|
![]() |
বাবাদের ভালবাসা বোঝা যায়না
.
ছোটবেলায় "বাবা কেন চাকর" ছবিটি দেখেছি আমরা সবাই।বাবার চরিত্রটি রাজ্জাক অপরুপ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিল।সব অপমান অবহেলা সহ্য করে সন্তানের সুখের জন্য অবলীলায় সুখী মানুষের অভিনয় করে গেছে।
.
আমাদের বাস্তব চরিত্রের বাবাগুলাও খুব ভালো অভিনেতা।চোখের সামনে দক্ষ অভিনেতার মত দিনের পরদিন অভিনয় করে যাচ্ছে।
.
অফিসের কলিগ রা যখন উইকেন্ডে পাশের কোন দামী রেস্তরাঁয় একসাথে লাঞ্চ করতে যাচ্ছে কোন এক বাবা লজ্জালজ্জা মুখ করে বলে ফেলে,"আরে গতকাল রাত থেকে প্রচুর গ্যাসফর্ম করছে,এই অবস্থায় বাইরের খাবার খাওয়া কি ঠিক হবে??আসল গ্যাসফর্ম পেটে নয় বাবার মস্তিষ্কে হচ্ছে।সকাল হলেই ছেলেটা একশ টাকা চাইবে।বাচ্চা মানুষ, কলেজে বন্ধুবান্ধব আছে।দু এক টাকা ত হাত খরচ লাগবেই।
.
এ মাসে ডাক্তার দুটো টেস্ট দিয়েছে।দু তিন বার চেকাপে যেতেও বলেছে।কিন্তু এই মাসেই ত মেয়েটার সেমিস্টার ফি দিতে হবে।ব্যাস বাবাদের আর চেকাপে যাওয়া হয়না,টেস্ট ও করানো হয়না।"আমি বুড়ো মানুষ রোগ বালাই ত লেগেই থাকবে,তাই বলে মেয়েটার পড়ালেখাটা ত বন্ধ হতে পারেনা।ওর অনেক আশা,ও অনেক বড় হবে।
.
বাবাগুলা এমনি হয়,সারাজীবন মনে মনে নিজেকে সান্তনা দিয়ে যায়।অভিজ্ঞ অভিনেতার মত অবলীলায় অভিনয় করে যায়। আবেগ অনুভুতি গুলোকে বোবা করে রাখে।
.
মেয়ের বিয়ে শেষ।শ্বশুর বাড়ি চলে যাচ্ছে একদিনের সেই ছোট্ট পরীটা।বাবার বুক ফেটে কান্না আসে।তবু চেপে যায়।মেয়ে যখন বাবাকে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে চশমার ফাকে বাবার ছলছলে চোখগুলো সান্তনা দেয় নিজেকে।মেয়ে আমার খুব সুখী হবে।মেয়ে চলে যাওয়ার পর বাবার বুক টা ছ্যাত করে উঠে,খালি খালি লাগে ঘরটা তবুও গভীর রাতে দেয়ালে ঝোলানো মেয়ের ছবির দিকে তাকিয়ে নিজেকে সান্তনা দেয়,"এই যে আমার মেয়ে আমার ঘরেই ত আছে।
.
বাবাদের ভালবাসা বোঝা যায়না তবে কতটা মমতা আর স্নেহ দিয়ে ঘিরে রাখছে তার সন্তান কে গভীর ভাবে বাবার চোখে তাকালে খুব ভাল করে টের পাওয়া যায়।ছেলেটার গীটারের বড় শখ।মধ্যবিত্ত বাবার বিলাসদ্রব্য কেনার সামর্থ্য নেই।তবে বাবাকে এখন আর সিগারেট এ টান দিতে দেখা যায়না,অটো তেও বাবা খুব একটা উঠেনা।আজকাল খুব ভোরেই বাসা থেকে বের হয়।হেটে হেটে আটটার মধ্যে অফিস পৌঁছায়।দিনে পাচ কাপের জায়গায় দু কাপ চা খায়।সামনের মাসেই ত ছেলেটার জন্মদিন।ছেলে ঘুমিয়ে যাওয়ার পর বাবা চুপ করে তার মাথার কাছে নতুন গীটার টা রেখে আসে।সকালে ঘুম থেকে উঠেই গীটার উপহার পেয়ে ছেলেটা নিশ্চই খুব খুশি হবে।সন্তানের ওই আনন্দের হাসিটা একটা বাবার সারা জীবনের সঞ্চয়।
.
বাবা গুলা এমনি হয়। ছেড়া জুতোয় বারবার সেলাই পড়ে তার,গায়ের শার্ট টার রং ধূসর হতে থাকে,হাতের ঘড়িটার এক যুগ পার হয় তবু এরা সুখি মানুষের অভিনয় করে যায় অবলীলায়।ছেলেমেয়ের সুখের জন্য নিজেকে সান্তনা দেয় জীবনভর।
.
আমার বাবাও সব বাবার মতই।নিজের অনুভুতি গুলোকে বোবা করে সারা জীবন আমাদের তিন বোনের কথা ভেবে গেলো।আমার বাবাকে কোন পুজাতেই নতুন জামা কাপড় কিনতে দেখিনি,যদি তার কাপড়ের টাকা টা দিয়ে মেয়েদের প্রসাধনীর স্বাদ টা পুরণ হয়।সারাজীবন কস্ট করল,আর নিজের মহৎ আদর্শ দিয়ে আমাদের বড় করল।
.
আজ বাবার জন্মদিন।গত কিছু বছরে বাবার সাথে একদিন ও কথা বলা হয়নি।বাবা বলে ডাকিনা বহুদিন,বাবার মুখেও আমার নাম টা শুনিনা।সম্পর্ক টায় বেশ দুরত্ব।তবে প্রতি জন্মদিনেই বলতে ইচ্ছা হয়,"শুভ জন্মদিন বাবা"কিন্তু তা আর ঠিক হয়ে উঠে না।
|
![]() |
হিজাব
.
আমি যবে থেকে হিজাব ব্যবহার করা শুরু করেছি তবে থেকে নানান বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে।প্রশ্নটি হচ্ছে আমি একজন হিন্দু মেয়ে হয়ে কেনো হিজাব ব্যবহার করি।উত্তরে যখন বলেছি শুধুমাত্র পরদাশীলতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমি হিজাব পড়ি তখনো আরেক বিভ্রান্তিকর মন্তব্য,এখনকার মেয়েরা স্টাইল করার জন্য হিজাব পড়ে।আর হিন্দু মেয়েদের হিজাব পড়া ধর্মানুভুতিতে আঘাত দেওয়ার মত কাজ।ঘর এবং বাহির দুই জায়গায় বিশাল আলোচনা সমালোচনা উপেক্ষা করেও আমি কলেজ জীবনে টানা দুবছর হিজাব পড়তাম।এটা ১০ সালের ঘটনা।যখনো হিজাব এক্টা ফ্যাশনে পরিণত হয়নি।
.
এখনো আমি হিজাব পড়ি।কিন্তু সেই সমালোচনাকারীদের মুখ কিন্তু বন্ধ করতে পারিনি।কাজেই কোন আত্মীয় বা হিন্দু ছাত্রীর বাসায় ঢুকতে হলে সিড়ি থেকেই আমি হিজাব খুলে তারপর তাদের ঘরে ঢুকি।
.
যাই হোক।একটা ঘটনা শেয়ার করব।কলেজে নিঝুম নামে আমার একটা সুন্দরী বান্ধবী ছিল।সে হিন্দু ধর্মমতে বৈষ্ণব শ্রেণীভুক্ত।প্রথম দিকে সবসময় তার গলায় তুলসীর মালা দেখতাম।সেকেন্ড ইয়ারে উঠার পরপরই দেখেছি সে বোরকা পরে,নেকাব লাগিয়ে কলেজে আসতো।প্রথমে ভেবেছি ধর্মান্তরিত হয়েছে।তবে পরে বোরকা খুললেও গলায় তুলসীর মালা দেখে বুঝতে পারলাম, না সমস্যা অন্য কোথাও।
.
পরবরতীতে জেনেছি এক বখাটে ছেলের উপদ্রবে সে যখন কলেজে আসা বন্ধ করে দিতে চাচ্ছিল।তখন তার মা বাবা তাকে বোরখা পরার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। বুঝতে পারলাম,ঠেলায় পড়লে ঘুঘু ও তার ফাদ দেখায়।সমস্ত ধর্মানুভুতির গায়ে জল ঢেলে হিন্দু মেয়েটির মা বাবা বোরখা পড়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে,যখন কিনা আমাদের সমাজে হিন্দু মেয়েদের মাথায় স্কার্ফ অর্থাৎ হিজাব পড়াটাও সমালোচনার বিষয়।
.
যাই হোক উল্লেখিত বাক্যগুলাতে হিন্দু হিন্দু উচ্চারণ করতে বড় বিরক্ত লাগছিলো।মানুষকে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত করা আমার কাছে মানবতাবিরোধী কাজ মনে হয়।
.
বলতে বাধ্য হলাম কারন এই হিপোক্রেট সমাজব্যবস্থায় একটি মেয়ে অর্ধনগ্ন অবস্থায় চলাফেরা করলেও যতটা সমালোচনা না হয় তার চেয়ে দ্বিগুন সমালোচনা হয় একটা হিন্দু মেয়ে হিজাব পড়লে।এক্টা মেয়ের শালীনতাবোধ কে সমাজের মানুষ রা সাম্প্রদায়িকতা আর ধর্মানুভূতি দ্বারা বিচার করে জেনে খুব খারাপ লাগে।
.
শেষমেশ এটাই বলব,একটা হিন্দু মেয়ে যখন তার মাসতুতো,পিসতুতো ভাইয়ের হাতে ধর্ষিতা হয় তখন কই থাকে এই সমালোচকদের ধর্মানুভুতি?যখন ওই মহিলা সাধু সন্নাসীনিরা শরীরের অর্ধেক কাপড় চোপড় খুইলা সং সাইজা ধর্ম বিক্রি করে তখন কই থাকে আপনাদের ধর্মানুভুতি?যখন হিন্দু কোন মেয়ে পতিতালয়ে শরীর বিক্রি কইরা পংগু স্বামীর চিকিৎসা খরচ চালায় তখন কই থাকে আপ্নাদের ধর্মানুভুতি?
.
শুধুমাত্র হিজাবের বেলায় কোথ থেকে আসে ধরম্প্রীতি?
ধর্মের নামে এসব ভন্ডামি বন্ধ করেন।ধর্মান্ধ যদি হইতে হয় অনুভুতি আর বিশ্বাস দিয়া হন,কুসংস্কার দিয়া না।ধর্মের চোখেও মানবতা বড়
ধর্ম ।
|
![]() |
- দোস্ত ক্যাঙ্কা আছু?
.
ফুড ভিলেজে নেমেই ডাক শুনে পিছনে তাকালাম। দেখি শুভ্র শ্মশ্রু মণ্ডিত এক প্রশান্ত ভদ্রলোক আমার দিকেই হাসিমুখে তাকিয়ে আছেন। কাছে আসতেই বুঝলাম এ হচ্ছে নীরু। আমাদের স্কুলের বাল্য বন্ধু নীরু। ডানপিটে নীরু। যে কোন কারণেই হোক নীরুর সাথে অনেক দিন পরে দেখা।
.
-আছিরে ভালো। তুই ঢাকায় যাচ্ছিস?
-হ্যাঁ, আমি ঢাকাতেই থাকি এখন।
-কী করছিস ঢাকায়?
.
-সকাল সাড়ে ছয়টায় ছোট মেয়েকে কলেজে নিয়ে যাই। ওকে ক্লাসে ঢুকিয়ে দিয়ে বসে থাকি। এর পরে ক্লাস শেষ হলে ওকে নিয়ে বাসায় ফিরি। ওকে খাইয়ে আবার কৌচিং এ নিয়ে যাই।
.
-ব্যাস এই টুকুই? আর কিছু করিস না? আমি বিস্ময়ে প্রশ্ন করি।
-কেন, এই কাজটা কি গুরুত্বপূর্ণ না? নীরু বলে।
আমি একটু লজ্জিত হই।
-আর তোর বড় মেয়ে? ও কত বড়? কী পড়ে?
