল পদ্ধতিটাকে তারা এক বিভীষিকা হিসেবে হাজির করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রশ্ন কী হবে আর সেটার উত্তর কী হবে, সেটা কেবল জানি আমি। কাজেই আমার কাছে পড়তে এসো। শিক্ষক কিংবা কোচিং ক্লাস যেভাবে উত্তর লেখা শেখাবে, হুবহু সেটাই পরীক্ষার খাতায় উগরে আসতে হবে, তা না হলে সৃজনশীলে তুমি পাবে গোল্লা।
.
আছে মাল্টিপল চয়েস প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। প্রথম দিকে করা হলো প্রশ্নব্যাংক। ৫০০ প্রশ্ন আগে থেকেই দেওয়া থাকে। ছেলেমেয়েরা উত্তর শিখে যায়। জিপিএ ফাইভের প্রাচুর্যের সেই শুরু। তারপর প্রশ্নব্যাংক তুলে দেওয়া হলো। শিক্ষার্থীরা পথে নামল, ভাঙচুর করল। এখন প্রশ্নব্যাংক নেই, তবে এমসিকিউ আছে। কৌতুক প্রচলিত আছে, জিজ্ঞেস করা হলো, তোমার বাবার নাম কী? ছেলে বলে, আপনি চারটা নাম বলুন, অপশন দিন, আমি টিক দিয়ে দিচ্ছি।
গোদের ওপর বিষফোড়া।
.
প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়াকে যদি আমরা চলতে দিই, সামনের বার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ৫ শতাংশও পাস করতে পারবে না। কারণ, সারা বছর ছেলেমেয়েরা পড়বে না। পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র খুঁজে ফিরবে। সত্য হোক, মিথ্যা হোক, কিছু একটা তারা হাতে পাবেই। সেটা শিখে যাবে, যদি মেলে তাহলে জিপিএ ফাইভ, না মিললে ফেল। কিন্তু কেন কষ্ট করে সারাটা বছর তারা পড়াশোনা করবে?
.
আসল কথা হলো, যোগ্যতা অর্জন, নিজের গুণগুলোকে প্রকাশ করা, মানুষের মতো মানুষ হওয়া, দেশের জন্য, সভ্যতার জন্য কিছু করা। আমাদের শিক্ষার্থীদের বলব, তোমরা হতাশ হয়ো না। তোমরা নিজে থেকেই পড়ো। জানার চেষ্টা করো। মানুষ হওয়ার চেষ্টা করো।প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেয়ে তোমরা নোবেল জয়ী গবেষক হও, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-শিক্ষক হও, ব্যবসায়ী হও, না পেলেও দুশ্চিন্তা কোরো না, সারাটা জীবনই শেখা যায়, পড়া যায়, একাডেমিক জীবনের বাইরের শিক্ষাই অনেক সময় প্রকৃত শিক্ষা।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
|
![]() |
রাজনীতিবিদের সন্তানরা রাজনীতি না করেই রাজনীতিবিদ হয়ে যায়।
ছাত্ররাজনীতি রাজনীতিবিদদের অস্ত্র কেন্ত্র । - রিপন
।
এ দেশে একটা সময় ছাত্রসংগঠনগুলো ছিল স্বাধীন। অনেক ছাত্রসংগঠন জাতীয়ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের সমর্থক ও সহযাত্রী হলেও তাদের মধ্যে সম্পর্ক হতো অনানুষ্ঠানিক। যেমন ছাত্রলীগ ছিল আওয়ামী লীগের সহগামী। অন্যদিকে ছাত্র ইউনিয়ন ছিল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সহযোগী। বিপত্তি বাধায় জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন। ষাটের দশকের মাঝামাঝি এই সংগঠনটিকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খান নিজের পকেটে পুরে ফেলেন। ক্যাম্পাসে যদি একটি সংগঠন সরকারের পেটোয়া বাহিনী হয়ে যায়, তখন আর সুস্থ রাজনীতি থাকে না। জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন বা এনএসএফ এ দেশের ছাত্ররাজনীতিতে যে ধারার প্রবর্তন করেছিল, পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ একই ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। ১৯৭৩ সালে ডাকসুর ব্যালট বাক্স ছিনতাই করার মধ্য দিয়ে তারা কুদৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। পরবর্তী সময়ে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও শিক্ষাঙ্গনে জবরদখলের ধারা বজায় রাখে। জিয়াউর রহমানের সেনাশাসনে একটা পরিবর্তন আনা হয়েছিল। তখন রাজনৈতিক দলবিধি জারি করা হয় এবং ছাত্রসংগঠনগুলোকে রাজনৈতিক দলগুলোর শাখা হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে হয়েছিল। সেই ট্র্যাডিশন চলছে এখনো।
.