-ওকে গত বছর বিয়ে দিয়েছি। অ্যামেরিকায় থাকে।
-বলিস কী? তোর মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে? তুই বিয়ে করেছিলি কবে?
এবার নীরু মুখ নিচু করে বলতে থাকে।
.
-কথাটা যতবার বলি, আমার খুব খারাপ লাগে, তারপরেও তোকে বলি, অনেকদিন দেখা হয়নি তোর সাথে তাই হয়তো তোর জানা নাই। ওরা দুজনেই আমার নিজের মেয়ে না। আমার বড় ভাইয়ের মেয়ে। আমার বড় ভাই আর ভাবী দুজনেই যখন মারা যান তখন ওদের একজনের বয়স আট, আরেকজনের বয়স চার বছর। তখন থেকেই নিজের মেয়ের মতো মানুষ করছি।
.
নীরু বলতেই থাকে।
-ওদের জন্যই আমি আর বিয়ে করিনি।
-বলিস কী? এসব ঘটনা তো আজকাল আর সিনেমাতেও দেখা যায়না!!!
.
-হ্যাঁ, করিনি। কেটেই তো যাচ্ছে জীবনটা। তুই তো ভালো ছাত্র ছিলি, হিসাব কর তো, কোনটা দামী, আমার জীবন নাকি ওই দুই শিশু কন্যার জীবন?
.
আমি সত্যিই জানিনা রে নীরু। জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষায় তুই হাসতে হাসতে আমাদের সবাইকে টেক্কা দিয়ে দিলি। আজ বুঝলাম, আমরা তোর কাছে ধূলিকণার চেয়েও ক্ষুদ্র।
|
![]() |
বিপন্ন গণতন্ত্র, লাঞ্ছিত মানবতা, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী?
।
দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সিটে বসে মহিলা বললেন, কেউ ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া; কেউ ক্ষমতায় যেতে মরিয়া। তারা যেভাবে একে অন্যকে আক্রমণ করছেন, দেশের মানুষকে জিম্মি করছেন, তাতে ভয়াবহ বিপদের আসতে বাকী নেই। তার পাশে থাকা এক বৃদ্ধ মহিলা বলেন, বিপদ আসতে বাকী নেই কেন; বিপদ তো চলছেই। ওরা মারামারি করবে, ক্ষমতায় থাকার জন্য অস্থিরতা সৃষ্টি করবে আর আমরা প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মধ্যে কেন থাকব? ঘরে নিরাপত্তা নেই; বাইরেও নিরাপত্তা নেই। ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে বাসায় স্বস্তির থাকতে পারি না। পথে বের হয়েও ভয় লাগে। ঘরেও মানুষ নিরাপদ নয়। দ্রব্যমূল্য এমন পর্যায়ে গেছে স্বাভাবিকভাবে বাজার সদয় করতে পারি না। কোথাও নিরাপত্তা নেই; সর্বত্র অনিশ্চয়তা। আমাদের জীবনের নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নেবে? আমরা কেন আজ অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবন কাটাব? বিপন্ন গণতন্ত্র, লাঞ্ছিত মানবতা, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী?
|
![]() |
কিছু মানুষের অপেক্ষার দিন গুলো বড্ড শুকনো।শুকনো কড়কড়ে বাসি রুটির মত শুকনো।।রুপ,রস,বর্ণহীন।অপেক্ষার কোন শেষ নেই জেনেও সময়,ঘন্টা,মিনিটের হিসাব না রেখেই তারা অপেক্ষা করে।অনন্তকাল ধরে চলে এই অপেক্ষার ঋতু........
.
তবে হাড্ডিসার ছিপছিপে ধরনের সেই উদ্বাস্তু নারীটার অপেক্ষার দিনগুলো রুপ রস বর্ণহীন ছিলোনা। তার অপেক্ষার দিনগুলো যতই কালো হোক না কেন বুকের কোন এক কোণায় হালকা আগুন রঙের এক্টা প্রদীপ সবসময় জ্বলজ্বল করত।
.
যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ ৭২ এ যতগুলো বিহারী ক্যাম্প গড়ে উঠেছিল তার মধ্যে একটি মোহাম্মদপুর মার্কেট সংলগ্ন বিহারী ক্যাম্প।এই ক্যাম্পটির আশেপাশেই ভরসন্ধ্যায় উদ্বাস্তু এই মহিলাটিকে প্রায়ই দেখা যেত।
দেখা যেত ডাস্টবিনের ফেলে দেয়া পচাবাসি খাবার মুখে তুলে নিতে। যত্রতত্র ফেলে দেয়া পরিত্যক্ত কাপড় শরীরে জড়াতে।চোখ গুলো ডেবে গিয়েছিল বলে মুখের গড়ন ও ঠিকঠাক বোঝা যেতনা।সকলে তাকে বিহারী বলে জানলেও মুলত সে ছিল বাঙালি ঘরের বউ।
.
পাকিস্তানি হানাদারেরা তার পরিবারের সবাইকে এ ক্যাম্পে এনে নির্যাতন করেছিল। সবাইকে তার সামনেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। সেই থেকে সে এখানেই পড়ে থাকত।পড়ে থাকে বললে ভুল হবে অপেক্ষায় থাকত। বিহারিদের ভাষা ও জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত করে ফেলেছিল নিজেকে। আর যখনই সময় পেত ক্যাম্পের ঘরে ঘরে উঁকি মারতেন। হয়তো অবচেতন মনে খুঁজে ফিরতেন তার স্বামী-সন্তানদের। আবার ক্লান্ত হয়ে গেলে একমনে বসে কাঁদতেন। কিছু জিজ্ঞেস করলে কাপড়ে মুখ ঢাকতেন।
.
হাতে শাঁখাপলা, নাকে নাকফুল, সিঁথিতে সিঁদুর পড়া জোছনা। এলাকাবাসী সবাই তাকে জোছনা পাগলী বলেই চিনত। তার কাছে কেউ যদি জিজ্ঞেস করত, তুমি কেমন আছো? তখন তিনি পিচঢালা পথে বসে পড়তেন। আর আনমনে বলে যেতন, ‘আমি ভালো নাই গো মা, আমি ভালো নাই।’ ‘আমার স্বামী সেই কবে যুদ্ধে গেছে, এখনো ফেরে নাই। আমি ভালো নাই গো মা, আমি ভালো নাই।’ মাঝে মধ্যে তার আত্মীয়রা এসে তাকে জোর করে নিয়ে যেত।তার স্বামী মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। রণাঙ্গনেই প্রাণ হারান; কিন্তু জোছনাকে তা কেউ বিশ্বাস করাতে পারেনি। সেই অবিশ্বাসই তাকে পথে বসিয়েছিল। করেছিল ওকে রাস্তার পাগলী।তবে অপেক্ষায় ক্লান্ত হয়নি জোছনা।পাবনা পাগলা গারদের বন্ধ ঘরে বসেও মুক্তিযোদ্ধা স্বামীর ফিরে আসার অপেক্ষা করেছিল।
.
ছোটবেলায় মা তার কনিকা দিদির কথা শুনাতেন।নামটি অবশ্য ছদ্মনাম।হুম বরিশাল জেলাতে তার বাড়ি ছিল।সারাটা জীবন নিঃসঙ্গভাবে কাটিয়ে দিয়েছেন। সময় কাটিয়েছেন স্কুলের শিক্ষকতা ও ভাইবোনদের সন্তানের মতো মানুষ করে এবং সময়-সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়তেন অসহায়দের সাহায্যার্থে। কখনোই তাকে কেউ কোনো রঙিন কাপড় বা ন্যূনতম প্রসাধনে মুখ রাঙাতে দেখেনি। এই কণিকা দিদির প্রেমিক ছিলেন বরিশাল শহরের স্বনামধন্য একজন মুক্তিযোদ্ধা। দুজন অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন দেশ স্বাধীন হলেই তাদের বিয়ে হবে; কিন্তু সেই প্রেমিক আর ফিরে আসেননি। তার লাশও কেউ শনাক্ত করতে পারেনি। তাই দিদিও প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, জীবনভর তার প্রেমিকের অপেক্ষায় থাকবেন। যে কারণে আর দিদির বিয়ের পিঁড়িতে বসা হয়নি। আজও হয়ত তিনি অপেক্ষায় আছে তার সেই মুক্তিযোদ্ধা প্রেমিকের ফিরে আসার।যাকে নিয়ে মুক্তমঞ্চে দাড়িয়ে বুক ফুলিয়ে কথা বলার কোন অধিকার নেই,যে সম্পর্কের কোন সামাজিক স্বীকৃতি নেই সেই মানুষ টি আর সেই সম্পরকের একটা অদৃশ্য ছোয়া নিয়ে কাটিয়ে দিল সারাটা জীবন।
.
অপেক্ষার ঋতু গুলো সাদাকালো হলেও রঙিন হয়।চোখের কোণে জল থাকলে মনের ভাজে ভাজে অপেক্ষার হাসি থাকে।ছয়মাসে অপেক্ষার ঋতু পরিবর্তন হয়না।অনন্তকাল ধরে চলে এই অপেক্ষার ঋতু.............
.
নীলাঞ্জনা অধরা
|
![]() |
.
Mom, i had been to a party, you asked me not to have drinks, that is the only reason i did not drink. while rest of my friends got drunk and were enjoying. i only had soda the whole party, i am not complaining but you know what i am very proud of myself.
.
Mom, as per you said don't drink and drive, i followed it.....
.
Even after reaching the party i did not sip in any. My friend forced me to at least have one drink. But i knew very well and was rigid on not having any. i know i have done the right thing. It is because of your love and affection that people appreciate my honesty and say i am responsible and smart.
.
i am on my way, we had lots of fun and i am really very happy!!! But i think the man in other car did not see me and we banged in each other.
.
i can hear the police man shout and he is saying why are you so drunk. But mom why should i pay for his mistake.
.
Mom and Dad i need you guys, why aren't you beside me? Tell me why???
There is something that is wet and red in color. That is my blood flowing out of the body!!!
I can hear the doctor talk. They say i will be no more among you guys.
Mom, is it true, i will be no more???
Will i die???
.
Mom, trust me i swear i did not have even a drop of alcohol. i know who was driving the another car even he was in the party was drinking like crazy. Mom, why do these people drink and kill others???
.
i am in pain help me mom..........................................
.
i feel like someone is poking me with knife continuously. The person who bashed with my car is home sleeping tight and i am in the hospital, counting my heart beats!!!!
.
Mom, do you think it is fair??? Be in your memories. the only last question i want an answer for it, why people drink so much when they know they may lose consciousness.
.
If he could not have got drunk i would have been alive today. I would have been with all you guys laughing and troubling you.
.
Guys please never drink and drive.
|
![]() |
থাপড়াইতে মুন চায়
.
যখন দেখি আশেপাশের মেয়েরা শুধু সাজগোজেই তাদের পুরো মাথা খাটাচ্ছে। ইস্কুলে পড়ুয়া মেয়েদেরও এখন চোখে হালকা কাজল ঠোটে গোলাপী লিপবাম না দিলেই নয়। মেয়ের ফেইসবুক মানেই মুখে চোখে পাউডার রঙ মেখে মাথাটা একটু হালকা বাকিয়ে বেউটিফুল সাবানা মার্কা পোজ। বরই সৌন্দর্য্য। এদের মধ্যে বেশিরভাগই সেজে যাচ্ছে কোনকিছু না ভেবেই এর দীঘমেয়াদি নেগেটিভ প্রভাব এদের ভোতা মাথায় ঢুকছে না ।
.
অনেকে আমার মতো চোখে ঠোটে রঙ মাখতে বাধ্য হচ্ছে। রঙিন টেলিভিশনের যুগে তারা সাদাকালো টেলিভিশন হয়ে আমার মতোন ভার্সিটি অফিসে আড্ডায় অনুষ্ঠানে নিজেদের অবস্থান নিয়ে ভীষণ সংকিত। তারা আমার মতন কোনো ভাবেই পেরে উঠছেনা এই সাজগোজ থেকে রেহাই পেতে। আমি রেহাই চাই। এমন একদিন ও বাদ গেলোনা যখন একদিন কাজল না দিয়ে গেছি কিন্তু শুনতে হয়নি বিভিন্ন কথা। কি শরীর খারাপ নাকি!!! তোমাকে আজ অনেক ক্লান্ত লাগছে!!! রাতে ঘুম হয়নি নাকি!!! পেট খারাপ বুঝি!!! মুখে টমেটো মাখো!!! বাসায় গিয়েই ঘুম দিবে কিন্তু!!! অসহ্য।........................
.
চুপ কর সব। সাজবো না আমি। সাজলেও আমার আসল রূপ তোদের দেখতেই হবে সপ্তাহে অন্তত দুইদিন। দেখিয়েই ছাড়ব আমার চোখের নিচের কালো দাগ। দেখতেই হবে আমার ফাটা ঠোট। দেখতেই হবে আমার বিবর্ণ গাল। দেখতেই হবে আমার উস্কহ চুল। জানতেই হবে যে আমার চুল আমি পার্লার থেকে সোজা করিয়েছি ৫ হাজার টাকা খরচ করিয়ে। কিন্তু অবশ্যই নিজে আয় করা টাকা দিয়ে। আমার সাধ্যের আয় করা টাকা দিয়েই আমি আমার স্বাধ আহ্লাদ পূরণ করি। আমার বাবার টাকা গাড়ি বাড়ি আমার নয়। আমার স্বামীর টাকা আমার নয়। কোনদিন ছিলনা হবেও না।
.
মেয়েদের এসব খরচের হিসাব দেখলে মাথা ঘুড়ে। মাথা ঘুড়ে পরে যাই যখন দেখি একজন মেয়ে তার এই নুন্যতম খরচ নিজে আয় করে বহন করতে চায় না। কি করে একজন ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েও পরজীবী হবার স্বপ্ন দেখে। এটা কিভাবে সম্ভব। এর জন্যে দায়ী ঘরে থাকা পরজীবী বিড়ালী মা, আর নারীর অবস্থান নিয়ে অসচেতন বাবা ভাইয়েরা। তারা যৌতুক দেবে তারা মেয়েকে কেরোসিনে জলতে দিবে গলায় দড়ি দিয়ে মরতে দিতে প্রস্তুত কিন্তু মেয়েকে সাবলম্বী করবেন না। নিজের কলিজার ধন এর জন্যে আশেপাশের অসুস্থ্য পরিবেশ দৃষ্টি ভঙ্গি বদলাতে কাজ করবেন না। নিজে পরজীবী কিনে বউ করেছেন। মেয়ে বোন কেও পরজীবী করে তাদেরও বেচবেন।
.
ভার্সিটি পাস আর যেই পাস হোক ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়া হোক সব মেয়েকে। নিজের টা নিজে করে খাক। নিজের পথ নিজেই করে নিক। কিন্তু তাতো পুরুষেরা করবেন না। নিজের যৌনতার কামে কন্ট্রোল নাই কিন্তু তারা নারীকে ভুলিয়ে ভালিয়ে কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তার ভয় দেখিয়ে বস্তা পরাবেন মাথায় ঘুমটা হিজাব করাবেন নিজের উথিত শিশ্নের সাদা বীর্যের সব মিথ্যা হাজার গুনগান রচনা করে নারীকে দাসী করে বসিয়ে রাখবেন। ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন শুধু ফেইসবুক আর পর্নো পেজ কসতে কিন্তু মানুষ তৈরিতে মার শরীরই যে একমাত্র শেষ নিয়ামক মানুষ সৃষ্টির জন্যে এই নুন্যতম সাধারণ জ্ঞানটি পর্যন্ত মাথায় ঢুকাবেন না। ওই সাদা বীর্যের মধ্যে হাবুডুবু খাবেন আর খিস্তি গাইবেন যে ইশ খাওয়াই পড়াই নিরাপত্তা দেই বড় করি আরো কত কি। নিজেই পা ভেঙ্গে পঙ্গু বানায় ভিক্ষা করতে বাধ্য করবি আবার হাটতে পারিস না ভিক্ষা করতে হয় বলে হাসি তামাশা করবি।
.
কিছু বিড়ালি নারীকে তদের বশে এনে নারীকে নারীর শত্রু বানিয়ে হাত তালি দিবি। শেষে বলবো আমরা আমাদের নারীদের আজ তোমরা পুরুষেরা যেভাবে দেখছ পাচ্ছ তা তোমাদেরই যুগ যুগের নোংরা সরযন্ত্রের ফসল। এরপরও যদি শুনি মেয়েরা ওই মেয়েরা এই তাহলে বলবো বাসায় টয়লেট টিস্যু শেষ.......টয়লেট টিস্যু মার্কা যুক্তি দেবার সাহস করা থেকে বিরত থাকবেন।
|
![]() |
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এসব অসঙ্গতি আদৌ দূর হবে কিনা দেখতে বড় সাধ জাগে।
।
১৫ বছরের কম বয়সের কেউ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় থাকতে পারবে না। ১৫ বছরের কম বয়স সত্যিই নাজুক বয়স। কিন্তু তারচেয়েও কম বয়সে দু-চারজন যে মুক্তিযোদ্ধা ছিল না তা তো নয়। ব্যতিক্রম তো সব ক্ষেত্রেই ছিল তা প্রমাণ করতে কোনো এক নামিদামি পত্রিকা লিখেছে-;টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী মাঠে কাদেরিয়া বাহিনী যে অস্ত্র দিয়েছে সেখানে অস্ত্র পরিদর্শনের সময় বঙ্গবন্ধুর কোলে কাদেরিয়া বাহিনীর ১১-১২ বছরের সদস্য শহিদুল ইসলাম লালুকে দেখা গেছে। কাদের সিদ্দিকীর দেহরক্ষী বাহিনীর বজলুর বয়স ছিল ১৫ বছরের কম। আগেরটা সত্য হলেও পরেরটা সত্য নয়। বজলু এখনো বেঁচে আছে। দুর্ধর্ষ যোদ্ধা। তার বয়স ছিল ২০-এর কাছাকাছি। কাদের সিদ্দিকীর দলকে তখন যুদ্ধ করতে হতো। দিনে রাতে ৩০-৪০ মাইল হাঁটতে হতো। শক্ত সবল লোকের দরকার ছিল। হ্যাঁ, আমার দলেও অনেক ১৫ বছরের নিচে মুক্তিযোদ্ধা ছিল। লালুর সঙ্গে ভুলুও ছিল। লালু চায়ের দোকানের বয় সেজে হানাদার শিবিরে বোমা ফাটিয়ে কয়েকজনকে নিহত-আহত করায় বীরপ্রতীক খেতাব পেয়েছিল। দুর্ভাগ্য এই এত বছর মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ভালোমন্দের ব্যাপারে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারলাম না। অনেক প্রকৃত যোদ্ধা সরকারি তালিকাভুক্ত হলো না। শুনে অবাক হই, বাটাজোরের মহু সরদার, চর পাকুল্যার শামসু, ভূয়াপুরের ভরত, গাইবান্ধার হালিম সরদার, মিরপুরের আনিছুর রহমান এখনো মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়নি। তাদের কাছে আমার ওই সময়ের স্বাক্ষরিত সার্টিফিকেট আছে, জেনারেল এমএজি ওসমানীর সার্টিফিকেট আছে, তবু তারা মুক্তিযোদ্ধা না।
।
অনলাইনে তালিকাভুক্ত হওয়ার ফরম ছাড়া হয়েছে। সেখানে দেখলাম অস্ত্র কোথায় জমা দিয়েছেন তার রশিদ দরকার। মুক্তিযোদ্ধারা কার কাছে অস্ত্র জমা দেবে, কে জমা নেবে? আমরা কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র বঙ্গবন্ধুর পদতলে বিছিয়ে দিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু তো কোনো রশিদ দেননি, আমরাও সাহস করে চাইনি। কবে এসব অসঙ্গতি দূর হবে? আদৌ হবে কিনা জানি না। অনেকের যেমন ছেলেমেয়ের বিয়ে দেখতে, নাতি-পুতি দেখতে ইচ্ছা জাগে, আমারও তেমনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এসব অসঙ্গতি আদৌ দূর হবে কিনা দেখতে বড় সাধ জাগে।
।বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম
|
![]() |
জার্নি এক । লুতফুন নাহার লতা
.
তখনো চারিদিক হালকা আলো আধারিতে ভরা। ভোর হ”েছ খুব ধীরে। প্রতিদিন এমন সময় ঘুম থেকে উঠে লিজি সালামের উডসাইডের বাড়ীর পিছনের দরজা খুলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিউইয়র্কের আকাশ দেখি। আকাশ দেখলে শান্তি পাই'। দেশ ছেড়ে এসেছি মাত্র ক'দিন হল , এখনো বুকের ভেতর হুহু করা বন্ধ হয়নি। সিক্সটি ফার্স্ট উডসাইডের কোনায় কর্পাসকৃষ্টি চার্চের পাশে ওদের বাড়ী। ফুলে ফুলে সাজানো কর্পাসকৃস্টি চার্চের বাগান। সেই বাগানে মাতা মেরী আর তাঁর পাশে দাঁড়ানো বছর পাঁচেকের একটি ছেলে। যীশু। মাতার আপদমস্তক লম্বা চাদরে ঢাকা, হাতে একটি বই। গাছ গাছালির ঝিঁঝিঁ ধরা শুন্যতার ভেতরেও এক অদ্ভুত রকমের মায়ামাখা দৃশ্য। এ বাড়ীর পিছনেও ঝাকড়া মেপল গাছের ঘন সবুজ পাতা, একটি সবুজাভ মায়াময় আঁধার ঘনিয়ে রেখেছে। আগস্টের বাতাসে নরম ভেজা জলকনা, আকাশে বাদলের দেউল আর সদ্য দেশ ছেড়ে আসা আমার মনজুড়ে সামনের হাজারো অনিশ্চিত ভাবনার মেঘ। আমি এদেশে এসেছি বটে , কিš‘ আমার মন প্রান কিছুতেই শেকড় উগলে আসতে পারছে না। সেই কবে থেকে কেমন যেনো রোবটের মত চলছি। ধীরে ধীরে কত শত না পাওয়া আর বঞ্চনার অভিমানে গড়ে ওঠা দেশ ছেড়ে আসার এই চিন্তা, তারপর সেই চিন্তাকে সবলে আঁকড়ে ধরে চলে আসার সকল আয়োজন। সবাইকে বলে বিদায় নিয়ে এই অজানায় একা একা পাড়ি দেবার যাবতীয় কিছু কেমন করে যেন সব করে গেছি একটি প্রানহীন মূর্তির মত। যেন আমি নই, আমার ভেতর থেকে এক অন্য আমির জন্ম হয়েছে। সে যেন এই আমাকে দিয়ে সব করিয়ে নি”েছ। সে কি আমার অবচেতন মনের ভেতর এক প্রতিবাদী আমি! এক নীরব যোদ্ধা! দীর্ঘদিনের তিল তিল অবমাননা, ভালোবাসাহীন প্রতারনার পুঞ্জীভূত অভিমান,মানুষের সুন্দর মুখের তলায় এক কুৎসিত কংকাল দেখে দেখে মনে হল, কতদিন আমি মানুষ হিসেবে বাঁচিনি! একবার, শুধু একবার মানুষ হিসেবে বেঁচে উঠবার জন্য জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে পথে পা বাড়ালেম। সাথে পাঁচ বছরের সিদ্ধার্থ। পাসপোর্ট , ভিসা , টিকেট , আসবার সময়ে লন্ডনে ক'টা দিন বন্ধু দিলরূবার কাছে থাকা, এর সকল কিছু কেমন করে হয়ে গেল ।
.