এ দেশে যখন নিয়মিত ছাত্র সংসদের নির্বাচন হতো, তখন যে সব সময় সত্যিকার ছাত্ররাই নির্বাচিত হতেন, তা নয়। অনেকেই নির্বাচন করার জন্য বছরের পর বছর ছাত্র থেকে যেতেন। একটা উদাহরণ দিই। মাহমুদুর রহমান মান্না ঢাকা কলেজে আমার এক ক্লাস ওপরে পড়তেন। ওবায়দুল কাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার দুই বছর সিনিয়র ছিলেন। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব শেষ করার পাঁচ বছর পরেও দেখেছি তাঁরা দোর্দণ্ড প্রতাপে ছাত্রত্ব বজায় রেখে চলেছেন এবং ডাকসুর নির্বাচন করেছেন। এটাও ছাত্রসংগঠনগুলোর একধরনের দেউলিয়াপনা।
.
পাঠ্যক্রমের বাইরে নানা সৃজনশীল কাজের মধ্যে থেকেও একজন ছাত্র নানা গুণের অধিকারী হতে পারেন। এখানে আমি আরেকটা উদাহরণ দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছি না। হ্ুমায়ূন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সিনিয়র ছাত্র ছিলেন। তাঁকে জীবনে কোনো দিন কোনো মিটিং-মিছিলে অংশ নিতে দেখিনি। ইউনিভার্সিটির হলের করিডরে মিছিল হলে অনেক ‘ভালো ছাত্র’ দরজা বন্ধ করে বাতি নিভিয়ে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতেন, যাতে অন্যরা তাঁদের মিছিলে যাওয়ার জন্য টানাটানি না করেন। হ্ুমায়ূন ছিলেন ওই রকম একজন ছাত্র। রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে লেখাপড়ার ক্ষতি হোক, এটা তিনি চাইতেন না। পরে তিনি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হতে পেরেছিলেন। আর ওই সময়ের অনেক সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মী এখনো ভবঘুরের মতো জীবনযাপন করেন।
.
যাঁরা প্রবল প্রতাপে রাজনীতির মাঠ কাঁপিয়েছেন বা এখনো কাঁপাচ্ছেন, ব্যতিক্রম বাদে তাঁরা কেউই সন্তানদের ছাত্ররাজনীতিতে আনেননি। তাঁরা সময় ও সুযোগমতো তাঁদের সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়ে দেন ‘উচ্চশিক্ষা’ নিতে, অথবা দেশেই রেখে দেন ব্যবসাপাতি করার জন্য। যখন সময় হয়, যখন তাঁদের শরীর-স্বাস্থ্যে কুলোয় না কিংবা যখন তাঁরা ইন্তেকাল করেন, তখন তাঁদের সুযোগ্য সন্তানেরা উত্তরাধিকার সূত্রে মা-বাবার নির্বাচনী এলাকাটির মালিকানা পেয়ে যান। যেসব নেতা-নেত্রী ছাত্ররাজনীতির ‘নোংরা কাদা’ তাঁদের সন্তানদের গায়ে লাগতে দেন না, তাঁরা তাঁদের রাজনীতিতে কামানের খোরাক হিসেবে ব্যবহার করেন অন্যের সন্তানদের। এই প্রবণতা ডান, বাম, মধ্য সব রঙের রাজনীতিকদের মধ্যেই দেখা যায়।
.
একটা সময় ছিল, যখন এ দেশে শিল্পকারখানা ছিল না, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তেমন একটা গড়ে ওঠেনি, একমাত্র আইন ব্যবসাই ছিল রাজনীতিকদের প্রধান পেশা। তাই রাজনীতিকদের মধ্যে আইন ব্যবসায়ীর ছড়াছড়ি দেখা যেত। সময় বদলে গেছে। এখন যাঁরা ইট-পাথর কিংবা আলু-পটোলের ব্যবসা করেন, তাঁরাও রাজনীতিতে আসছেন। এটাকে অনেক আইন ব্যবসায়ী বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ার নমুনা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ইট-পাথর-আলু-পটোল ব্যবসায়ীদেরও যুক্তি আছে। তাঁরা মনে করেন, তাঁদের চাঁদায় যদি অন্যরা রাজনীতি করেন, পার্লামেন্টে আস্তিন গুটিয়ে হাঁকডাক করতে পারেন, তাহলে তাঁরাই বা পিছিয়ে থাকবেন কেন? প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এটাই তো স্বাভাবিক।
আমাদের দেশে রাজনীতি অন্যান্য শিল্প-ব্যবসার মতোই এখন একটি লাভজনক বিনিয়োগ।
.
মহিউদ্দিন আহমদ: লেখক ও গবেষক।
mohi2005@gmail.com
https://www.youtube.com/watch?v=q8ERK8yYXAo
If you are the site owner, please renew your premium subscription or contact support.