আসার দিন। সারাটা দিন ধরে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে আমার শেয়ারের অংশের কাগজ গুলো সই করে ফিরিয়ে দি”িছ। মনে মনে বলছি ' ফিরায়ে দিনু দ্বারের চাবি রাখিনা আর ঘরের দাবী---।' আজ আমার মনের মুক্তি। সারা জীবনই জানি এমন কোন টাকা পয়সা, সোনা দানা ,মনি মুক্তা, বাড়ী ঘরের এমন মূল্য নেই যা দিয়ে আমাকে কেনা যাবে। ফেরান যাবে না আমাকে। ছেড়ে যা”িছ তবু কি আশ্চর্য, যাকে ছেড়ে আসব তাকেই হৃদয় জাপটে ধরে আছে। যার কাছ থেকে পালাতে চাইছি তারি হাত ধরে আছি শক্ত করে। তারই হাত ধরে তাঁকে ছেড়ে যা”িছ। ফলে লন্ডন পর্যন্ত সে সাথেই রইল। যে কদিন লন্ডনে রইলাম, প্রতিদিন তাঁর প্রিয় খাবার গুলো রান্না করছি। তাঁর জন্যে এই আমার শেষ রান্না! চুলায় করল্লা ইলিশ, পটোলের দোলমা চোখের জলে টলমল করছে। তবু তাঁর সাথে হাত ধরে ঘুরছি সারা লন্ডন শহর। এতো দিনের শত অনাদর নিয়ে মরা জ্যোতøার মত আমি আছি তবু নেই। লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক। হিথ্রো এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছি ! ঝড় বয়ে যা”েছ বুকের ভেতর। দমে দমে আশা করেছি কেউ আমাকে ফেরাবে। দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে হাত ধরে। বলবে, তোমাকে কোথাও যেতে হবে না। এই দেশ, এই সংসার ছেড়ে কোথাও না। পানকৌড়ির গুগলি খুঁজে খাওয়া নদীর ধার, কৃষ্ণচূড়ায় ছাওয়া ক্রীসেন্ট লেক, খোঁপায় জড়ানো বারোটি বেলীর গোঁড়ে, মহিলা সমিতির মঞ্চ আর রামপুরা টেলিভিশান ছেড়ে কোত্থাও যাবে না তুমি। মধ্য জুলাই, তবু সূর্য উঠল না সেদিন। লন্ডনে হিথ্রো এয়ারপোর্টে আমরা। বাদলধারা নামার আগে আমার চোখের জলে ভেসে যা”েছ সারা লন্ডন শহর। না! কেউ বলছে না 'তুমি কিছুতেই যাবে না।' ছেলের হাত ধরে আমার মরদেহ প্লেনে উঠে বসছে। লন্ডন থেকে নিউইয়র্কে এসে নেমেছে আমেরিকান এয়ার লাইন্স। জে এফ কে এয়ারপোর্টে আমার বোন রানু , ওর বন্ধু পারভিন ,তপন সবাই মিলে আমাকে সিদ্ধার্থকে নিয়ে এলো ।
.
খাওয়াদাওয়ার পরে ওরা ম্যানহাটান ঘুরে দেখতে নিয়ে গেল। রাতের ম্যানহাটান। হাজার বাতীর এই উৎসবে আমি কত বেমানান এ মূহুর্তে। আমার বুকের ভেতর একসাথে রূপসা ,শিবশা, পশুর নদীর বেদনা প্রবাহ, আর আমার বুড়িগঙ্গা সেতো কুলু কুলু বয়ে চলেছে চিনচিনে ব্যথায় কাতর করে দিয়ে, তবু আমি সবার সাথে বসে আছি গাড়ীতে। এক কোনে জানালার কাছে নীরব মৃৎপাত্রের মত। ম্যানহাটানের অপরূপ আলো সে মৃতপাত্রের গায়ে টোকা দিতে পারল না। রানু তখন স্টুডেন্ট , থাকে একজনার মত ছোট্ট বাসায়। তার মধ্যে আবার সিদ্ধার্থ আমি। রাত কেটে গেলে সকালে সিদ্ধার্থ বলল ' আম্মু আমি এখানে থাকব না , আমাকে বনানীতে নিয়ে ইলিশ মাছ মিষ্টি কুমড়ো দিয়ে ভাত দাও ।' ওর মুখে অজানা দিনের আশংকা। আমি আজো ওর মুখের দিকে চেয়ে সেই অনিশ্চিত অন্ধকারের ভয় মাখা অসুখী ছোট্ট মুখখানি দেখতে পাই । লেখক , সাংবাদিক কৌশিক আহমেদ বাংলাদেশ বেতারের ভোরের অনুষ্ঠান 'আজকের ঢাকা'র উপ¯’াপক ছিলেন দীর্ঘ কাল ধরে, একাধারে পদ্মা প্রিন্টার্স এর গুর“ত্বপূর্ন পদেও কাজ করেছেন একসময়। তাঁর স¤পাদনা ও প্রকাশনায় সাপ্তাহিক বাঙালী নামে একটি বাংলা সংবাদ পত্র নিউইয়র্ক থেকে বের হ”েছ। আমি এসেছি একথা শুনে আমার বোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করলেন। তখনো বাঙালী কমিউনিটি এখনকার মত এতো বড় হয়ে ওঠেনি। সবাই সবার খোঁজ খবর রাখত। আমার সাথে কথা বলে দুই তিন দিনের মধ্যেই একটি কাজের ব্যাব¯’া করে আমাকে সেখানে যেতে বললেন । লিজি আর সালাম আমার ছোট বোন রানুর বন্ধু । ওরা অসাধারন দু'জন মানুষ, যেমন হাসি খুশি তেমনি অতিথিপরায়ন । ওদের বাসার একটি রূমে থাকছি আপাতত। রানু খুব দূরে থাকে না , কাজের শেষে সবাই বাসায় ফিরে এলে বেশ কাটছে একসাথে সবাই। সেদিন সকাল বেলা এ বাসার লোকজনের কাছে শুনে রওনা হলাম কৌশিক ভাইয়ের দেয়া ঠিকানায়। নর্দান বোলোভার্ডের থেকে 'আর' ট্রেন নিয়ে এলমহার্স্টে গিয়ে নামলাম। বা দিকের শিড়ি বেয়ে এশিয়া ব্যাংকের গা ঘেসে উপরে উঠতেই দেখি তুমুল বৃষ্টি পড়ছে। ।
.
বৃষ্টির জল মাথায় পড়ে কপাল বেঁয়ে নামছে আর শ্যামলা মৃৎপাত্রের চোখের জল সেই জলকে গড়িয়ে নিয়ে যা”েছ অনন্ত জলস্রোতের মত। খুঁজতে খুঁজতে মেঘনা টেলিকমিউনিকেশানের ভুঁইয়া সাহেবের অফিস যখন পেলাম তখন আমরা দুজন ভিজে একশা। সেসময় খুলনায় আমার মাকে ফোন করে কথা বলার সময় সিদ্ধার্থ এভাবে বর্ননা দিয়েছিল ' জানো নানু , আমি আর মা রাস্তায় হেঁটে হেঁটে কাজ খুঁজছিলাম তখন আমাদের উপরে বৃষ্টি পড়ছিল, আমাদের তো ছাতা ছিল না বৃষ্টি আর মার কান্না আমাদের ভিজায় দি”িছল।' কাজ হল। এটি একটি টেলিফোন বুথ। আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ, ভারত ,পাকিস্তান, ব্রাজিল,কলম্বিয়া,মেক্সিকো,সিসিলি এমন অনেক দেশে কথা বলার ব্যাব¯’া। কথা বলার জন্যে কেউ এলে ফোনে লাইন মিলিয়ে দেয়া কাজ। কাজ তো হল কিš‘ করি কিকরে ! সিদ্ধার্থকে কোথায় রাখব! সবাই কাজে ব্যাস্ত। রানু বলল বেবীসিটার খুঁজতে হবে। 'বেবীসিটার খোঁজা পরে হবে আপনি আজই জয়েন করেন আপা।' ভুইয়া ভাইয়ের এই কথায় সিদ্ধার্থকে নিয়েই কাজে গেলাম। সে খেলা করছে টেবিলের নিচে আমার পায়ের কাছে বসে। এভাবে দুদিন কাজ করে মনে হল এটা হয় না। ছোট্ট একটা বা”চা,তার কত কিছু দরকার। খিদে পায় , ঘুম পায় , বাথর“ম পায়, কান্না পায়, বাবার কাছে যেতে মন চায় , আমাদের বনানীর বাসার দোতলার ফিলিপিনো ফ্যামিলির ছেলে ওর সমবয়সি ছৈ এর সাথে খেলতে মন চায়। দারোয়ান গফুর চাচা , ড্রাইভার আলী, তার ফাতেমা আর আমেনা বোয়া, চাচা ফুপু মামা খালা সবাইকে ফেলে এসে কেমন করে সে ভাল থাকবে। একাদশ ফোবানা সম্মেলন হবে সেপ্টেম্বরের শুর“তে ক্যালিফোর্নিয়াতে।
.
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত দু'একটি পত্রিকায় আমার এদেশে আসার খবর প্রকাশিত হওয়ায় সবাই যোগাযোগ করতে শুর“ করেছে। সম্মেলনে যোগ দেবার জন্যে নিমন্ত্রন করে টিকেট পাঠিয়ে দিল সম্মেলনের আয়োজক গোষ্ঠী। হঠাৎ ফোন এলো বাংলাদেশ টেলিভিশানের শ্রদ্ধেয় শিল্পী ও এককালে বিটিভি কর্মকর্তা এ কে কোরেশী ভাইয়ের কাছ থেকে। উনি থাকেন ক্যালিফোর্নিয়াতে ছেলের কাছে। ওনারা একটা নাটকে হাত দিয়েছেন তাতে আমাকে কাজ করার অনুরোধ করছেন। কাপড়চোপড় গুছিয়ে নিয়ে ছেলের হাত ধরে আবার প্লেনে উঠে বসলাম। জীবন চলেছে আনমনে । সেই অজানা জীবনের স্রোতে ছেঁড়া কাগজের নৌকোর মত ভেসে চলেছি আমরা দু'জন। ১৯৯৭ এর সেই ফোবানা সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন প্রধান অতিথি। তিনি আমাকে দেখে খুব ক্ষেপে গেলেন। বাংলাদেশে ১৯৯৬ তে ঢাকায় মেয়র হানিফের ডাকে জনতার মঞ্চে আমাদের লাগাতার আন্দোলন প্রতিবাদের ফলে তার সরকারের পতন হয়। আমাকে দেখে খুশী হবার কথা নয় তাঁর। এগল্প আলাদা পরিসরে অন্য একদিন বলার ই”েছ রইল। ফোবানা শেষে কোরেশী ভাইয়ের নাটকের কাজে রয়ে গেলাম। কাজ করছি সপ্তাহ দুয়েক হল। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে নিউইয়র্কে ফিরে যেতে হবে, অক্টোবরের মধ্যে ঢুকতে হবে কানাডায়। আসার সময় বোনের কথা মত কানাডার ভিসা নিয়ে এসেছি। আমেরিকায় ¯’ায়ী ভাবে থাকার অনিশ্চয়তা অনেক। কাগজ হবে কিনা , কিভাবে হবে , কবে হবে তার কিছুই ¯পষ্ট করে বলা যায় না। কাজ বেড়ে চলল। সবাই বুদ্ধি পরামর্শ দিল আমেরিকাতেই থেকে যাবার। অনিশ্চিত সব কিছু। কানার যেমন দিন রাত্রীর প্রভেদ নেই আমারো তাই মনে হল। আমি কোথাও কাউকে চিনিনা তাই আমেরিকা কানাডা কোনটা ভাল হবে জানিনা। আমেরিকায় স্কুলের সেশন শুর“ হয় সেপ্টেম্বরে। সময় বয়ে যা”েছ, উপায়ন্তর না দেখে সিদ্ধার্থকে স্কুলে ভর্তি করা হল। নর্থ হলিউডের এরউইন এলিমেন্টারি স্কুলে ফার্স্ট গ্রেডে। স্কুলে ভর্তি করার হাজার ফ্যাঁকড়া। নাম ঠিকানা সহ তা প্র“ফ করার জন্যে নিজের নামে বিলের কাগজ, মেডিকেল এক্সামিনের রিপোর্ট, ইমুনাইজেশান কার্ড, যাতে পোলিও ডিপিটি ও অন্যান্য সব কখন কি দেয়া হয়েছে তার বিবরন, এসব জমা দিতে হয়। সিদ্ধার্থের মেডিকেল এক্সামিনেশানের জন্যে অপেক্ষা করতে হবে আরো কতদিন। নর্থ হলিউডের তাহাংগা মেডিকেল সেন্টারে বসে আছি। সিদ্ধার্থ ঘুরে ঘুরে খেলছে, হাতে ছোট একটা খেলনা প্লেন। জুলাই , আগষ্ট, সেপ্টেম্বর এই তিন মাসের মানসিক অবসাদে আর অনিয়মে মা, ছেলের ওজন কমে অর্ধেক হয়ে গেছে। বিশেষ করে ওর মুখের দিকে তাকালে চোখ ভিজে যায়। বুকের তলায় কেমন শিরশিরিয়ে নামে বেদনার স্রোত।
.
এদেশে নতুন আসা মানুষের পায়ে পায়ে বিভ্রাট। কোথায় যাব , কিভাবে যাব , কি বলব কেমন করে বলব সবকিছুতেই মহা ফ্যাঁকড়া। পায়ে হেঁটে , বাসে চড়ে কাল একবার এসেছিলাম মন্টোক্স বা টিবি টেস্টের জন্যে, ওটা না হলে স্কুলে ভর্তি করা যাবে না। আজ আবার এসেছি। গতকাল সিদ্ধার্থের হাতে গোল দাগ দিয়ে মেডিসিন দেয়া হয়েছে আজ সেটা মেপে দেখে ডাক্তার রিপোর্ট দেবে। দুঘন্টা বসে থাকার পরে ডাক্তারের র“মে ডাক পড়ল। সিদ্ধার্থ তার চিকন কর“ন হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ,আমার বুক ধক ধক করছে, কেন যেন মনে হ”েছ ওর হাতের ফোলা গোল জায়গাটা একটু বড়ই দেখা”েছ। মেপে দেখে নির্লিপ্ত মুখে ডাক্তার জানাল টিউবারকিউলিসিস পজেটিভ। তিন বছর একটানা ওষুধ খেতে হবে।ছোট্ট সিদ্ধার্থের আরো ছোট্ট হাত খানি শক্ত করে ধরে ঘরে ফিরবার জন্যে পা বাড়িয়েছি। ঘর! ঘর কোথায়! ঘর তো নেই আমাদের। আমরা ঘর ছাড়া, আমরা দেশ ছাড়া, আমরা ঠিকানা বিহিন অন্তহীন স্রোতে ভাসছি। বাসের জন্যে দাঁড়িয়ে রয়েছি দুপুরের ঠা ঠা রোদে। বাসের ভেতর বসে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছি জানালা দিয়ে যেন ও আমার চোখ দেখতে না পায়। বাইরে ক্যালিফোর্নিয়ার অতি উজ্জ্বল দিনের উ”ছাস। ভেতরে কে যেনো আমার হৃৎপিণ্ড উপড়ে নিয়ে যা”েছ। আমাজন রেইন ফরেস্টের মত এক অদ্ভুত অন্ধকার বৃষ্টি ঝরছে সেখানে। রক্তের বৃষ্টি ।।
|
![]() |
.....:::::::::সমানধিকার::::::::::........
.
১ -আরে ভাইয়া আপনি মহিলা সিটে বসে আছেন কেন? জানেন না এটা মহিলা সিট। ওঠেন বসতে দেন। ছেলেটা কিছু না বলে নির্বিকার ভাবে ওঠে গেল। এসময় ছেলেদের কিছু বলার থাকে না। বললেই সে মেয়েদের সম্মান করতে জানে না।
.
২ -আরে মামা তাড়াতাড়ি নামেন। বাস ত আফনের লেইগা খাড়ায় থাকব না। ছেলেটি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলন্ত অবস্থায় বাস থেকে নেমে যায়। কিছুক্ষন পরেই এক মেয়ে আসে নামার জন্য -ওস্তাদ মহিলা আছে ফুল ব্রেক।
.
উপরের ১ ও ২ নম্বর ঘটনা আমাদের দেশের অতিপরিচিত সাধারণ পরিবহনের আমার দৃষ্টি অসাধারণ কিছু ঘটনা। আসুন একটু বিস্তারিত ভাবেই বলি। আমাদের দেশে বর্তমানে চেতনাশীল কিছুসংখ্যক নারীগণ সমান অধিকারের জন্য লড়াই করছেন। ইহাই বড়ই ভালো কথা। কিন্তু সমান অধিকার উপরের দুই ক্ষেত্রেও হবে না কেন? তারা কথায় কথায় উদাহরণ টানেন অমুক দেশের কথা তমুক দেশের কথা। আচ্ছা সেখানে কি সাধারন পরিবহনে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকে? এক্ষেত্রে আমরা পুরুষরা আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। বাস থেকে নাম ওঠার সময় জীবনের ঝুঁকি নিতে হচ্ছে আর বসার কথা নাহয় নাই বললাম।
.
এইবার দৃষ্টি ফেরাই আমাদের দেশের আইনের দিকে। আমাদের সবচেয়ে প্রচলিত আইন নারী নির্যাতন আইন। কোন নারী অভিযোগ করলে আসামীকে সরাসরি ধরা হয়। প্রয়োজন হয় না প্রমাণের তার অভিযোগই যথেষ্ট। আসুন উদাহরণ দেই। কিছুদিন আগে আমাদের দেশের এক স্বনামধন্য ইউনিভার্সিটিতে এক ছাত্রী এক নিরীহ পুরুষের বিরুদ্ধে মিথ্যে যৌন হয়রানির মামলা করেছিলেন। ইহাতে সেই নিরীহ ব্যক্তিকে অনেক হয়রানি করা হয়। পরবর্তীতে প্রমাণ হয় সেই ছেলেটি নির্দোষ। তাহলে আমার প্রশ্ন কেন পুরুষ নির্যাতন আইন হবে না আমাদের দেশে অন্য দেশের মত। মনে করুন আপনার গার্লফ্রেন্ড আপনার উপর বিনা কারনে রাগ করেছে। সে শুধুই রাস্তায় কিছু অদ্ভুত আচরণ করে আপনাকে ফাঁসাতে পারে। এখন শুনছি এমন চক্র বেরিয়েছে যারা এইভাবে রাস্তায় এসে অজানা এক ছেলে স্বামী বলে যাতা কেলেংকারীর সৃষ্টি করে। কিন্তু সমস্যা হয় ছেলেটির। অথচ আপনার গার্লফ্রেন্ড যদি অন্যায় ও করে রাস্তার মধ্যে একটু জোড়ে তাকে বকা দেবেন দেখবে কত মানুষ এসে পড়বে "ঐ তুই ম্যাডামরে কি বললি?"
.
তারা সমানধিকার নিয়ে পুরুষ নির্যাতন করবে এটা কোন আইন? আর সুযোগ সুবিধা আর সংস্কৃতির কথা বললে লজ্জায় মুখ লুকাইতে হয়। ছেলেরা নাভীর নিচে প্যান্ট পড়লে কিংবা শার্টের উপরের বোতাম খোলা রাখলে স্কুল কলেজ কিংবা অন্য কোথাও শুনতে হয় "মাস্তান হয়ে গেছ,বেশি স্টাইল কর?" আর একই কাজ মেয়েটা করলে মেয়েটা কত সুন্দর, তোমার চাকরিই হবে। আরে তুমিই ত বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ মডেল।
.
কেন এমন হবে? আমরা পুরুষ তাই বলে আমাদের অধিকার কেন ক্ষুন্ন করা হবে? কেন আমাদের বিনা কারনে হয়রানি করা যাবে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েও? নারীর সমানধিকার চাই আমিও তাই বলে আমাদের পুরুষের সমানধিকার ক্ষুন্ন করে কেন? ভাববেন না আমি নারী বিদ্বেষী। আমি চাই আমাদের পুরুষের অধিকার যেন খর্ব করা না হয়। সকল ক্ষেত্রেই নারী পুরুষের সমান অধিকার চাই। আগে বাসে উঠলে কোন মেয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে উঠে বসতে দিতাম মহিলা সিট ছাড়া বসেও। আর এখন বয়স্ক কোন মহিলা ব্যতীত সিটে বসে থাকি। মনে মনে না বলে মন চায় চিৎকার করে বলি "ওহে নারী সমানধিকার নিয়া এত চিল্লাচিল্লি করে লাভ কি? একদিনের জন্য হলেও এই পুরুষের নিচে ত শুইতেই হবে। নাহলে যেঈ কথা নিয়ে এত লাফালাফি কর তোমরা মায়ের জাতি সেই মা ত হতে পারবা না। পুরুষের নিচেই শুইতে হবে মনে রাইখ...
|
![]() |
.সহজে পল্টি মারা
।
এক ভদ্রলোক রাস্তার পাশে একটা গাছ কাটছে এবং তাকে ঘিরে চারপাশে রীতিমত জটলা তৈরি হয়ে গেছে।কয়েকজন অতি উৎসাহী জনতা ভদ্রলোককে সাহায্য করার জন্য আবার হাত মিলিয়ে গাছ ধরে আছে যাতে ঠিকমত কাটা যায়।
.
দুইয়েকজন আবার নিজে নিজেই বলে উঠছে,বহুদিন ধরে গাছটা রাস্তা দখল করে আছে,ঠিকই করছেন।কেউ বলছে,রাস্তার মধ্যখানে গাছটা আছিল,কাইটা ঠিকই করতাছেন।একজন বলেই উঠলো,আরে মিয়া এত উপরে কাটেন কিল্লাই,একটু গোঁড়ায় কাটেন।দুইয়েকজন বলেই ফেললো,যা বড় গাছ!হাজার বিশেক দাম না হয়ে যায়না।কি মিয়া লাগাবেন নাকি বাজি? ঘন্টা দুয়েক পরিশ্রম করার পর,গাছ কাটা হল।ভদ্রলোক উৎসাহী জনতার সাহায্য নিয়ে অল্প সময়েই ভ্যানে গাছ নিয়ে চলে গেলেন।
.
তার কিছুক্ষণ পরই ঘটলো আসল ঘটনা।এক ভদ্রলোক দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বললো-গাছ!দিনের বেলা এত্তবড় গাছটা কে কেটে নিয়ে গেল,কেডায় কাটলো?প্রথমে সাহায্য করা লোকটি এইবার বলে উঠলো-আমি আগেই সন্দেও করছিলাম,ঐটা চোর না হয়ে যায়না!!দ্বিতীয় জন বললো,আহারে কি সুন্দর একটা গাছ আছিল।অপর জন বললো,কি মিয়া এতক্ষন কি করছিলেন?আরেকটু আগে আসলেইতো চোরটারে ধরতে পারতেন।ঐ দিকে আগান,বেশী দূরে যেতে পারেনাই চোরাটা।কি মিয়ারা দাঁড়াইয়া আছেন কেন,কেউ একটু আগাইয়া যান,চোর বেশীদূর যেতে পারেনাই।একজন বলে বসলো,কি মিয়া গাছ কি তোমার?
.
না ভাই,গাছ আমার হবে কেন।রাস্তার পাশের গাছতো সরকারের।
.
সবায় মুখ কেচকিয়ে বললো- ওহ সরকারি গাছ।চলেনগা নিজ নিজ কামে জান।সরকারি জিনিষের জন্য সরকার আছেই!!অবশেষে জটলা শেষ।(ইউনিয়ন অফিসের এক ব্যক্তির কাছে শোনা গল্প)
.
আমরা বাঙালী ঐ একটা জিনিষ খুব ভালো পারি,সহজে পল্টি মারতে।আরে মিয়া সরকারি জিনিষ যদি গাছ হয়,তাইলে আপ্নের তো অক্সিজেন খাওয়ার কোন অধিকারই নেই।সবই যদি সরকার করে,তাইলে আপনি কি করবেন?সমালোচনা,আলোচনা করতে আমরা অস্তাদ,কিন্তু কোন কিছুর সলিউসন চাইলে পল্টি মাইরা দৌড় দেই।
|
![]() |
আমার যে কতটা পরিমান ভালা পুলা এইটা নিয়া আপনাদের সন্দেহের কোন অবকাশ থাকার কথা না। কি সব ফালতু কথা বলেন আপনারা আমি বুঝি না। আমি একজন অত্যান্ত ভালা পোলা। আমি যে কত ভালা এইডার উপরে তিনডা বিশাল বিশাল চার্টিফিকেট আছে।
.
১ প্রথম চার্টিফিকেট দিছিল আমাদের স্কুলের হেডমাস্টার সাব। সবাই টেস্টিমনিয়াল বলে। কিন্তু সেখানে উনি স্পস্ট ভাবে উল্লেখ করছেন উনার এই ছাত্র অত্যান্ত ভদ্র এবং শান্ত। যদিও স্কুল ছাইরা আসার সময় পর্যন্ত শুধু মাত্র আমার হাতে ২০ থেকে পচিশটা জানালা কাচ, বেন্চ, টেবিল, বাথরুমের পানির কল, তিন থেকে চাইরটা পোলা হাত ভাঙ্গার রেকর্ড ছিল। আমি এতই ভদ্র স্টুডেন্ট ছিলাম যে হেডমাস্টার স্যারের রুমের জানালার কাচ ভাঙ্গার রেকর্ড ছিল। আর চরিত্র। থাক সেইটা বইলা আপনাদের কস্ট দিতে চাই না। ওইটা আমাদের স্কুলের সামনের গার্লস্কুলের ম্যাডাম ভালো বলতে পারবো।
.
২ দ্বিতিয় বার সার্টিফিকেট দিল কলেজের প্রিন্সিপাল স্যার। উনি উল্লেখ করেছেন আমি পুলা ভাল এবং ভদ্র। আমি ছিলামও খুবই ভাল আর ভদ্র। খালি একটু রাজনিতি করতাম আরকি। এমন কোন সপ্তাহ নাই যেই দিন বিপক্ষদলের পুলাপাইনরে দাবরানি, পিডানি, দৌরানি দেই নাই। পিডাপিডি না করলে তখন হাত চুলাকইতো।
.
৩ এলাকার কমিশনার সাব একটা দিছিল। চারিত্রিক সার্টিফিকেট। আমার চরিত্রের কথা জানিনা তয় উনার চরিত্র সম্পর্কে এলাকায় ব্যাপক কানাঘুশা চলতেছিল। উনি দ্বিতিয় বিবাহ করিয়াছিলেন কাজে মেয়েকে আর তৃতিয় বিবাহ করিতে উদ্যেগ নিচ্ছিলেন অর্ধেক বয়সি একজনরে। তবে আমি যথেস্ট ভালা পুলা আছিলাম। খালি এক পুলিশের মাইয়ারে প্রপোজ করতে গিয়া ভরদুপুরে একটা দৌরানি খাইছিলাম। এছারা আমার চরিত্র পুলের মতন পবিত্র।
.
৪ ভার্সিটিরটা কিছুদিনের মইধ্যেই দিবো বলে মনে হইতাছে। আশা করতেছি সেইখানেও লেখা থাকবে " এই পুলা বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ভালা পুলা"।
ভাবতেছি বিয়া করার সময় এই টেস্টিমনিয়াল গুলা মাইয়ার মা বাপেরে শো করুম। চার্টিফাইড ভদ্র এবং চরিত্রবান জামাই। খ্যাক খ্যাক..................
|
![]() |
.
বিখ্যাত কানাডা - হিটিং বন্ধ হলে সব মারা যাবে।
.
' ঐ আসে ঐ অতি ভৈরব হরষে .........' আজ্ঞে না কত্তা , বৃষ্টির কথা হচ্ছে না এখানে , কানাডার স্বনামধন্য শীতের আগমন বার্তা দিচ্ছি ! কৌতুক করে বলা হয় কানাডায় ৪ ঋতু যথা ১। শীত [winter ] ২। প্রায় শীত [ almost winter ] ৩। এখনো শীত [ still winter ] ৪। রাস্তের কাজ [ road works ] গরম কালে রাস্তা খুঁড়াখুঁড়ি হয় বলে আরেক প্রস্থ শ্লেষ ! শীতের আলামত দেখা গেলেও শীত জেঁকে বসে ডিসেম্বরে আর দাপট থাকে মার্চ অব্দি । বাড়ী , গাড়ী ,বাস , ট্রেন , অফিস , দোকান তামাম জায়গা গরম রাখার নিখুঁত ব্যবস্থা বলবৎ রাখা হয় , কাড়ীকাড়ি খরচ ও হয় । শুধু মন্ট্রিয়ল শহরের বরফ সাফ করতে ২০ কোটি ডলার ব্যয় হয় !
.
বছরে গড়ে ১০০ ইঞ্চির মতো বরফ পড়ে এ অঞ্চলে , তুষার ঝড় না হলে কেউ তেমন গা করে না , লেপ মুড়ি দিয়ে বসে থাকে না কেউ , ঘড়ির কাটা ধরে সব চলে ! এই সময় টা বরং অনেকের জন্য আনন্দের হয় যারা স্কেটিং , স্কিং করে ! আর Ice Hockey তো এদের জাতীয় খেলা সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র খেলা যেখানে ষ্টিক রেখে খালি হাতে কিলাকিলি জায়েজ !
.
শীতের সময়ের এক মজার গল্প বলে শেষ করবো আজকের প্যাচাল ! আমাদের এক ভাবী বাংলাদেশ থেকে বেড়াতে এসেছেন , উনি ফি বছরই আসেন , বিলেতে আমেরিকায় তাঁর একাধিক সন্তানের বাস । আমি ভাবছিলাম এমন কিছু করবো যাতে ভাবী চমকে যান আর চিরদিন মনে রাখেন , সিলটে গিয়ে গল্প করেন । উনাকে নিয়ে গেলাম বাসার কাছে শ্যাতুগে নদীর পারে , পানি বরফ হয়ে জমাট পাথরের মতো হয়ে আছে ! বললাম ' নিন ভাবী ,চটপট নেমে পড়ুন , আমরা পায়ে হেঁটে নদীর ওপারে যাবো , জায়নামাজ লাগবে না , দেখেন আমার কেরামতি ' ! ভয়ে ভয়ে আমার দেখাদেখি রওয়ানা হলেন এবং ওপারে পৌঁছে গেলেন ! আমার mission accomplished !
|
![]() |
ইউফ্রেটিস নদীর উত্তর দিকে অবস্থিত সিরিয়ার একটি শহর রাকা।(Ar Raqqah) । সেখান থেকে খলিফা হারুন উর রশীদের দরবারে একটি চিঠি আসলো। চিঠিতে লিখা- শহরের বিচারক একমাস যাবত অসুস্থ। বিচারকাজ স্থবির হয়ে আছে। খলীফা যেন খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেন।
খলীফা ফেরত চিঠি পাঠালেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন বিচারক শহরে আসছে।
ঠিক এক সপ্তাহের মধ্যেই রাকা শহরে নতুন বিচারক এসে কাজে যোগ দিলেন।
বিচার কাজ শুরু হয়েছে। প্রহরীরা একজন বৃদ্ধা মহিলাকে হাজির করলো। মহিলার অপরাধ-সে শহরের রেস্তোরা থেকে একঝুড়ি রুটি আর এক শিশি মধু চুরি করতে গিয়ে একেবারে হাতেনাতে ধরা পড়েছে।
বুড়ি কি জানেনা , খলীফা হারুনের রশীদের রাজ্যে চুরি করা কতবড় অন্যায়। এ জন্য আইনত চোরের হাতকাটা যাবে, জরিমানা হবে, জেলদন্ড হবে।
বিচারক জিগ্গাসা করলেন-
আপনি চুরি করেছেন?
জ্বি হুজুর আমি চুরি করেছি।
আপনি কি জানেন, চুরি করা কতবড় অপরাধ? কত বড় পাপ?
জ্বি জানি। অনেক বড় অপরাধ। ক্ষমার অযোগ্য।
জানেন,এজন্য আপনার কতবড় শাস্তি হতে পারে?
জ্বি জানি। আর্থিক জরিমানা, জেলজরিমানা এমনকি আমার হাতও কাটা যেতে পারে।
তবে এসব জেনেও কেন আপনি চুরি করেছেন?
কারণ, আমি গত এক সপ্তাহ ধরে অভুক্ত। শুধু আমি অভুক্ত হলেও কথা ছিলো। সাথে আমার এতিম দু নাতিও না খেয়ে আছে। তাই চুরি করেছি। আমার আর কোনো উপায় ছিলোনা হুজুর।
বিচারক এবার পুরো দরবারঘরে চোখ বুলালেন। তারপর বললেন- কাল যেন নগর প্রধান, খাদ্যগুদাম প্রধান, শরিয়া প্রধান , পুলিশ প্রধান, সমাজ হিতৈষি সহ গন্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকেন। যথাসময়ে রায় দেয়া হবে।
বিচারকের নির্দেশ পেয়ে পরদিন সকালে সবাই হাজির। বিচারকও যথাসময়ে উপস্থিত হলেন। রায় ঘোষণা হলো-
চুরি করার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণীত হওয়ায় মোট ৫০টি চাবুক, ১০০ দিনার রৌপ্যমুদ্রা জরিমানা আর অনাদায়ে ১ বছরের কারাদন্ড ধার্য্য করা হলো। তবে বৃদ্ধা মহিলা কোন চলচাতুরীর আশ্রয় না নিয়ে অকপটে সত্য কথা বলার জন্য হাত কাটা মওকুফ করা হলো।
এবার বিচারক প্রহরীকে চাবুক আনার নির্দেশ দিয়ে নিজে বিচারকের চেয়ার থেকে নীচে নেমে এসে বৃদ্ধা মহিলার পাশে দাঁড়ালেন।
প্রহরীকে বললেন- যে নগরে একজন বুভুক্ষু মহিলা না খেয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় চুরি করতে বাধ্য হয়-সেখানে তো সবচেয়ে বড় অপরাধী সে দেশের খলীফা। আর খলীফার প্রতিনিধি হয়ে আমি বিচার করতে এসেছি।-তাঁর অধীনে আমি যেহেতু চাকরী করি। তাই ৫০ চাবুকের ২০টি আমার হাতে মারাই হোক। আর এটাই বিচারকের আদেশ। আদেশ যেন পালন করা হয়। বিচারক হিসাবে চাবুক মারতে আমার ওপর যেন বিন্দুমাত্র করুনা অথবা দয়া না দেখানো হয়।
বিচারক হাত বাড়িয়ে দিলেন।দুহাতে পরপর ২০টি চাবুক মারা হলো। চাবুকের আঘাতে হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। এরপর বিচারক পকেট থেকে একটা রুমাল বের করলেন।
একজন রুমালখানা দিয়ে বিচারকের হাতে বাঁধার জন্য এগিয়ে গেলে-বিচারক নিষেধ করেলেন।
এরপর, বিচারক বললেন- যে শহরে নগর প্রধান, খাদ্যগুদাম প্রধান সহ অন্যান্য সমাজ হিতৈষীরা একজন অভাবগ্রস্থ মহিলার ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করতে পারেনা। তারাও অপরাধী। তাই বাকি ৩০ টি চাবুক সমানভাবে তাদেরকেও মারা হোক।
এরপর বিচারক, নিজ পকেট থেকে বের করা রুমালের ওপর ৫০টি রোপ্য মুদ্রা রাখলেন। তারপর উপস্থিত সবাইকে বললেন- যে সমাজ একজন বয়স্ক মহিলাকে চোর বানায়, যে ঘরে এতিম শিশু উপবাস থাকে সে সমাজের সবাই অপরাধী। তাই এখানে উপস্থিত সবাইকে -১০ দিনার রোপ্য মুদ্রা জরিমানা করা হলো। এবার মোট ৫০০ দিনার রোপ্য মুদ্রা থেকে ১০০টি রোপ্যমুদ্রা জরিমানা বাবদ রেখে বাকি ৪০০ রোপ্যমুদ্রা থেকে ২০টি চুরি যাওয়া দোকানের মালিককে দেয়া হলো। আর বাকি ৩৮০ টি বৃদ্ধা মহিলাকে দিয়ে বিচারক বললেন- এগুলো হলো আপনার ভরণপোষনের জন্য। আর আগামি মাসে আপনি বাগদাদে খলিফা হারুন উর রশীদের দরবারে আসবেন, খলীফা আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
পরের মাসে বৃদ্ধা মহিলা খলীফার দরবারে গিয়ে দেখেন- খলীফার আসনে বসা লোকটিকে যেন কেমন চেনা চেনা মনে হয়। তারপর ভয়ে ভয়ে খলীফার আসনের দিকে এগিয়ে যান। একেবারে কাছে গিয়ে বুঝতে পারেন, লোকটি আর কেউ না, এতো সেদিনের সেই বিচারক।
খলীফা চেয়ার থেকে নেমে এসে বলেন-
আপনাকে আর আপনার এতিম দু নাতিকে উপোস রাখার জন্য সেদিন বিচারক হিসাবে ক্ষমা চেয়েছিলাম, আর আজ দরবারে ডেকে এনেছি- প্রজা অধিকার সমুন্নত করতে না পারা একজন অধম খলীফাকে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন বুড়ীমা।
এ মহান খলীফা মাত্র ৪৬ বছর বয়সে ৮০৯ সালে ইরানের খোরাশান প্রদেশের তোস শহরে ইন্তেকাল করেন।
|
![]() |
ভাষা সৈনিক মতিনের স্মরণে - সালাম তোমাকে
.
কানাডায় আসার সুবিধায় সারা পৃথিবীর মানুষের সাথে চলার সুযোগ হয়েছে। আমাদের এখানে বিরাট এক অংশের পাকিস্তানীরা আছে ফলে আমরা ওদের কালচার সম্বন্ধে সরাসরি অবগত যা বাংলাদেশ থেকে কখনয়ই বুঝতে পারি নাই।
.
মুল কোথায় আসি, পাকিস্তানী ও বাংলাদেশীদের মাঝে কালচারার এক বিরাট ফাক আছে। আমাদের সংস্কৃতি আর ওদের সংস্কৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন খালি ধর্ম ছাড়া। কোন পাকিস্তানী কোন বাংলাদেশী দেখলে উর্দু দিয়ে কথা শুরু করে, আমাদের বাঙ্গালিরাও সুন্দুর মতো উর্দু দিয়ে পাকিস্তানিদের সাথে কথা বলে। কোন এক দিন ঠিক তেমনি কোন এক পাকিস্তানী উর্দু দিয়ে কথা বলা শুরু করে আমার সাথে। তখন আমি ইংলিশ এ তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কিভাবে ধারনা করলা, আমি তোমার উর্দু জানি। আমি পাল্টা তাকে প্রশ্ন করলাম, তুমি কি বাংলা জানো? সে বলল না। চিৎকার করে তাকে বললাম, এই জন্যই আমরা তোমাদের থেকে আলাদা।
|
![]() |
মায়া এবং ছায়া শব্দ দুটি আবেগময়।
.
পৃথিবীতে প্রতিটি প্রানীর মাঝেই মায়া এবং ছায়া বিরাজমান। কম আর বেশি। দুটো বিশেষনের মাঝেই রয়েছে একটি ম্যাজিক। ছায়া'র ম্যাজিকটি হলো, সুর্যাস্ত থেকে চন্দ উদয় পর্যন্ত সে বিলীন থাকে। বাকী সময় কোন অবস্থাতেই তাকে পিছু ছাড়া করা যায় না। মায়া'র ম্যাজিকটি হলো, সে আপনাকে কখনোই বুঝতে দেবে না যে, আপনার মায়া কার প্রতি কতটুকু। সে তখনি আপনাকে কড়ায় গন্ডায় বুঝিয়ে দেবে, যখন আপনি বুঝেও আর কিছু করতে পারবেন না। কেউ মুখ ফিরিয়ে নেবার পরে ই ধরা দেবে, মায়া টা তার প্রতি কতখাানি ছিল। জড় বস্তুদের মাাঝে এ ঝামেলাটি নেই। তাদের মাঝে শুধু ছায়াা'র ম্যাজিকটিই বিদ্যমান। এ পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে ,জড় বস্তুর মতো তাদের ছায়াটুকুই শুধু ভূপৃষ্ঠে পড়ে। কোন ম্যাজিক, কোন ম্যাকানিজম তাদের মাঝে কাজ করে না।
|
![]() |
না বলা কথা - মুক্তিযোদ্ধা
.
হঠাৎ এক রাতে ধর্মপত্নীকে খুব ঘনিষ্ঠভাবে বললেন: গত ২৬ বছর তোমাকে একটা কথা কই নাই।
কী সে কথা? উৎকণ্ঠার সঙ্গে স্ত্রী মনে মনে বলেন, অতীত জীবনের প্রেম-ট্রেমের কথা নাকি! বিয়ের আগে কোনো সহপাঠী বা মামাতো-খালাতো কারও সঙ্গে কিছু হয়েছিল কি না, সে সন্দেহও জাগে।
.
সহধর্মিণীর চোখেমুখে উদ্বেগ লক্ষ করে কর্তা বলেন, ডরাইও না। কোনো খারাপ কথা না। সন্ধ্যায় সুপার মার্কেটে গিয়ে প্রচুর কেনাকাটা করে বেগম সাহেবা ক্লান্ত। আজকাল প্রায়ই মাথা ধরে। সিঙ্গাপুরে চেকআপে যাওয়া দরকার। বলেন, কী কথা, তাড়াতাড়ি কও। আমি ঘুমাব।
.
বাতি নিভিয়ে ডিমলাইটটা জ্বালিয়ে কর্তা অমোঘ স্বীকারোক্তির মতো বলেন, আসলে আমি একজন একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা। বিবর্ণ আলোয় তিনি কথাটি বললেন বটে, কিন্তু হঠাৎ তাঁর বুকটা কেঁপে ওঠে। বেগম সাহেবা বলেন, কও কী? তুমি না বলছিলা ওই বছরই তোমার খুব ধুমধাম কইরা খাতনা হয়?
.
কর্তা বলেন, তাতে কী? কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধার সনদ পাইতেছি।
একদিন সনদ নিয়ে বাড়ি ফেরেন কর্তা। তাঁর মনোবল একজন মুক্তিযোদ্ধার মতোই বেড়ে যায়। একটা বীর বীর ভাব! গিন্নিকে বলেন, ড্রয়িং রুমের শোকেস তো হাবিজাবি ক্রেস্ট-ট্রেস্ট দিয়া ভইরা ফেলাইছ। এই সার্টিফিকেট বাঁধাই কইরা রাখবা। কেউ ঘরে ঢুকলেই যাতে চোখে পড়ে। সনদের ৫০টি ফটোকপি করা আছে।
.
কয়েক দিন পর কানাডাপ্রবাসী এক শালা আসেন। তিনি দেয়ালে তাকিয়ে বলেন, দুলাভাই, মুক্তিযোদ্ধার এই সার্টিফিকেট পাইলেন কই? বোকার মতো কথা কইও না মিয়া—তিনি কথা শেষ না করতেই শ্যালকের মেজো আপা বলেন, তোর দুলাভাই তো বীর মুক্তিযোদ্ধা। শোনোস নাই?
.
রাতে খাওয়ার সময় শ্যালক আবার ওই প্রসঙ্গ পাড়েন। বলেন, আপনারা কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেন?
কর্তা বলেন, তোমার ওই সেক্টর-টেক্টরের কথা ছাইড়া দেও। আমাদের গ্রামে নদীর পাড়ে শ্মশানঘাটে পাকসেনাদের সাথে তুমুল যুদ্ধ হয়। আমরাই করি। রাইফেল নিয়া ক্রলিং করতে করতে আধা কিলোমিটার যাই। বুকটুক সব ছিলা গেছিল। বলতে বলতে শ্যালকের প্লেটে বড় পাবদা মাছটা তুলে দেন।
.
আবার বলেন, তবে কথা কি জানো তুতুল মিয়া, পাকসেনাদের ভয় করি নাই।
|
![]() |
.
সামাজিক অবক্ষয়
.
জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার বিকরি গ্রামের আশিক ম-ল ও সাথী আক্তারের মেয়ে উম্মে কুলসুম রিতু। তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় সে। সপরিবারে বসবাস করেন রাজধানীর খিলগাঁওয়ের পূর্ব নন্দিপাড়া ছোট বটতলার একটি ভাড়া বাড়িতে। রিতুর নানিও তাদের সঙ্গে থাকেন। স্থানীয় নন্দিপাড়ার ইস্ট পয়েন্ট এডুকেশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল রিতু। তার বাবা-মা দু’জনই গার্মেন্টকর্মী। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে রিতুকে অনবরত উত্ত্যক্ত করতো স্থানীয় বখাটে শিমুল চন্দ্র ম-ল। নিজের মান সম্মানের কথা চিন্তা করে নীরবে সহ্য করে আসছিল এ মেয়েটি। কিন্তু এ নীরবতাই যেন কাল হলো তার জীবনের। বখাটেরা শেষ পর্যন্ত রিতুর বাসায় এসেও উত্ত্যক্ত করতে থাকে। গত শনিবার দুপুরে রিতুর নানি ফাতেমা বেগম বাজার করতে বাইরে যান। এ সময় শিমুল চন্দ্র ও তার সহযোগীরা রিতুর ঘরে ঢুকে বিভিন্ন ধরনের অশালীন আচরণ করে। রিতু প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলে বখাটেরা বাসার আসবাবপত্র ভাঙচুর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে চলে যায়। কয়েক ঘণ্টা পর সন্ধ্যায় আবারো শিমুলের নেতৃত্বে আরো ৫ বখাটে রিতুর ঘরে প্রবেশ করে। এলাকার চিহ্নিত এ সন্ত্রাসীরা রিতুর সঙ্গে এবার যে ব্যবহার করে তা রীতিমতো বাড়াবাড়ি। রিতুর নানিও বাসায় প্রবেশ করে। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা হুমকি-ধামকি দিয়ে চলে যায়। নীরব প্রতিবাদী রিতু অপমান সহ্য করতে না পেরে নিজের কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেয়। নানি ও আশপাশের লোকজন দরজা খুলতে বললেও কোন সাড়া না দেয় না মেয়েটি। এক সময়ে নিজেই দরজা খুলে বের হয়। তখন তার মুখ দিয়ে বের হচ্ছে ফেনা। বিষের গন্ধ। ঘটনা বুঝতে আর কিছুই বাকি রইলো না স্বজনদের। রিতু ঢলে পড়লেন। তাকে নেয়া হয় স্থানীয় একটি হাসপাতালে। অবস্থা গুরুতর দেখে চিকিৎসকরা তাকে রেফার করলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তোলা হয় সিএনজি অটোরিকশায়। এ সময় সেখানে ছিলেন রিতুর এক শিক্ষক ও স্বজনরা। সেখানে স্বজনদের উদ্দেশ্যে রিতুর শেষ আকুতি ছিল, ‘আমি তো মরেই যাব, কিন্তু ওরা যেন ক্ষমা না পায়’। রিতুকে যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয় ততক্ষণে সব শেষ।
|
![]() |
সত্য বলার অনুশীলন কেন শুরু হচ্ছে না?
.
অপর জাতির দিকে সর্বক্ষণ না থাকিয়ে, যিনি নিজ জাতির ভালোকে ভালো বলেন এবং মন্দতে নিরপেক্ষভাবে সমালোচনা করেন, তিনিই নিজের জাতির যথার্থ মঙ্গলকামী বা হিতৈষী। এরকমের মানুষের সন্ধান আছে, কিন্তু তাঁদের সামনে মাইক্রোফোন নেই। তাঁদের বলার ইচ্ছে থাকলেও, এমন একটি সমাজ-ব্যবস্থায় বাঁধা পড়েছেন, যেখানে ইচ্ছে হলেও, সকল কিছু বলা হয়ে ওঠে না।
.
বহির্বিশ্ব, আমাকে অনেক জানার সুযোগ করে দিয়েছে। আর এই পাশ্চাত্য সমাজ যেটুকু শিক্ষা দিয়েছে, তার কাছে চিরঋণী থাকব। যে-রকম ঋণী থাকব, আমার সুজলা-সুফলা বঙ্গ তথা ভারতীয় দর্শন যা চোখের জ্যোতি হয়ে, জগতকে দেখার ও ভালো-মন্দ নির্ণয় করার শিক্ষা দিয়েছে। এ পর্যন্ত জগতের যত দেশের মানুষের সাথে মেলামেশা হয়েছে, কারো সাথে কম বা বেশী, সকলের কাছ থেকেই, কিছু না কিছু রসদ পেয়েছি। বর্তমান উন্নত সমাজের মানুষের সাথে যখন আমার বঙ্গ-দেশকে তুলনা করি, তাতে অসামঞ্জস্য কিছু ধরা পড়লেও, আমি বিশ্বাস করি না, আমরা কোনো কিছুর অযোগ্য। তবে সত্যকে স্বীকার করাই প্রকৃত শিক্ষা। আমাদের অনেক ভালো আছে, বহির্বিশ্বে প্রতিটি দেশেই ভালো-মন্দ বিদ্যমান। বলতে গেলে সকলেই অধিক ভালোর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতায়, যারা পিছিয়ে আছে, তাদের অবলহেলিত বা তৃতীয় বিশ্বের দেশ বলা হয়।
.
এখন প্রশ্ন হলো, যারা এগিয়ে আছে, কি করে এগিয়েছে? যদি আমরা তাদের এগিয়ে যাওয়ার পন্থাকে অনুসরণ করার চেষ্টা না করি, তবেই ধর্মান্ধতা আমাদের গ্রাস করে ফেলবে। ওদেরকে ঈশ্বর দিয়েছে, আমাদের দেয়নি। এই আলোচনাতে যাবো না। শুধু সংক্ষেপে বলব, এসব মূর্খদেরই মানায়। কর্মঠ জাতি, সঠিক চিন্তাভাবনাতে এগিয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো জাতির ব্যর্থ হওয়ার কারণ নেই। আর এসকলের পিছনে কোনো গুপ্তবিদ্যাও নেই। যদি কোনো জাতি, খনিজ সম্পদ পেয়ে হঠাৎ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করে, তা হয়ত খুব বেশী দিনের নয়। খনিজ সম্পদ ফুরিয়ে যেতে পারে। কিন্তু একটি জাতির শিক্ষা বা কর্ম-দক্ষতা, কোনদিনই ফুরিয়ে যাবে বা। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা আসতেই থাকবে, একমাত্র ভবিষ্যত জানে, আগামীতে আরও কত ভয়াবহরূপে আসতে পারে, তখন হয়ত শিক্ষাহীন জাতি যারা পরিশ্রম ব্যতীত সমৃদ্ধি লাভ করেছে, তাদের আর উপায় থাকবে না।
.
আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যেই যে প্রাণশক্তি রয়েছে, তার ব্যবহার কেবল উপযুক্ত সিস্টেম বা প্রণালীর অভাবেই ব্যাহত হয়। দেখুন, বাঙ্গালীরা যারা দেশের বাহিরে চলাচল করে, অধিকাংশ মানুষই আইন মেনে চলে। এবং অনেক বাঙ্গালী প্রবাসে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করেছে। তা সম্ভব হয়েছে ! সুতরাং কোনভাবেই বলা ঠিক হবে না যে আমরা এই উন্নত জাতির সমপর্যায়ে আসতে পারব না। আমি আশাবাদী, মেধার দিক থেকে আমাদের কমতি নেই।
.
সমস্যাটি কোথায়? তা ভেবে দেখা দরকার। নিজেদের সমালোচনা করলে প্রথম যে বিষয়টি চিহ্নিত করা যায়, এই ভারতবর্ষের মানুষের, আর কিছু তৈরী থাক না বা থাক, 'অজুহাত' নামের একটি অস্ত্র, সবসময় তৈরী থাকে। এ দক্ষতায়, কেউ কারো থেকে পিছিয়ে নেই। কখনও-ই আমার দোষ নয়, সর্বদাই অপরের দোষ। কি করে অপরের ঘাড়ে, দোষ চাপাতে হবে, সে প্রতিযোগিতা প্রতিদিনের দৃশ্য। এখান থেকেই আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। পাশ্চাত্যবাসীরা যত সহজে নিজের ভুল স্বীকার করে, তাদের সততার পরিচয় দেয়, এই শিক্ষার প্রচলন আমাদের মধ্যে খুব কম। তাদের-ও সরকার প্রধান ভুল করে, সে ভুলের জন্য অনুশোচনা করে, প্রয়োজন হলে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। দেশবাসী সহজেই, সেই বিষয়টিকে গ্রহণ করে।
.
সকল দোষ পলিটিশিয়ানদের ! এই রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত। সত্য বলার অনুশীলন কেন শুরু হচ্ছে না? প্রত্যেকেই যদি সত্যের দিকে ক্রমশঃ ধাবিত হই, এত দোষারোপের আবর্জনার স্তুপ কোথাও দেখা যাবে না। প্রগতি কিন্তু এই দোষারোপের চোরাবালিতে পথ হারায়। উন্নত সমাজে ততটা, পথভ্রষ্ট হয় না বলেই তারা উন্নত। কর্মের যে সিস্টেমের কথা আলোচনা হলো এখানে, তার প্রথম শর্তই সততা। আমি খুব দৃঢ়তার সাথে বলছি, সততা থেকে বাকী সিস্টেমগুলো, আপনি তৈরী হয়ে যাবে।
|
![]() |
শামিম ওসমান , তিনি পেরেছেন আর আপনারা হেরেছেন।
.
৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার দীর্ঘদেহী সুঠাম পুরুষ তিনি। পুরুষালী তার কণ্ঠস্বরও। কথা বলা ভীষণ রকম আকর্ষণীয়, বাচন ভঙ্গি চমৎকার। একেবারেই ক্লিয়ারকাট কথাবার্তা। লুতুপুতু ভাব নেই, ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যান নেই। যা বলবার সরাসরি বলে শেষ করেন। মুগ্ধ হবার মত। মিথ্যে বললেও বারবার শুনতে ইচ্ছে হয়। বক্তা ভালো হলে বক্তব্য মিথ্যে হলেও শুনতে আরাম বোধ হয়। উনি বেশ ভালো বক্তা। দারুণ বলতে পারেন। বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়, মন্ত্রমুগ্ধের মত।
.
আমাদের বিক্রমপুরের মেয়ে মুখরা মুন্নি সাহাকে একবার উনার পাশে দেখেছিলাম। মিস সাহাও কিন্তু শারীরিক উচ্চতার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অ্যাভারেজ মেয়েদের ছাড়িয়ে গিয়েছেন। বেশ একটা পুরুষালী ভাব তার মধ্যেও দেখতে পাই। হ্যান্ডসাম মেয়ে, ঈর্ষা হয়। দুজনকে মানিয়েছিলও বেশ। মুন্নিকে বিশেষ পাত্তা দিতে দেখিনি উনাকে। অল্প কিছু জবাব দিয়ে “আচ্ছা আসি, আমায় ডাকছে ওরা” – এই বলে কেটে পড়েছিলেন আমার সেই ব্যাক্তিত্ববান পুরুষটি। মুন্নি সাহার আহত দৃষ্টি দেখে করুণা হয়েছিলো। হাজার হোক দেশী মেয়ে বলে কথা। আর বনেদী পরিবারের সেই লোকের প্রতি আকর্ষণ বেড়েছে বহু গুণ।
.
পরিবারের কথায় আসি। দাদার নাম খান সাহেব ওসমান আলী। বাড়ি বায়তুল আমান। ঐতিহাসিক বাড়ি, ঐতিহ্য জড়িত, ইতিহাস জড়িত। এ ভবনটিতেই ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী, একসময়ের নন্দিত, আজকের ঘৃণ্য ও নিন্দিত দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। মায়ের নাম নাগিনা। নাগিনা জোহা। বাবার নাম একেএম শামছুজ্জোহা। আবুল হাশিম সাহেব উনার মামা। এক সময়ের মিষ্টি মেয়ে খ্যাত সারেং বৌ ‘কবরী’ উনার চাচী হন। কবরীর ‘ইট্টুস খানি দ্যাখো, একখান কথা রাখো, ভালোবাইসা আমায় তুমি বৌ বইলা ডাকো’ আজো কানে লেগে আছে। মিষ্টি মেয়েও পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছেন। আজকাল উনার বাজখাই গলা শুনলে ত্রাহী মধুসূদন অবস্থা হয় আমার। অভিনয় জগতের প্রতি চরম এক ঘৃণা কাজ করে।
.
যাইহোক, আমার সাবজেক্টে ফিরে যাই। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে প্রবাদ পুরুষ তিনি। মাত্র একবার নির্বাচিত হয়েছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ থেকে ১৯৯৬ সালে। কিন্তু রাজনীতিতে তার প্রভাব ব্যাপক। উনি নিজের মুখে বিভিন্ন প্রোগ্রামে সরাসরি বলেছেন, নেত্রীর কথা ছাড়া এক চুলও তিনি নড়েন না। যা কিছু ঘটছে সবই নেত্রী, মানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে হচ্ছে। খুন খারাবি, গুম, লাশের সারি। এই সব কিছুই। আমি বলিনি, উনি নিজেই বলেছেন। 'তৃতীয় মাত্রা' উনার সবচেয়ে প্রিয় অনুষ্ঠান। জিল্লুর রহমানকে আমি ওরকম নরম সুরে কখনো কথা বলতে দেখিনি কোনও গেস্টের বিপরীতে। যেটা উনার বিপরীতে বলেছিলেন। প্রশ্নগুলো খুব কোমলভাবে করেছিলেন জিল্লুর।
.
একবার এক পত্রিকায় এসেছিলো, “ ফাদার’স অফ দ্যা গডফাদার হ্যাজ কাম ব্যাক”। তাহলে দেখুন, কতটা প্রভাবশালী উনি! নেত্রীকে উনি 'আপা' বলে সম্বোধন করেন। আপার নির্দেশে উনি সবকিছু করেন, এটি জনসমক্ষে বললেও আপা কিন্তু প্রতিবাদ করেননি। পরম মমতায় মাথায় হাত বুলিয়ে বুকে টেনে নিয়েছেন। ছোট ভাই বলে কথা। এক রহস্যময় সম্পর্ক রয়েছে ‘আপা’র সাথে উনার। আপার নির্দেশ পেলে উনি কাউকেই কেয়ার করেননা। উনার এই ড্যাম কেয়ার অ্যাটিচিউড আমায় বেশ টানে। ইদানিং মনে হচ্ছে বাংলাদেশে যদি কোনও পুরুষ জীবিত থাকে তবে তিনিই আছেন। বাকি সব ভেড়ার পাল। তাদের জন্য এই বেদেনীর ঝুড়ি থেকে কয়েক গোছা রেশমি চুড়ি বাড়িয়ে দিলাম। পরে নিন। লজ্জা পেলে ঘরের কোনে মুখটি লুকান। আর কি করার আছে আপনাদের? হাহ!
.
একসময়কার বাণিজ্য সমৃদ্ধ ‘প্রাচ্যের ড্যান্ডি’ খ্যাত আজকের নারায়ণগঞ্জকে উনি বদলে দিয়েছেন আমূল। কায়েম করেছেন একছত্র রাজত্ব, নিজ গুণে। কেউ টিকিটিও ছুঁতে পারেনি আমার হিরোর। ইশ! ভাবতেই প্রেম জেগে ওঠে। টিভি নাটকে, সিনেমায় এরকম ড্যাশিং পুরুষ আমার চিরদিনের পছন্দ ছিলো। সেদিন দেখলাম হাতঘড়িটি রোলেক্স। যদিও উনার মার্কা 'দেয়াল ঘড়ি'। মার্কায় কি আসে যায়? উনি এমনিতেই মার্কা মারা। সবাই চেনেন, সবাই জানেন। শুধু নাম নিতে ভয় পান। নিলেও লুকিয়ে ছুপিয়ে। আড়ালে আবডালে।
.
সফল ব্যবসায়ী তিনি। বাংলাদেশের সর্বপ্রথম এসি বাস চালু করেছিলেন। নিটোল টাটার সাথে। ইন্ডিয়ার নিটোল টাটা। উনার সুখি পরিবার, এক ছেলে এক মেয়ে। আমি ভাঙ্গন ধরাতে চাইনা। উনার দৃঢ় ব্যাক্তিত্বের প্রসংশা না করে পারছিনা কেবল। আছেন কেউ উনার সামনে দাঁড়িয়ে বলবার মত, “খুনি তুই, এবার থাম। সাহস থাকলে আপার আঁচল ছেড়ে সামনে আয় যুদ্ধ করতে”। নেই ওরকম পুরুষ এই দেশে। ঐযে বলেছি, মেকুর সবগুলো! আহ, কি দোর্দণ্ড প্রতাপ নিয়েই উনি রাজত্ব করে চলেছেন, প্রকাশ্যে হম্বিতম্বি করে যাচ্ছেন। সকল প্রকার জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে তিনি। কেউ কিছুই বলতে পারছেনা ভয়ে। জাস্ট লাভ ইট!
If you are the site owner, please renew your premium subscription or contact support.